কলাবাগান থানা ভবনের জন্য বিকল্প জায়গা খোঁজার নির্দেশনা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর
কলাবাগানের খেলার মাঠের বদলে অন্য কোনো স্থান বেছে নিতে বলেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনার পর।
সোমবার (২৫ এপ্রিল) সকালে রাজধানীর তেজগাঁও সরকারি বিজ্ঞান কলেজ প্রাঙ্গণে ঈদ উপলক্ষে দরিদ্রদের মাঝে ঈদ সামগ্রী বিতরণ অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি একথা বলেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, কলাবাগানের তেঁতুলতলা মাঠ জেলা প্রশাসকের চিহ্নিত করা একটি খাস জমি হওয়ার কারণেই সেখানে থানা ভবন নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
তিনি বলেন,'আমরা মনে করি খেলার মাঠে বাচ্চারা খেলাধুলা করবে, এটিই স্বাভাবিক। খেলার মাঠ যেন থাকে, সে জন্য আমরা মনে করি খেলার মাঠের ব্যবস্থা করতে হবে। মেয়রকে বলেছি, সবাইকে বলেছি বিকল্প একটি খোঁজার জন্য। যদি না হয়, তাহলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীরও এটা অতীব জরুরি। এটা আমরা পরবর্তীতে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিব, কী করা যায়।'
বিকল্প জায়গা পাওয়া না গেলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জন্য এই থানা ভবন নির্মাণ অতীব জরুরী উল্লেখ করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
থানা ভবন নির্মাণের প্রতিবাদ করায় গতকাল মা-ছেলেকে আটক করার প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, "তারা সরাসরি ফেসবুক লাইভে এসে এমন কিছু প্রচার করছিল যা অসঙ্গতিপূর্ণ। তাদেরকে বারবার থামানোর চেষ্টা করেও থামানো যায়নি বলেই তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে থানায় নেওয়া হয়েছিল।পরে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।"
রাজধানীর কলাবাগানের 'তেঁতুলতলা মাঠ রক্ষা'র অন্যতম আন্দোলনকারী সৈয়দা রত্না ও তার ছেলে, ১৭ বছর বয়সী মোহাম্মদ ঈসা আবদুল্লাহকে গতকাল (২৪ এপ্রিল) আটক করে পুলিশ। পরবর্তীতে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়।
কলাবাগান থানার ওসি পরিতোষ চন্দ্র দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, রত্না ও তার ছেলেকে এই প্রতিশ্রুতি দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে যে তারা ভবিষ্যতে কোনো সরকারি কাজে বাধা দেবে না।
১০ ঘণ্টারও বেশি সময় আটকে থাকার পর তাদের হেফাজতে নেয় রত্নার বোন।
এর আগে একই অভিযোগে দুজনের বিরুদ্ধে মামলা করার চেষ্টা করে কলাবাগান থানা পুলিশ।
গত রাত সাড়ে ৯টার দিকে একটি মামলায় তাদের আসামি করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) নিউমার্কেট জোনের সহকারি কমিশনার শরীফ মোহাম্মদ ফারুকুজ্জামান।
বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মা-ছেলেকে কলাবাগান থানায় নিয়ে আসা হয়। আলাদা হেফাজতে রাখা হয় তাদেরকে।
১৭ বছর বয়সী আব্দুল্লাহকে প্রাপ্তবয়স্কদের হাজতে আটক রাখায় এ নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে বিতর্কের সৃষ্টি হয়।
কলাবাগান পুলিশ জানিয়েছে, গ্রেপ্তারকৃত দুজনকেই আজ সোমবার আদালতে সোপর্দ করা হবে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ১৭ নং ওয়ার্ডের অধীন তেঁতুলতলা খেলার মাঠটি দীর্ঘদিন ধরে শিশুদের খেলার মাঠ হিসেবে এবং জানাজার মতো অন্যান্য সামাজিক কর্মকাণ্ডের জন্য ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
এরপর, ২০২০ সালে একটি সাইনবোর্ড লাগিয়ে সেখানে থানার জন্য স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে উল্লেখ করে কলাবাগান পুলিশ। বাসিন্দারা অবিলম্বে সেই পদক্ষেপের প্রতিবাদ করে, সাইনবোর্ড অপসারণ করে এবং আগের মতো জায়গাটি ব্যবহার করতে থাকে।
পরবর্তীতে, এ বছরের ৩১ জানুয়ারি কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে জায়গাটি চিহ্নিত করে পুলিশ। কলাবাগান থানা পুলিশের কয়েকজন সদস্যকেও নিয়মিত সেখানে পাহারা দিতে দেখা গেছে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের একটি সূত্র জানায়, তেঁতুলতলা খেলার মাঠ তাদের খেলার মাঠের তালিকায় নেই। এলাকাবাসী এটিকে খেলার মাঠ হিসেবে ব্যবহার করছিলেন।
গত বছরের ২৪ আগস্ট ঢাকা জেলা প্রশাসনের জারি করা এক নোটিশে উল্লেখ করা হয়, সেখানে ডিএমপি কলাবাগান থানা ভবন নির্মাণের জন্য খেলার মাঠটি সরকার অধিগ্রহণের প্রস্তাব করে। নোটিশে জমিটিকে পতিত হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
পরে ১১ সেপ্টেম্বর নোটিশের প্রতিবাদে কলাবাগানের বাসিন্দা, পরিবেশবাদী, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও উন্নয়নকর্মী এবং শিশু-কিশোররা আন্দোলন শুরু করে।
সৈয়দা রত্না ও এলাকাবাসী দীর্ঘদিন ধরে থানা ভবন নির্মাণের প্রতিবাদে আন্দোলন চালিয়ে আসছেন।