১১৭টি প্রকল্পের বাস্তবায়ন কাজের অগ্রগতি শূন্য: আইএমইডি'র প্রতিবেদন
গত অর্থবছরে (২০২০-২১) সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) ১ হাজার ৯৫৪ টি প্রকল্পে বরাদ্দ দেয় সরকার। এর মধ্যে ৬৬২ টি প্রকল্পের বাস্তবায়ন হার (অর্থ ব্যয়) সন্তোষজনক নয়, বরং হতাশাব্যঞ্জক বলে উঠে এসেছে বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) পর্যালচনায়।
আইএমইডি'র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাস্তবায়ন কাজের (ফিজিকাল প্রোগ্রেস) কোনো অগ্রগতি হয়নি এমন প্রকল্পে সংখ্যা ১১৭টি। এর মধ্যে কিছু প্রকল্পে বেতন-ভাতা বা অফিস খবর বাবদ কিছু অর্থ ব্যয় হলেও, যে উদ্দেশ্যে প্রকল্প নেওয়া হয়েছে সে কাজের কোনো অগ্রগতি হয়নি।
অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী বাস্তবায়ন অগ্রগতি ২৫ শতাংশের নিচে এমন প্রকল্পের সংখ্যা ১০৮টি। ২৬ থেকে ৫০ শতাংশ বাস্তবায়ন হয়েছে ১৩১টি প্রকল্প। এবং ৫১ থেকে ৭৫ শতাংশ বাস্তবায়ন হয়েছে এমন প্রকল্প রয়েছে ২৩৩টি। এসব প্রকল্পের বাস্তবায়ন কাজ মোটেই সন্তোষজনক নয় বলে উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
আইএমইডি'র কর্মকর্তরা জানান, বুধবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভায় প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করা হবে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত অর্থবছরে সমাপ্ত হয়েছে ২৬৪ টি প্রকল্প। এর মধ্যে শতভাগ কাজ হয়েছে ১৪০ টি প্রকল্পের। বাকি প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন কাজ বাকি রেখেই সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে।
এদিকে, গত অর্থবছরে শূন্য আর্থিক অগ্রগতির প্রকল্পের সংখ্যাও ৯০টি। এসব প্রকল্পে কোনো অর্থ ব্যয় করা হয়নি। শূন্য আর্থিক অগ্রগতির এসব প্রকল্পের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোগত বেশ কিছু প্রকল্পও রয়েছে। গত অর্থবছরের সংশোধিত শূন্য ব্যয়ের প্রকল্পে মোট ১ হাজার ৭৮৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল।
এছাড়া, ১২২ টি প্রকল্পে অর্থ ব্যয় হয়েছে বরাদ্দের ২৫ শতাংশেরও কম। এসব প্রকল্পের আর্থিক অগ্রগতি হতাশাজনক বলে উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
আইএমইডি'র প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, অর্থছাড় না হওয়া, ভূমি অধিগ্রহণ না হওয়া, দরপত্র আহ্বানে বিলম্ব, দরপত্রে সাড়া না পাওয়া, সম্ভাব্যতা সমীক্ষা ছাড়াই প্রকল্প হাতে নেওয়া, ভৌত কাজের সঠিক নকশা না থাকা, বৈদেশিক ঋণ নিশ্চিত না করে প্রকল্প নেওয়া, অপ্রতুল বরাদ্দ, মামলাজনিত সমস্যা, যথা সময়ে প্রকল্প সংশোধন না করা, কর্মপরিকল্পনা ও ক্রয় পরিকল্পনা না থাকার কারণে এসব বরাদ্দে অর্থ ব্যয় করা সম্ভব হয় না।
গবেষণা সংস্থা বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ (বিআইডিএস)-এর সাবেক গবেষণা পরিচালক জায়েদ বখত বলেন, প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে আন্তরিকতার অভাবেই প্রতি বছর এমনটি ঘটছে বলে মনে হয়।
এ বিষয়ে তিনি ৩টি প্রধান বাস্তবায়নজনিত ত্রুটির কথা উল্লেখ করেন- অনিশ্চিত ভূমি অধিগ্রহণ, সময়মতো প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ দিতে না পারা এবং তহবিল নিশ্চিত না করে প্রকল্প হাতে নেওয়া।
বিআইডিএস'র সাবেক এই গবেষক আন্তরিকতা, প্রকল্প নেওয়ার আগে সঠিক পরিকল্পনা এবং সক্ষমতার চেয়ে বেশি প্রকল্প গ্রহণ না করার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
আইএমইডি'র প্রতিবেদন অনুযায়ী, মোট ১ হাজার ৯৫৪টি প্রকল্পের মধ্যে ২৬ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত অর্থ ব্যয় হয়েছে ১৩০ প্রকল্পের। আর ৫১ শতাংশ থেকে ৭৫ শতাংশ অর্থ ব্যয় হয়েছে ৩২০ টি প্রকল্পের। এসব প্রকল্পের আর্থিক অগ্রগতিও সন্তোষজনক নয় বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
এদিকে, গত অর্থবছরে ৩০২টি প্রকল্পের বরাদ্দ শতভাগ খরচ হওয়ায় এসব প্রকল্পের অর্থ ব্যয়কে প্রসংশনীয় বলে উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোকে সরকার চাহিদা অনুযায়ী বরাদ্দ দিলেও তা ঠিকভাবে ব্যয় করতে পারছে না তারা। ফলে অর্থবছরের মঝপথে এডিপি সংশোধন করেও ব্যয় কমানো হয়। এরপরেও অনেক প্রকল্পে অর্থ ব্যয় সম্ভব হয় না।
আইএমইডির প্রতিবেদন অনুযায়ী বেশ কিছু মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে চিহ্নিত করা হয়েছে, যেগুলো বৈদেশিক সহায়তার অর্থ ব্যয়ে ব্যর্থ হয়েছে। এর মধ্যে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়, অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়, আইন ও বিচার বিভাগ, খাদ্য মন্ত্রণালয়, ভূমি মন্ত্রণালয়, সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়সহ ১১টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ রয়েছে, যারা লক্ষ্যমাত্রার ৫০ শতাংশ বা তারচেয়েও কম অর্থ ব্যয় করতে পেরেছে।