অসচ্ছল ব্যক্তিদের জন্য হলেও সুলভমূল্যের পণ্য কিনছেন সচ্ছলরা
রমজান উপলক্ষে রাজধানীর অসচ্ছল মানুষদের জন্য প্রাণিজ পুষ্টি নিশ্চিতে ন্যায্যমূল্যে মাংস, ডিম ও দুধ বিক্রি করছে প্রাণিসম্পদ বিভাগ। কিন্তু দেখা গেছে, এর বেশিরভাগ পণ্য কিনে নিচ্ছেন সচ্ছলরা।
নিয়ম অনুযায়ী লাইনে দাঁড়ানো প্রত্যেক ব্যক্তি সর্বোচ্চ এক কেজি গরু বা খাসির মাংস, এক কেজি মুরগির মাংস, ডিম এক ডজন ও দুধ দুই লিটার কিনতে পারবেন।
কিন্তু খামারবাড়ির ভ্রাম্যমাণ বিক্রয়কেন্দ্র থেকে একেকজন ২ থেকে ৩ কেজি মাংস কিনছেন, দুধ কিনছেন ৫ লিটার, ডিম নিচ্ছেন ৩০ পিসের মতো।
সেখানে দেখা যায়, বেশি করে পণ্য কেনায় বিক্রি শুরু হওয়ার আধা ঘণ্টার মধ্যেই মাংস বিক্রি শেষ হয়ে যায়। এরপর বিক্রি হয় দুধ আর ডিম। তাও বেলা পৌনে ১টার দিকে বিক্রি শেষ হয়ে যায়। তখনও প্রায় ২০ জন ক্রেতা ছিল পণ্য কেনার জন্য।
পণ্য বিক্রি শুরুর দিন প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহজাদা বলেন, "যারা গরিব এবং `নিডি' মূলত তাদের জন্য এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।"
নূরুল আমিন নামক একজন গ্রাহক টিবিএসকে বলেন, "আমি গতকাল পণ্য কিনতে এসেছিলাম কিন্তু তখন শেষ হয়ে গিয়েছিল। আজকে সাড়ে ১১টায় এসে লাইন দিয়েও মাংস কিনতে পারলাম না। ১২টার দিকে শেষ হয়ে গেছে মাংস।
যাদের টাকা আছে তারা যদি ২ থেকে ৩ কেজি মাংস কিনে নেয় তাহলে আমরা তো কিনতে পারবো না।"
সচিবের নাম করে একজনকে ৩ কেজি গরুর মাংস কিনতে দেখা যায়। তবে কোন মন্ত্রণালয়ের সচিব সেটা তিনি বলেন নি। বিক্রয়কর্মী মোহম্মদ রবিনের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি টিবিএসকে বলেন, "দেখুন একজন এসে সচিবের নাম বলে ৩ কেজি নিয়েছেন। আমরা কি করতে পারি এখানে।"
লিয়াকত আলী নামক আরেকজন ক্রেতা ২ কেজি মাংস, ৫ লিটার দুধ ও ৩০টি ডিম কেনেন। তিনি টিবিএসকে বলেন, "আমার বাসা কাজীপাড়া, মোটরসাইকেল চালিয়ে যাচ্ছিলাম। এখানে বিক্রি হচ্ছে দেখে কিনে নিলাম।"
সাজ্জাদ হোসেন বলেন, "গতকাল ৩টার দিকে দেখেছিলাম এখানে পণ্য বিক্রি হয়। তখন শেষ হয়ে যাওয়ায় কিনতে পারি নি। আজকে এক ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে আধা কেজি মাংস, দুধ দুই লিটার আর ১২টি ডিম কিনতে পেরেছি। গরুর মাংস এক কেজি চেয়েছিলাম কিন্তু শেষ হয়ে যাওয়ায় আধা কেজি দিয়েছে।"
তিনি বলেন, "যাদের টাকা আছে তারা তো দোকান থেকেই কিনতে পারে। তারা এখানে এসে যদি বেশি করে কিনে নেয় তাহলে কেমনে হবে!"
সর্বশেষ গত ১৭ মার্চ পবিত্র শবেবরাতের রাতে খাবার জন্য দোকান থেকে আধা কেজি গরুর মাংস ৩৮০ টাকা দিয়ে কিনেছিলেন সাজ্জাদ।
আরেক ক্রেতা জাহিদ হাসান বলেন, "বাজারে মাংসর দাম বেশি তাই কেনার সাধ্য নেই। ১১টার দিকে লাইনে দাঁড়িয়ে ৪৫ মিনিট পর পণ্য কিনতে পারলাম। মুরগি চাইলাম এক কেজি, শেষ হয়ে যাওয়ায় পেলাম আধা কেজি। আর দুধ কিনলাম ২ লিটার।
পণ্য বিক্রিতে অব্যবস্থাপনা ছিল। না হলে এতো দ্রুত বিক্রি শেষ হওয়ার কথা না।"
বিক্রয়ের জন্য প্রাথমিকভাবে ১০টি স্পট বেছে নেওয়া হয়েছে- আব্দুল গণি রোড, খামারবাড়ি গোলচত্বর, জাপান গার্ডেন সিটি, মিরপুর ৬০ ফুট রোড, আজিমপুর ম্যাটারনিটি, পুরান ঢাকার নয়াবাজার, আরামবাগ, নতুন বাজার, কালশি ও যাত্রাবাড়ী।
ভ্রাম্যমাণ ভ্যানে ১ লিটার পাস্তুরিত দুধের দাম ৬০ টাকা, গরুর মাংস ৫৫০ টাকা, খাসীর মাংস ৮০০ টাকা, ড্রেসড ব্রয়লার মুরগির কেজি ২০০ টাকা এবং চারটি ডিমের দাম ৩০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
২৮ রমজান পর্যন্ত প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত বিক্রয় চলবে।
তবে গতকাল সোমবার গাড়ি নষ্ট হওয়ায় জাপান গার্ডেন সিটি ও যাত্রাবাড়ী এলাকায় পণ্য বিক্রি হয়নি।
সুলভ মূল্যের ভ্রাম্যমাণ গাড়ির সুপারভাইজার সানোয়ার হোসেন জানান, খামারবাড়িতে গরুর মাংস ১০০ কেজি, খাসির মাংস ২০ কেজি, মুরগির মাংস ১০০ কেজি, ডিম ১৫০০ পিস এবং দুধ ২০০ লিটার আনা হয়েছিল।
এতো দ্রুত গরুর মাংস শেষ হওয়ার বিষয়ে সানোয়ার হোসেন বলেন, "শুরুতে অনেক ভিড় থাকে। অনেকেই বলে দূর থেকে এসেছে তাই তখন নির্ধারিত পরিমাণের তুলনায় তাদের দুই কেজি মাংস দেয়া হয়।"