দুই সপ্তাহে ভোজ্যতেলের দাম বেড়েছে মণে ২৫০ টাকা
ভোগ্যপণ্যের বাজারে আরো একদফা বেড়েছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ভোজ্যতেলের দাম। ভোগ্যপণ্যের পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে গত দুই সপ্তাহে পণ্যটির দাম বেড়েছে মণে (৪০ দশমিক ৯০ লিটার) ২৫০ টাকা। আন্তর্জাতিক বাজারে বুকিং বৃদ্ধি পাওয়ায় দেশীয় বাজারে ভোজ্যতেলের দামে প্রভাব পড়েছে বলে মন্তব্য করেছেন আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীরা।
ভোগ্যপণ্যের বৃহৎ পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জের দোকানগুলোতে গতকাল রোববার প্রতিমণ পাম অয়েল বিক্রি হয়েছে ৫ হাজার ১০০ টাকা দরে। যা দুই সপ্তাহ আগে মাত্র ৪ হাজার ৮৫০ টাকা দামে বিক্রি হয়েছে। সেই হিসেবে, দুই সপ্তাহের ব্যবধানে মণে ২৫০ টাকা বেড়েছে প্রতিমণ পাম অয়েলের দাম।
বর্তমানে খাতুনগঞ্জে টিকে গ্রুপের বে ফিশিং পাম অয়েল মণপ্রতি ৫১০০ টাকা, এস আলম ৫০৯০ টাকা এবং সিটি গ্রুপ, মেঘনা গ্রুপ ও বসুন্ধরা গ্রুপের পাম অয়েল ৫০৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
পাম অয়েলের পাশাপাশি মণে প্রায় ২০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে পাম সুপার অয়েলের দামও। দুই সপ্তাহ আগে বাজারে প্রতিমণ পাম সুপার অয়েল বিক্রি হয়েছে ৫ হাজার ১০০ টাকা দরে। বর্তমানে একই পাম সুপার অয়েল ৫ হাজার ৩০০ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে।
পাম সুপারের মধ্যে বর্তমানে টিকে গ্রুপের প্রতিমণ বে ফিশিং ৫৩০০ টাকা, এস আলম ৫২৯০ টাকা এবং অন্যান্য গ্রুপের (মেঘনা, সিটি ও বসুন্ধরা) পাম সুপার ৫২৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে বলে জানা গেছে।
এদিকে বর্তমানে খাতুনগঞ্জে প্রতিমণ সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে ৫ হাজার ৫৭০ টাকা দামে। যা গত দুই সপ্তাহ আগে ৫ হাজার ৪৫০ টাকা দামে বিক্রি হয়েছে। সেই হিসেবে, গত দুই সপ্তাহে সয়াবিনের দামও মণে ১২০ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে।
দাম বৃদ্ধির কারণ সম্পর্কে পাইকারি ভোজ্যতেল আমদানিকারকরা জানিয়েছেন, গত এক মাসে আর্ন্তজাতিক বাজারে ভোজ্যতেলের দাম আরো এক দফা বেড়েছে। যার ফলে দেশীয় বাজারেও পণ্যটির দামে প্রভাব পড়েছে। তবে পাইকারি ব্যবসায়ীদের দাবি, আন্তর্জাতিক বাজারে যেই দামে ভোজ্যতেল বিক্রি হচ্ছে তার চেয়ে অনেক বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে দেশীয় বাজারে।
ভোজ্যতেল আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান আরএম ট্রেডিংয়ের স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ আলমগীর পারভেজ বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে বিশেষ করে মালেশিয়াতে প্রতিটন পাম অয়েল বিক্রি হচ্ছে ৫২০০ রিঙ্গিতে। যা গত দুই-তিন সপ্তাহ আগে মাত্র ৪৮০০ রিঙ্গিতে বিক্রি হয়েছে।
একইভাবে আন্তর্জাতিক বাজারে বিশেষ করে আমেরিকাতে দুই সপ্তাহ আগে প্রতিটন সয়াবিন বিক্রি হয়েছে ১৩২০ ডলারে। যা বর্তমানে ১৪০০ ডলারে বিক্রি হচ্ছে। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধির কারণে দেশীয় বাজারে গত দুই সপ্তাহে দেশিয় বাজারে ভোজ্যতেলের দাম বেড়েছে বলে জানান তিনি।
তবে খাতুনগঞ্জের ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী মেসার্স আজমির ট্রেডিংয়ের স্বত্বাধিকারী লেয়াকত আলী বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলের দাম বেড়েছে সত্য। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে যেই দামে ভোজ্যতেল বিক্রি হচ্ছে তার চেয়ে অনেক বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে দেশীয় বাজারে। যেটা খুবই অস্বাভাবিক।
এই ব্যবসায়ী বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে বর্তমানে ১৪৪০ ডলারে সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে। ৮৫ টাকা ডলার মূল্য এবং প্রতিমণে ১৫ হাজার টাকা আমদানি ও রিফাইনড খরচ যোগ করে প্রতিটন সয়াবিনের দাম দাঁড়ায় ১ লাখ ৩৪ হাজার টাকা। সেই হিসেবে প্রতিমণ সয়াবিনের ক্রয়মূল্য হয় ৫০০০ টাকা। কিন্তু বর্তমানে প্রতিমণ সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে ৫৫৭০ টাকা দামে। অর্থাৎ বুকিং দরের চেয়ে ৫৭০ টাকা বেশি দামে প্রতিমণ সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে।
একইভাবে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিটন পাম অয়েল বিক্রি হচ্ছে ৫২০০ রিঙ্গিতে। ২২ টাকা রিঙ্গিত মূল্য এবং প্রতিটনে ১০ হাজার টাকা খরচ যোগ করে প্রতিটন পাম অয়েলের দাম দাঁড়ায় ১ লাখ ২৪ হাজার ৪০০ টাকা। সেই হিসেবে প্রতিমণ পাম অয়েলের ক্রয়মূল্য হয় ৪ হাজার ৬৪২ টাকা। কিন্তু বর্তমানে প্রতিমণ পাম অয়েল বিক্রি হচ্ছে ৫ হাজার ১০০ টাকা দামে। অর্থাৎ বুকিং দরের চেয়ে ৪৫৭ টাকা বেশি দামে প্রতিমণ পাম অয়েল বিক্রি হচ্ছে।
দেশের ভোজ্যতেল আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে অন্যতম টিকে গ্রুপ। গ্রুপটির ডিরেক্টর অপারেশন তারিক আহমেদ বলেন, ভোজ্যতেলসহ নিত্য প্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের দাম নির্ভর করে আমদানিকৃত পণ্যের বুকিং দর, চাহিদা ও সরবরাহের উপর। গত কয়েক মাস ধরে ভোগ্যপণ্য আমদানিতে ফ্রেইট চার্জও বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া গত একমাসে আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলের দাম আরো এক দফা বেড়েছে। ফলে দেশীয় বাজারে ভোজ্যতেলের দাম আরো এক দফা বৃদ্ধি পেয়েছে।