মনপুরার মাধ্যমেই মানুষ আমাকে চিনেছে: চঞ্চল চৌধুরী
আজ থেকে ১৩ বছর আগে মুক্তি পেয়েছিল গিয়াসউদ্দিন সেলিম পরিচালিত 'মনপুরা' ছবিটি। ছবিটির প্রধান দুটি চরিত্রে অভিনয় করেছেন চঞ্চল চৌধুরী ও ফারহানা মিলি। মনপুরাকে স্মরণ করে গতকাল ফেসবুকে একটা পোষ্ট দিয়েছেন চঞ্চল চৌধুরী। সেই পোস্টের সূত্র ধরে কথা হয় জনপ্রিয় এই অভিনেতার সঙ্গে।
প্রশ্ন: আপনার অভিনয় করা সবচেয়ে জনপ্রিয় সিনেমা 'মনপুরা' মুক্তি পাওয়ার ১৩ বছর হলো। কেমন লাগছে?
চঞ্চল চৌধুরী: এটা আসলে একটা অর্জন। সময় তো চলে যায়। এটা তো আর বসে থাকে না। এভাবেই একসময় ১২ বছর হয়েছে। ১৩ বছর হলো। ২৫ বছর হবে। আরও বাড়বে। কথা হলো, কাজটা মনে রাখার মতো কি না। এত বছর পরও মানুষ স্মরণ করছে কি না। গতবছর সিনেমাটা ১২ বছর পার করে। কিন্তু কোভিডের কারণে আমরা তেমন কিছু করতে পারিনি। কিন্তু গতকাল গিয়াস উদ্দিন সেলিম ভাই তার অফিসে ডাকেন। মনপুরার সঙ্গে যারা যুক্ত ছিলাম অনেকেই কাল এক হয়েছি। উদযাপন করেছি। ভালো তো অবশ্যই লাগছে।
প্রশ্ন: যখন মনপুরার শুটিং চলছে, তখন কি একবারও ভেবেছিলেন ছবিটি এত মানুষ দেখবে বা পছন্দ করবে?
চঞ্চল চৌধুরী: নাহ। আমাদের কারোরই ধারণা ছিল না। দর্শক কীভাবে নেবে, দেখবে কি দেখবে না সেটা আসলে শুটিংয়ের সময় বলা যায় না। আমাদের জন্য আনন্দের বিষয় হলো, দর্শক (ছবিটি) খুব ভালোভাবে নিয়েছেন। গতকাল যখন আমি 'মনপুরা' নিয়ে ফেসবুকে পোষ্ট দিলাম, তখন দেখলাম প্রচুর মানুষ এটা নিয়ে কথা বলছেন। উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছেন। অনেকেই লিখেছেন, এ সিনেমার জন্য তারা প্রথমবারের মতো সিনেমা হলে গিয়েছেন। আবার অনেকেই বহুদিন পরে সিনেমা দেখতে গিয়েছেন। তখন আসলে সিনেমার দেখার পরিবেশ ছিল না। তারা জানিয়েছেন, মনপুরার গান এখনও শোনেন, মনপুরাকে ভালোবাসেন।
প্রশ্ন: সিনেমাটির পেছনে তো আপনারা অনেক পরিশ্রমও করেছেন।
চঞ্চল চৌধুরী: আমি একা না, সবাই খুব পরিশ্রম করেছেন। বলতে গেলে ওই সময় একটা আনকোরা টিম কাজ করেছে। মনপুরা ছিল গিয়াস উদ্দিন সেলিম ভাইয়ের প্রথম সিনেমা। সিনেম্যাটোগ্রাফির কামরুল হাসান খসরু ভাইয়ের প্রথম, ফারহানা মিলির প্রথম। আমিও এর আগে শুধু 'রূপকথার গল্প' নামে একটা সিনেমায় কাজ করেছিলাম। তবে সবার মধ্যে নিজের সেরাটা দিয়ে কাজ করার ইচ্ছা ছিল। সে ইচ্ছারই সফল পরিণতি হয়েছে মনপুরায়।
প্রশ্ন: সিনেমা ব্যবসাসফল হলে সাধারণত ওই সিনেমার প্রধান অভিনয়শিল্পীদের নিয়ে পরপর আরও কয়েকটি সিনেমা নির্মিত হয়। জুটি হিসেবেই তারা দাঁড়িয়ে যান। আপনার আর ফারহানা মিলির বেলায় সেটা হয়নি।
চঞ্চল চৌধুরী: হয়তো হয়। কিন্তু আমাদের বেলায় সেটা হয়নি। কারণ, মনপুরার পর মিলি অনেকদিন কাজ করেনি। সম্ভবত আর কাজ করবে কি করবে না সেই ভাবনায় ছিল। এরপর বিয়ে করে ঘর সংসার শুরু করে। কিছুদিন হলো আবার কাজ শুরু করেছে। আর আমার ক্ষেত্রে যেটা হয়, প্রত্যেক বছর দু-তিনটা করে সিনেমা করা হয় না। বরং উল্টো হয়। আমি একটি কাজ করি, তারপর এক দুই বছর অপেক্ষা করি। দেখেশুনে তারপর নতুন সিনেমার শুটিং শুরু করি। একবার করে ফেলেছি সেরকম চরিত্র আবার আসলে তো করব না। যেমন, মনপুরার মতো চরিত্র তো আর করব না। হয়তো রোমান্টিক কোনো চরিত্রই আর করা হবে না।
প্রশ্ন: কিন্তু মনপুরা সিনেমার সাফল্যের পর আপনার কাছে নিশ্চয়ই প্রচুর সিনেমার অফার এসেছিল?
চঞ্চল চৌধুরী: প্রচুর। সেটা আসলে সংখ্যায় বলতে পারব না। গত ১০ বছরে বাংলাদেশ ও কলকাতার কমপক্ষে ২০০ সিনেমার স্ক্রিপ্ট আমাকে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু গল্প, চরিত্র বা তাদের কাজের ধরন ভালো লাগেনি। যেগুলো ভালো লেগেছে সেগুলো তো করেছি।
প্রশ্ন: মনপুরা সিনেমা আপনার জীবনে কী কী পরিবর্তন নিয়ে এসেছিল?
চঞ্চল চৌধুরী: সিনেমাটি এক বছর দেশের বিভিন্ন সিনেমা হলে চলেছে। তার ফলে অনেক পরিবর্তন এসেছে। আমাকে সারাদেশের মানুষ চিনেছে এই সিনেমার মাধ্যমে। সিনেমাটির কারণে আমি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছি। আমার আরও কাজের সুযোগ তৈরি হয়েছে। অবস্থান শক্ত হয়েছে। এসব তো আমার জন্য অনেক বড় পাওয়া।