রেলমন্ত্রীর স্ত্রীর ফোনেই বরখাস্ত টিটিই: এক যাত্রীর মা
সম্প্রতি ট্রেনে টিকিটবিহীন ভ্রমণের সময় রেলমন্ত্রীর পরিচয় দেওয়া সেই তিন যাত্রীর পরিচয় জানা গেছে।
রোববার সকালে দৈনিক প্রথম আলোর প্রকাশিত প্রতিবেদন বলছে, ওই তিন যাত্রী রেলমন্ত্রীর স্ত্রী শাম্মী আক্তারের নিকটাত্মীয়।
টিটিই শফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেওয়া ইমরুল কায়েস রেলমন্ত্রীর স্ত্রী শাম্মী আক্তারের মামাতো বোন ইয়াসমিন আক্তারের ছেলে।
ইয়াসমিন আক্তারের উদ্ধৃতি দিয়ে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে জানানো হয়েছে, ঘটনার রাতে ইয়াসমিন আক্তার ও শাম্মি আক্তার একসঙ্গে ছিলেন।
তার বক্তব্য অনুযায়ী, ইমরুল কায়েস কল করে টিটিই'র দুর্ব্যবহারের বিষয়ে জানানোর পর, রেলমন্ত্রীর স্ত্রী তাৎক্ষণিক রেলের এক উর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে ফোন করে টিটিই শফিকুলকে বরখাস্ত করতে বলেন।
জানা গেছে, ইমরুল কায়েস নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন। পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার নূর মহল্লা এলাকায় থাকেন তিনি। বর্তমানে একটি বহুজাতিক কোম্পানিতে কর্মরত আছেন।
অন্য দুজন যাত্রী হলেন শাম্মী আক্তারের মামাতো ভাই ফারুক হোসেন ও হাসান আলী।
ইমরুল কায়েসের মা ইয়াসমিন আক্তার বলেন, ঘটনার রাতে (৫ মে) তার ছেলে টিকিট না পাওয়ায় নুরুল আলম নামের রেলওয়ের এক সহকারী বাণিজ্যিক কর্মকর্তাকে (এসিও) ফোন দেন শাম্মী আক্তার।
রেলমন্ত্রীর স্ত্রীর আত্মীয় হওয়ায় তাদের টিকিট কিনতে হবে না বলেন স্টেশনমাস্টার, এ কারণেই টিকিট ছাড়া ট্রেনে উঠেন ইমরুল। ইয়াসমিন আক্তার আরও বলেন, এরপর ট্রেনের কর্মকর্তারা সম্মান দেখিয়ে তাদের তিনজনকে এসি বার্থে বসার ব্যবস্থা করে দেন।
ইয়াসমিন আক্তার বলেন, "ওরা একটু আরামের জন্য এসি কামরায় বসেছিলেন। ট্রেন ছাড়লে টিটি এসে ছেলেদের সঙ্গে খারাপ আচরণ শুরু করেন।"
"তিনি ছেলেকে 'ট্রেন কি তোর বাপের' বলে গালি দেন", বলেন ইয়াসমিন আক্তার।
শনিবার বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া এক বিবৃতিতে রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন দাবি করেছিলেন টিকিটবিহীন যাত্রীরা তার আত্মীয় না, তিনি তাদের চেনেন না।
এ বিষয়ে ইয়াসমিন বলেন, 'ঘটনার পর রেলমন্ত্রী আমাদের চেনে না বলায় কষ্ট পেয়েছিলাম। দুপুর একটার দিকে তিনি (রেলমন্ত্রী) নিজেই ফোন দিয়েছিলেন। তিনি বলেছেন, ''আপা, আমি যা বলেছি, এতে মন খারাপ করবেন না। জনগণ সবাই আমার কাছে সমান। তাই বলেছি। বিষয়টা আমি দেখছি।'''
এদিকে, পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের পাকশী বিভাগীয় কার্যালয় এ ঘটনায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। কমিটির প্রধান বিভাগীয় সহকারী পরিবহন কর্মকর্তা (এটিও) সাজেদুল ইসলামকে, দুইদিনের মধ্যে কমিটিকে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
ঘটনার ব্যাখা দিতে বরখাস্ত টিটিই শফিকুলকে রোববার পশ্চিমাঞ্চল রেলের পাকশী বিভাগীয় কার্যালয়ে ডাকা হয়েছে।
এর আগে, ঢাকাগামী আন্তঃনগর সুন্দরবন এক্সপ্রেস ট্রেনে গত ৫ মে ঈশ্বরদী রেল জংশন থেকে তিন যাত্রী বিনা টিকিটে এসি কেবিনে চেপে বসেন। ট্রেনে কর্তব্যরত টিটিই শফিকুল ইসলাম তাদের টিকিট দেখতে চাইলে তারা রেলমন্ত্রীর আত্মীয় পরিচয় দেন।
এসিওর পরামর্শ অনুযায়ী টিটিই শফিকুল ইসলাম ওই তিন যাত্রীকে এসি টিকিটের পরিবর্তে মোট ১ হাজার ৫০ টাকার জরিমানাসহ সুলভ শ্রেণির নন এসি কোচের সাধারণ আসনের টিকিট করে দেন।
এরপর যাত্রীদের সঙ্গে অসদাচরণের অভিযোগে ওই ট্রেনের ভ্রাম্যমাণ টিকিট পরীক্ষক (টিটিই) মো. শফিকুল ইসলামকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। শুক্রবার (৬ মে) সন্ধ্যায় শফিকুল ইসলামকে সাময়িক বরখাস্তের বিষয়টি জানানো হয়। তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন টিটিই শফিকুল ইসলাম। তার দাবি, রেলমন্ত্রীর আত্মীয়দের জরিমানা করায় তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে।