চট্টগ্রামে বিস্ফোরণ: মামলার দুই আসামি কাতরাচ্ছেন হাসপাতালের বেডে
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণের ঘটনায় পুলিশের দায়ের করা মামলার দুই আসামি ঢাকার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট ও জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে দগ্ধ শরীর নিয়ে কাতরাচ্ছেন। আসামি হওয়ার খবরে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন কাজ করতে গিয়ে জীবন সংকটে পড়া এসব ডিপো কর্মকর্তার স্বজনরা।
হাসপাতালে ভর্তি এই দুই আসামি হলেন- মামলার দুই নম্বর আসামি ম্যানেজার (এডমিন) খালেদুর রহমান ও ৬ নম্বর আসামি কনটেইনার ফ্রেইট স্টেশনের ইনচার্জ সাইফুল ইসলাম।
এদের মধ্যে খালেদুর রহমান শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের রেড ইউনিটে ভর্তি আছেন। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তার শরীরের ১২ শতাংশ পুড়ে গেছে; অবস্থা গুরুতর।
অন্যদিকে সাইফুল ইসলাম ভর্তি আছেন জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে। চোখে মারাত্মক ইনজুরির কারণে তাকে সেখানে বিশেষ পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।
সাইফুল ইসলামের সঙ্গে ঢাকায় অবস্থান করা শিবলু টিবিএসকে বলেন, 'ভাইয়াকে গতকাল জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে পাঠানো হয়েছে। তার চোখের কন্ডিশন ভালো না। আর মামলার কথাটি আপনার কাছ থেকেই শুনলাম। কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া কি আমার ভাই কেমিক্যাল রেখেছে? এজন্য কর্মচারীরা কেন আসামি হবেন?'
মামলার বাকি আসামিরা হলেন- বিএম কনটেইনার ডিপোর ডিজিএম অপারেশন নুরুল আকতার, সহকারী এডমিন অফিসার আব্বাস উল্লাহ, সিনিয়র এক্সিকিউটিভ মো. নাসির উদ্দিন, সহকারী ব্যবস্থাপক (ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো) আবদুল আজিজ, কনটেইনার ফ্রেইট স্টেশনের কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম ও ডিপোর জেনারেল ম্যানেজার নাজমুল আকতার খান।
তাদের সবার সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেছিলো দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড, তবে সংযোগ স্থাপন করা যায়নি।
আসামির তালিকায় নেই মালিকরা
বিএম কনটেইনার ডিপো একটি জয়েন্ট ভেনচার কোম্পানি। ২০১১ সালে সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপো লিমিটেড একটি অভ্যন্তরীণ কনটেইনার ডিপো (আইসিডি) হিসেবে কার্যক্রম শুরু করে। ডিপো কর্তৃপক্ষের নিজেদের উৎপাদিত হাইড্রোজেন পার অক্সাইড থেকেই ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড এবং বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। ডিপো কর্তৃপক্ষের আরেকটি প্রতিষ্ঠান আল-রাজী কেমিক্যাল কমপ্লেক্স লিমিটেডে উৎপাদিত এই রাসায়নিক পদার্থ কম্বোডিয়ায় রপ্তানির জন্য ডিপোতে রাখা হয়েছিল।
বিএম ডিপোর মালিক চট্টগ্রামের স্মার্ট গ্রুপ। এই গ্রুপের ম্যানেজিং ডিরেক্টর মুজিবুর রহমান। তিনি চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ বলে জানা গেছে।
দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের অনুসন্ধানে জানা যায়, কোনো আলাদা শেডে নয়, ডিপোর কন্টেইনার ইয়ার্ডেই পড়ে ছিল হাইড্রোজেন পার অক্সাইড। গত ১ ও ২ জুন হাটহাজারী ফতেয়াবাদের আল-রাজী কেমিক্যাল কমপ্লেক্স লিমিটেড থেকে ৮৫০ মেট্রিক টন হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড সীতাকুণ্ডের এই ডিপোতে আনা হয়। রপ্তানির জন্য এসব রাসায়নিক পদার্থ ৩৩ কন্টেইনার ভর্তি করে ইয়ার্ডে রাখা হয়। একটি শিপিং কোম্পানির জাহাজের শিডিউল দিতে না পারায় রপ্তানি বিলম্বিত হচ্ছিল।
গত শনিবার রাতে বিএম কনটেইনার ডিপোতে আগুন লাগে। আগুন থেকে দফায় দফায় বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ফায়ার সার্ভিসের কর্মীসহ ৪৪ জন মারা গেছেন। আহত হন দুই শতাধিক। প্রায় ৬১ ঘণ্টা পর গত মঙ্গলবার দুপুরে ডিপোর আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে বলে সেনাবাহিনী ঘোষণা দেয়।