২ হাজার বছর ধরে জমা হিমবাহ গলতে লেগেছে মাত্র ২৫ বছর!
জলবায়ুর ক্রমাগত পরিবর্তনের ফলে বিশ্বের উচ্চতম পর্বতের সর্বোচ্চ হিমবাহটি (গ্লেসিয়ার) স্বাভাবিকের চেয়েও দ্রুত গলে যাচ্ছে। এভারেস্টের দক্ষিণ কোলে ২ হাজার বছর ধরে যে হিমবাহ তৈরি হয়েছে তা মাত্র ২৫ বছরের মধ্যেই গলে গেছে বলে জানা গেছে এক গবেষণায়।
যে সময়ে এই হিমবাহ তৈরি হয়েছে, তার চেয়েও ৮০ গুণ দ্রুত সময়ে তা গলে যাচ্ছে।
গবেষণার ফলাফলগুলো মূলত একটি মানব-প্রভাবিত জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়াবহতাই তুলে ধরে। এভারেস্টের হিমবাহ দ্রুত গলে যাওয়া জলবায়ুতে আরও খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে। ঘন ঘন তুষারপাত থেকে শুরু করে ১.৬ বিলিয়ন মানুষের পানির উৎসগুলো শুকিয়ে যাওয়াসহ আরও ভয়াবহ প্রভাব পড়তে পারে।
![](https://tbsnews.net/bangla/sites/default/files/styles/infograph/public/images/2022/02/04/_106107108_gettyimages-513452022.jpg)
নেচার পোর্টফোলিও জার্নাল ক্লাইমেট অ্যান্ড অ্যাটমোস্ফেরিক সায়েন্সে প্রকাশিত প্রতিবেদনে গবেষকেরা যুক্তি দিয়েছেন, হিমবাহ গলে যাওয়ার বিষয়টি ব্যাপকভাবে অধ্যয়ন করা হলেও, গ্রহের সর্বোচ্চ বিন্দুতে হিমবাহ গলে যাওয়া নিয়ে তেমন আলোচনা হয় নি।
মেইন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছয়জনসহ বিজ্ঞানী এবং পর্বতারোহীদের একটি দল ২০১৯ সালে এভারেস্টের হিমবাহ পরিদর্শন করে।
১০ মিটার দীর্ঘ (প্রায় ৩২ ফুট) বরফের কোর থেকে নমুনা সংগ্রহ করেছিল তারা। ডেটা সংগ্রহ করতে বিশ্বের দুটি সর্বোচ্চ স্বয়ংক্রিয় আবহাওয়া স্টেশন ইনস্টল করে এই দল। তাদের অনুসন্ধানের মূল লক্ষ্য ছিল, পৃথিবীর সর্বোচ্চ অবস্থানে থাকা হিমবাহগুলো কি আদৌ মানব-প্রভাবিত জলবায়ু পরিবর্তন দ্বারা প্রভাবিত, সেটি বিশ্লেষণ করা।
অভিযানের নেতা এবং মেইন বিশ্ববিদ্যালয়ের জলবায়ু পরিবর্তন ইনস্টিটিউটের পরিচালক পল মায়েস্কি জানান, ১৯৯০ এর দশক থেকে শুরু করে মানব-সৃষ্ট কারণেই এসব হিমবাহ গলে যাওয়ার হার বাড়ছে।
![](https://tbsnews.net/bangla/sites/default/files/styles/infograph/public/images/2022/02/04/climate-change-520x400.jpg)
গবেষকরা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে যে কেবল হিমবাহ গলে যাচ্ছে তা নয়; বরং এর ফলে তুষার আচ্ছাদিত পৃষ্ঠ যে ভারসাম্য রক্ষা করে সেটিও নষ্ট হচ্ছে।
গবেষণায় দেখা গেছে , একবার হিমবাহের বরফ উন্মুক্ত হয়ে গেলে, এটি শতাব্দীর এক চতুর্থাংশ সময়ে প্রায় ৫৫ মিটার (১৮০ ফুট) বরফ হারিয়েছে।
গবেষকরা লক্ষ্য করেন, হিমবাহটি তুষারপ্যাক থেকে বরফে রূপান্তরিত হয়েছে। ১৯৫০ এর দশকের দিকে এটি ঘটতে পারে বলে তাদের ধারণা। কিন্তু বরফের আসল ক্ষতি হয়েছে ১৯৯০ এর দশক থেকে।
![](https://tbsnews.net/bangla/sites/default/files/styles/very_big_1/public/images/2022/02/04/mount_everest_as_seen_from_drukair2_plw_edit-1_0.jpg)
বরফের এই রূপান্তরের ফলে, হিমবাহটি সূর্য থেকে তাপ বিকিরণ করতে পারে না, ফলে তা আরও দ্রুত গলে যায়।
মডেল সিমুলেশনের মাধ্যমে দেখা যায়, সৌর বিকিরণের ফলে এই অঞ্চলে বরফ গলে যাওয়া বা বাষ্পীভবনের হার ২০ শতাংশ বেশি। তুষারের আচ্ছাদন বরফে রূপান্তরিত হলেই এটি হয়ে থাকে। এছাড়া, আপেক্ষিক আর্দ্রতার মাত্রা হ্রাস এবং শক্তিশালী বাতাসর কারণেও এটি হয়।
যারা হিমবাহের পানির উপর নির্ভরশীল তাদের উপর বিরূপ প্রভাব পড়া ছাড়াও, হিমবাহ গলনের বর্তমান হার মাউন্ট এভারেস্টে অভিযানকে আরও চ্যালেঞ্জিং করে তুলবে।
![](https://tbsnews.net/bangla/sites/default/files/styles/infograph/public/images/2022/02/04/18430226_101.jpg)
আগামী কয়েক দশকে তুষার এবং বরফের আবরণ আরও পাতলা হবে বলে জানান তারা।
২০১৯ এর অভিযান তিনটি গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড গড়েছে। সর্বোচ্চ ৮ হাজার ২০ মিটার উচ্চতা থেকে বরফের কোর আহরণ, ৮ হাজার ৪৪০ মিটার উচ্চতায় মাইক্রোপ্লাস্টিক পাওয়া (সম্ভবত মানুষের পোশাক বা তাঁবু থেকে পাওয়া গেছে এটি) এবং সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৮ হাজার ৪৩০ মিটার উচ্চতায় একটি আবহাওয়া স্টেশন স্থাপনের মাধ্যমে রেকর্ড গড়েছে তারা।
সূত্র- সিএনএন