ম্যাথুসকে ডাবল সেঞ্চুরি করতে দিলেন না নাঈম, থামলো শ্রীলঙ্কার ইনিংস
আর মাত্র ১ রান, তাতেই পৌঁছে যাবেন তিন অঙ্কের ম্যাজিক ফিগারে। নামের পাশে যোগ হয়ে যাবে দুটি টেস্ট ডাবল সেঞ্চুরি। ১৫৩তম ওভারের শেষ ডেলিভারিটি করলেন নাঈম ইসলাম। বাংলাদেশ স্পিনারের ডেলিভারিটি এগিয়ে গিয়ে স্লগ করতে চাইলেন ম্যাথুস। ব্যাটে-বলে হলো না, স্কয়ার লেগে দাঁড়িয়ে সহজ ক্যাচটি নিয়ে নিলেন সাকিব আল হাসান।
হৃদয় ভেঙে চুরমার ম্যাথুসের, বাংলাদেশ শিবিরে তখন শ্রীলঙ্কাকে অলআউট করার উল্লাস। সাকিবের হাতে বল জমা হতেই মুচকি হেসে দিলেন ম্যাথুস। যেন ভাগ্যের রসিকতার জন্যই তার হাসিটা। শ্রীলঙ্কার প্রথম ইনিংসের নায়কের বিদায়ই কিনা এমন করুণভাবে হলো! হতাশায় যেন নির্লিপ্ত হয়ে যান ম্যাথুস, কিন্তু একবারও তা প্রকাশ করতে চাইলেন না।
টেস্ট ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ডাবল সেঞ্চুরি থেকে ১ রান দূরে থাকতে আউট হয়ে সোজা সাজঘরের পথ ধরলেন লঙ্কান অভিজ্ঞ এই ব্যাটসম্যান। বিশ্ব ফার্নান্দোকেও হাঁটতে হলো সে পথেই, উইকেট যে আর বাকি নেই। জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে চলমান টেস্টের প্রথম ইনিংসে শ্রীলঙ্কা অলআউট হলো ৩৯৭ রানে। প্রথম দিনের পর কুশল মেন্ডিস জানিয়েছিলেন, ৪০০ বা ৫০০ রানের বেশি করতে চান তারার। শ্রীলঙ্কা ও ম্যাথুস; লক্ষ্যে পৌঁছানো হলো না কারোরই। দলের ৩ আর ম্যাথুসের ১ রানের অপূর্ণতা থেকেই গেল।
অথচ শ্রীলঙ্কার ইনিংসে ম্যাথুসের নামটিই সবচেয়ে বড় করে লেখা। দলীয় ১৫৮ রানে কুশল মেন্ডিস আউট হওয়ার পর উইকেটে যান তিনি। যোগ্য সঙ্গী হিসেবে পান দিনেশ চান্দিমালকে, প্রথম দিনই গড়েন ৭৫ রানের জুটি। দ্বিতীয় দিন আরও অনেকটা পথ পাড়ি দেন তারা, জুটিটা ১৩৬ রানের। চান্দিমাল ৬৬ রান করে আউট হলেও অবিচল ম্যাথুস।
এরপর নাঈম ও সাকিবের স্পিনে এলোমেলো শ্রীলঙ্কা। অন্য প্রান্তে বাজতে থাকে ভাঙনের সুর, তবুও টলেন না ম্যাথুস। এক পাশ আগলে এগিয়ে নিতে থাকেন দলকে। শেষ দিকে বিশ্ব ফার্নান্দোর সঙ্গে গড়েন ৫৪ রানের জুটি। তীব্র গরমের মাঝে ৯ ঘণ্টা ৩৮ মিনিট ব্যাটিং করে দলকে ৪০০ রানের কাছে গিয়ে তিনি যখন ডাবল সেঞ্চুরি ছোঁয়ার অপেক্ষায়, তখন নিজেই যেন নিজেকে হারিয়ে ফেললেন।
পুরো ইনিংসে মাথা ঠাণ্ডা রাখা ম্যাথুস হঠাৎ অস্থির হয়ে উঠলেন। ডাউন দ্য উইকেটে খেলতে গিয়ে ক্যাচ তুলে দিলেন সাকিবের হাতে। তাতে থামে লঙ্কান অভিজ্ঞ এই ব্যাটসম্যানের ৩৯৭ বলে ১৯৯ রানের ইনিংসটি। যেখানে আছে ১৯টি চার ও একটি ছক্কার মার। বাংলাদেশের বিপক্ষে টেস্টে ১৯৯ রানে আউট হওয়া দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান তিনি। এর আগে বাংলাদেশের বিপক্ষে ১৯৯ রানে আউট হওয়ার দুঃসহ অভিজ্ঞতা হয় দক্ষিণ আফ্রিকার ডিন এলগারের, ম্যাচটি ২০১৭ সালে পচেফস্ট্রুমে অনুষ্ঠিত হয়।
৪ উইকেটে ২৫৮ রান নিয়ে দ্বিতীয় দিন শুরু করা শ্রীলঙ্কা ঠিক পথে থাকলেও একই ওভারে জোড়া আঘাতে হঠাৎ-ই তাদের পথ ভুলিয়ে দেন নাঈম। কয়েক ওভার পর একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি করেন সাকিব। নাঈম তিন বলের ব্যবধানে পরের উইকেট নিলেও সাকিব নেন পরপর দুই উইকেট।
১১৪তম ওভারে নাঈমের বলে সুইস হিট করতে গিয়ে এলবিডব্লিউ হন দিনেশ চান্দিমাল। রিভিউ নিয়েও বাঁচতে পারেননি ৬৬ রান করা ডানহাতি এই লঙ্কান ব্যাটসম্যান। এই ওভারেরই পঞ্চম বলে নিরোশান ডিকভেলার স্টাম্প উপড়ে নেন নাঈম। ১১৭তম ওভারে জোড়া উইকেট নেন সাকিব। রমেশ মেন্ডিসকে বোল্ড করে লাসিথ এমবুলদেনিয়াকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন সাকিব। লঙ্কার শেষ ২ উইকেট নেন নাঈম।
১৫ মাস পরে টেস্ট ক্রিকেটে ফেরাটা রাঙিয়ে নিলেন নাঈম। ডানহাতি এই অফ স্পিনার ৩০ ওভারে ১০৫ রান খরচায় নিয়েছেন ৬ উইকেট, যা তার ক্যারিয়ার সেরা বোলিং। টেস্টে এ নিয়ে তৃতীয় বারের মতো ৫ উইকেট বা তার বেশি পেলেন তিনি। ৫ মাস পরে টেস্টে ফেরা সাকিব ছন্দময় বোলিং করেছেন। সবচেয়ে কম রান খরচা করেছেন তিনি। ৩৯ ওভারে ৬০ রানে তার শিকার ৩ উইকেট। একটি উইকেট পান তাইজুল ইসলাম। শ্রীলঙ্কার ১০ উইকেটই নিয়েছেন বাংলাদেশের ৩ স্পিনার। দুই পেসার খালেদ আহমেদ ও শরিফুল ইসলাম কোনো উইকেট পাননি।