স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে বাড়ছে করোনার সংক্রমণ, সেবা বিঘ্ন হওয়ার শঙ্কা
ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের প্রভাবে কোভিডের থার্ড ওয়েভ চলাকালীন এ সময়ে স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের হার আবারো বাড়তে শুরু করেছে।
হেলথওয়ার্কাদের আক্রান্তের হার বাড়ার ফলে কোভিড ও নন-কোভিড রোগীদের ট্রিটমেন্ট, কোভিড টেস্ট, ভ্যাকসিনেশনসহ সব ধরণের স্বাস্থ্যসেবা বিঘ্ন হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
সোমবার (২৪ জানুয়ারি) ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ভাইরোলজি ল্যাবে কোভিড টেস্ট করে ৩৪ জন চিকিৎসক পজিটিভ হয়েছেন। প্রতিদিনই বাড়ছে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের আক্রান্তের সংখ্যা।
শুধু ঢাকা মেডিকেল নয়, অন্যান্য হাসপাতালেও চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীদের আক্রান্ত হওয়ার চিত্র প্রায় একই।
দেশে এ পর্যন্ত করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ৯ হাজার ৪৯৪ জন স্বাস্থ্যকর্মী। অধিকাংশ চিকিৎসকের পরিবারের সদস্যদের করোনা শনাক্তের রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে। চিকিৎসকের অধিকাংশই দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হচ্ছেন।
চিকিৎসকেরা জানান, করোনা রোগী বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে স্বাস্থ্যকর্মীদের আক্রান্ত হওয়ার হারও বাড়ছে। প্রতিদিনই বিভিন্ন বিভাগে একাধিক চিকিৎসক আক্রান্ত হচ্ছেন। উপসর্গ আছে এমন স্বাস্থ্যকর্র্মীরা টেস্ট করলে করোনা পজিটিভ রিপোর্ট পাচ্ছেন। এমনকি তাদের পরিবারের সদস্যরাও আক্রান্ত হচ্ছেন।
আক্রান্ত হলে চিকিৎসক, নার্সরা রোগীদের সেবা দিতে পারবেন না। একসঙ্গে অনেক বেশি চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীরা আক্রান্ত হলে সেবা ব্যবস্থাপনা ঝুঁকিতে পড়তে পারে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের ভাইরোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডাঃ নুসরাত সুলতানা দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "সারাদেশেই কোভিড রোগী বাড়ছে। পজিটিভ পেশেন্টের সংস্পর্শে আসা, পাবলিক ট্রান্সপোর্টে চলাচল করা, বাড়িতে আইসোলেশনের ব্যবস্থা না থাকায় অনেক চিকিৎসক কোভিড আক্রান্ত হচ্ছে।"
"কোভিড পজিটিভ হলে স্বাস্থ্যকর্মীরা ১০ দিনের আইসোলেশনে থাকছে, এভাবে সংক্রমিত হেলথওয়ার্কারের সংখ্যা বাড়তে থাকলে কোভিড ছাড়া অন্যান্য ক্রিটিক্যাল রোগে আক্রান্ত রোগীদেরও সেবা ব্যহত হবে," যোগ করেন তিনি।
ওমিক্রনকে হালকাভাবে না দেখে সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মানার পরামর্শ দেন তিনি।
শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট ভ্যাকসিন সেন্টারের কো-অর্ডিনেট ও ৭ জন নার্স বর্তমানে কোভিড পজিটিভ হয়ে আইসোলেশনে আছে। এতে করে ভ্যাকসিন সেন্টারের কার্যক্রম চালিয়ে নেয়া নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কোভিড-১৯ ল্যাবের ডাক্তার, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও অন্যান্য স্টাফসহ ৭ জন কোভিড পজিটিভ হয়ে আইসোলেশনে আছে। দেশের অধিকাংশ কোভিড ল্যাবে একই অবস্থা।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোঃ নাজমুল হক টিবিএসকে বলেন, "আমাদের হাসপাতালের অনেক স্টাফ কোভিড পজিটিভ। এর ফলে অন্য স্টাফদের ওপর কাজের চাপ অনেক বাড়ছে।
বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য বলছে, ২০২০ সালের মার্চ থেকে গত রোববার পর্যন্ত ৯ হাজার ৪৯৪ জন স্বাস্থ্যকর্মী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে ৩ হাজার ১৩৬ জন চিকিৎসক, ২ হাজার ৩০৪ জন নার্স এবং ৪ হাজার ৫৪ জন স্টাফ রয়েছেন।
এর আগে ২০২০ সালে কোভিডের প্রথম ওয়েভে স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার অনেক বেড়ে গিয়েছিলো।
তবে সেকেন্ড ওয়েভে অধিকাংশ স্বাস্থ্যকর্মী ভ্যাকসিন নেয়ায় সংক্রমণ ও মৃত্যু কমে। ভ্যাকসিন নেয়ার পরও অমিক্রন ভেরিয়েন্টে আক্রান্ত হয় বলে এবারের ওয়েভে স্বাস্থ্যকর্মীদের কোভিড পজিটিভ হওয়ার হার আবারও বাড়ছে।