এক ছবির এত পুরস্কার কেন?
বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের সবচেয়ে সম্মানজনক আসর জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। মঙ্গলবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় ২০২০ সালের সেরাদের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে জানিয়েছে, এবার ২৭ ক্যাটাগরিতে ৩১টি পুরস্কার দেওয়া হবে।
এর মধ্যে আজীবন সম্মাননা পাচ্ছেন অভিনেত্রী আনোয়ারা বেগম ও অভিনেতা রাইসুল ইসলাম আসাদ।
অন্যদিকে গুণী নির্মাতা ও অভিনেতা গাজী রাকায়েত পরিচালিত 'গোর' সর্বোচ্চ ১১টি পুরস্কার জিতে নিয়েছে। ৮টি পুরস্কার নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে চয়নিকা চৌধুরীর পরিচালিত 'বিশ্বসুন্দরী।
এক ছবির এত পুরস্কার নিয়ে আলোচনা হচ্ছে সামাজিক মাধ্যমে। তাহলে কি আর কোন ছবি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রাপ্তির মানদণ্ডে পৌছায়নি?
তবে এটাও ঠিক, ২০২০ সালের শুরুতে পুরো পৃথিবীর মতো এদেশে আসে করোনার ঢেউ। ফলে অন্য সবকিছুর মতো বন্ধ থাকে সিনেমা হল। পেছাতে হয় সিনেমা মুক্তির তারিখ। তাই ২০২০ সালে মুক্তি পায় মাত্র ২৫টি সিনেমা। এরমধ্যে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের জন্য জমা দেয়া হয়েছিল ১৪টি। পূর্ণদৈর্ঘ্য এ সিনেমাগুলোর মধ্যে আছে- বীর, শাহেনশাহ, ঊনপঞ্চাশ বাতাস, গোর, বিশ্বসুন্দরী, একজন মহান নেতা, হলুদ বনি, গণ্ডি, রূপসা নদীর বাঁকে, আমার মা, চল যাই, জয়নগরের জমিদার, সুবর্ণরেখা ও হৃদয় জুড়ে।
তবে ১৪টি সিনেমা জমা পড়লেও এক 'গোর' সিনেমাই জয় করেছে ১১ টি পুরস্কার। আর বিশ্বসুন্দরী জয় করেছে ৮টি পুরস্কার।
সিনেমা মুক্তি কম হওয়ার কারণেই এমনটা ঘটেছে এমন নয়, বিগত পাঁচ বছরের পুরস্কার পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ২০১৯ সালে মাসুদ পথিক পরিচালিত 'মায়া দ্য লস্ট মাদার' সিনেমা সর্বোচ্চ আটটি ক্যাটাগরিতে পুরস্কার পেয়েছিল। ২০১৮ সালে সাইফুল ইসলাম মান্নু পরিচালিত 'পুত্র' ছবি পেয়েছিল ১১টি পুরস্কার। ২০১৭ সালে বদরুল আনাম সৌদ পরিচালিত 'গহীন বালুচর' পেয়েছিল সাতটি পুরস্কার। ২০১৬ সালে অমিতাভ রেজা পরিচালিত 'আয়নাবাজি' পেয়েছিল সাতটি পুরস্কার এবং ২০১৫ সালে রিয়াজুল রিজু পরিচালিত 'বাপজানের বায়োস্কোপ' পেয়েছিল আটটি পুরস্কার।
এক ছবির এত পুরস্কার নিয়ে কথা হয় ২০২০ সালের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের জন্য গঠিত জুরি বোর্ডের সদস্য চলচ্চিত্র পরিচালক মুশফিকুর রহমান গুলজারের সঙ্গে। তবে তিনি শুরুতে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার নিয়ে কথা বলতে চাননি। পরে তিনি দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'এবার ১৩ সদস্যর জুরি বোর্ড ছিলো। প্রত্যেকে সিনেমা দেখে আলাদা আলাদা ক্যটাগরিতে গোপনে নম্বর দেন। জুরিদের সেই নম্বর এক জায়গায় করে সবচেয়ে যে বেশি নম্বর পান সেই ক্যাটাগরিতে তিনিই পুরস্কার পেয়ে থাকেন। সেক্ষেত্রে আমার পছন্দ না হলে হয়ত আরেকজনের পছন্দ হয়ে যায়। এভাবেই দেখা যায় একটি ছবি বেশি পুরস্কার পেয়ে যায়।'
তাছাড়া ওই বছর কম ছবি মুক্তি পাওয়ার বিষয়টিও তিনি উল্লেখ্য করেন। তিনি জানান, অনেক সময় কোনো ক্যাটাগরিতে হয়তো ভালো কাউকে পাওয়াও যায় না।
চলচ্চিত্র পুরস্কার নিয়ে কথা বলেন চলচ্চিত্র সমালোচক অনুপম হায়াত। তিনি বলেন, 'জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার একটি দেশের চলচ্চিত্রের সামাজিক, নান্দনিকতা ও রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি। কাজেই চলচ্চিত্রের ব্যবসা মূল্যায়নের মানদণ্ড নয়। অনেক ছবি সবসময় সিনেমা হলে ভালো ব্যবসা করে এমন নয়, কিন্তু যেসব ক্যাটাগরিতে পুরস্কার দেওয়া হয় সেই মান পূরণ করে হয়তো এই কারণে পুরস্কার পায়। পরিচালক সিনেমা বানাবেন, মুক্তি দেবেন, দেখা না দেখা দর্শকের দায়িত্ব।'
চলচ্চিত্রের এই সমালোচক মনে করেন, সব ছবি সবকিছুতে 'আপটু দ্য মার্ক' হয় না। তাই যেটা হয় সেটাকে পুরস্কার দেয়া হয়। এ বছর 'গোর' সিনেমা সেটা অর্জন করেছে বলে মনে করেন তিনি।