বিল গেটসের সাথে ডিভোর্সের আগে বিশ্বাস 'ভেঙেছিল': মেলিন্ডা
বিল গেটস আর মেলিন্ডা গেটসের প্রেমকাহিনী তো সবার জানা। ৭ বছর প্রেমের পর আদর্শ দম্পতি হিসেবে হিসেবে কাটিয়েছেন আরো ২৭ বছর। এই 'পাওয়ার কাপল' যখন গতবছর মে-তে বিস্ফোরক-বিচ্ছেদের খবর দিলেন তখন সারা বিশ্বে আলোচনার ঝড় বয়ে যায়।
কিন্তু ঠিক কী কারণে ভেঙে গেল তাদের সেই সম্পর্ক- এ নিয়ে মাইক্রোসফটের সহ-প্রতিষ্ঠাতা মেলিন্ডা সম্প্রতি খোলাখুলি কথা বলেছেন গেইল কিং-এর উপস্থাপনায় 'সিবিএস মর্নিং' এ।
এক্সক্লুসিভ এই সাক্ষাৎকারে মেলিন্ডা ফ্রেঞ্চ গেটস তার বেদনাদায়ক হাই-প্রোফাইল ডিভোর্সের পর 'ব্যথা প্রশমের যাত্রা'র নানা দিক তুলে ধরেন। দুভার্গ্যজনক দাম্পত্য জীবনে বিশ্বাস 'ভাঙা' থেকেই বিচ্ছেদের অবতারণা বলে জানান তিনি৷
"কীভাবে এরকম হতে পারে, কীভাবে আমি এখান থেকে ঘুরে দাঁড়াব, কীভাবে সব ভুলে সামনে এগিয়ে যাব- এসব ভেবে অনেকদিন কার্পেটের উপর শুয়ে অজস্র চোখের পানি ফেলেছি আমি," কিং-কে বলেন মেলিন্ডা৷
তিনি জানান, অনেকদিন পর্যন্ত এই বিচ্ছেদ নিয়ে ক্রুদ্ধও ছিলেন তিনি। একে বিষাদের অংশ হিসেবে চিহ্নিত করে বলেন, "আপনি সারাজীবনের জন্য যা নিজের করে ভেবেছিলেন তা হারানোর শোক এমনই হয়।"
"মানে এটা খুবই দুঃখজনক ছিল। এরপর সময়ের সাথে সাথে আমি এই ব্যথা প্রশমের যাত্রা শুরু করলাম এবং অনুভব করলাম যে আমি এই অনুভূতির অন্য প্রান্তে যেতে শুরু করেছি। মনে হয় আমি জীবনের সেই অধ্যায় পাল্টাতে শুরু করেছি। এখন ২০২২ সাল, আর জীবনের পথে সামনে কী আসতে চলেছে তা জানতে সত্যিই অধীর আগ্রহী আমি," যোগ করেন মেলিন্ডা।
২০০০ সালের দিকে বিল গেটসের পরকীয়ার তথ্য উন্মোচন নিয়েও তাকে প্রশ্ন করেন কিং। জবাবে মেলিন্ডা বলেন, "আমি নিশ্চিতভাবেই ক্ষমায় বিশ্বাসী, তাই সে বিষয়ে আমরা কিছুটা মানিয়ে নিব ভেবেছিলাম। কিন্তু এটা কোনো একটা নির্দিষ্ট মুহূর্ত বা নির্দিষ্ট ঘটনার বিষয় না। একটা সময় আমি বুঝতে পেরেছিলাম আমাদের মধ্যে যে সম্পর্ক আছে তা আর স্বাস্থ্যকর পর্যায়ে নেই, এই সম্পর্কের উপর আমি আর বিশ্বাসও করতে পারছিলাম না।"
"একবার বিশ্বাস ভেঙ্গে গেলে তা ফিরে পাওয়া কঠিন নয় কি?" সাক্ষাতকারে জিজ্ঞেস করেছিলেন কিং।
মেলিন্ডা উত্তর দেন, "অনেক, যেকোনো সম্পর্কেই এটা ফিরে পাওয়া অনেক কঠিন।"
গত বছর এই দম্পতির বিচ্ছেদের খবরের সাথে গুরুত্ব পেয়েছিল যৌন নিপীড়ক হিসেবে দোষী সাব্যস্ত আমেরিকান ধনকুবের জেফরি এপস্টেইনের সাথে বিল গেটসের বন্ধুত্ব নিয়ে মেলিন্ডার অসন্তোষ। একই সাথে বিলের অর্থ ব্যবস্থাপকের বিরুদ্ধে নারীদের যৌন নিপীড়নের অভিযোগ নিয়েও মেলিন্ডার ক্ষোভের জনশ্রুতি ছিল।
মাইক্রোসফটের এক কর্মীর সাথে বিল গেটসের কয়েক বছরের প্রেমের খবরও পাওয়া যায়। সেই কর্মী ২০১৯ সালে কোম্পানি বোর্ডকে এই সম্পর্কের ব্যাপারে অবহিত করেন, অভ্যন্তরীণ তদন্ত চলাকালীন গেটস তার পদ থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলেন সে সময়ের দিকেই।
গেটস দম্পতি একসাথে বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, একে পৃথিবীর বৃহত্তম দাতব্য সংস্থার একটি হিসেবেও গড়ে তুলেছিলেন দু'জনে মিলে৷
ডিভোর্সের সময়ে বিল গেটসের সম্পদের পরিমাণ ছিল ১৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এই দম্পতি কোনো বিবাহপূর্ব চুক্তিতে স্বাক্ষর করেননি।
ডিভোর্সের পর বিল গেটস সিএনএনকে জানিয়েছিলেন মেলিন্ডার সাথে বিচ্ছেদ তার তীব্র শোক এবং বিষাদের উৎস।
বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের মিশন এগিয়ে নিয়ে যেতে মেলিন্ডার অবিশ্বাস্য মনোবলের কথা উল্লেখ করে বিল জানিয়েছিলেন তারা একসাথে দাতব্য কার্যক্রম চালিয়ে যাবেন।
"আমাদের একসাথে কাজ করা সবসময় উপভোগ করেছি আমি," বলেন তিনি।
মেলিন্ডা জানিয়েছিলেন, আরো অন্তত দুই বছর তিনি এই ফাউন্ডেশনে বিলের সাথে কাজ করার চেষ্টা করবেন।
ওয়েস্টচেস্টার কাউন্টিতে গত অক্টোবরে তিন সন্তানের মধ্যে সবার বড় জেনিফার গেটসের (২৫) বিয়েতে বিল এবং মেলিন্ডা গেটসকে একসাথে দেখা গিয়েছিল।
- সূত্র: নিউইয়র্ক পোস্ট