১০০ বছর ভারত শাসন করা ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির মালিকানা এখন এক ভারতীয়র হাতে
ভারতের স্বাধীনতা লাভের ইতিহাস বেশ দীর্ঘ। ব্রিটিশদের ২০০ বছরের শাসনের হাত থেকে মুক্তি পেতে ভারতকে পাড়ি দিতে হয়েছে অনেক ঝঞ্ঝা-বিক্ষুদ্ধ পথ, করতে হয়েছে সংগ্রাম। কিন্তু ১০০ বছর ধরে যে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ভারত শাসন করেছিল, সে কোম্পানির মালিক যখন হন একজন ভারতীয়, তখন নিঃসন্দেহে গর্বে বুক ফুলে ওঠার কথা। আর এটা সম্ভব হয়েছে মুম্বাইয়ের উদ্যোক্তা সঞ্জীব মেহতার প্রচেষ্টায়।
২০১০ সালে ১৫ মিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে কোম্পানির শেয়ারের সবচেয়ে বড় অংশ কিনে এর গর্বিত মালিক হন সঞ্জীব।
জটিল ও সময়সাপেক্ষ একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ৪০ জন শেয়ারহোল্ডারের কাছ থেকে কোম্পানিটি কিনে নেন মুম্বাইয়ের এক হীরা-ব্যবসায়ী পরিবারে জন্ম নেওয়া সঞ্জীব মেহতা। কিন্তু কোম্পানি অধিগ্রহণের পরেই হাল ছেড়ে দেননি সঞ্জীব।
তিনি বলেন, "যখন আমি প্রতিষ্ঠানটি নিজের হাতে তুলে নেই, তখন আমার উদ্দেশ্য ছিল এর ইতিহাসটা বোঝা। আমি অন্য সব ব্যবসা থেকে ছুটি নিয়ে এটাকেই নিজের জীবনের মূল লক্ষ্য করে তুলেছিলাম।"
তিনি কোম্পানির ইতিহাস এবং ব্যবসা নিয়ে প্রচুর পড়াশোনা করেছেন, এর বাণিজ্যিক কেন্দ্র ও জাদুঘরগুলো পরিদর্শন করেছেন এবং পুরানো রেকর্ড অধ্যয়ন করেছেন। মূলত, তিনি অজ্ঞতা ও ত্রুটির কোনো জায়গা রাখেননি।
ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কেনার পেছনে ঐতিহাসিক ও আবেগীয় যোগসূত্রের কথা বলতে গিয়ে সঞ্জীব মেহতা বলেন, "আপনি আমার জায়গায় একবার নিজেকে কল্পনা করুন। যৌক্তিক কারণ চিন্তা করলে আমি এই ব্যবসায়ে অনেক লাভ দেখতে পেয়েছি। কিন্তু আবেগের দিক থেকে, একজন ভারতীয় হিসেবে আমি চেয়েছি এটা একটা মুক্তির স্বাদ এনে দিক… যারা আমাদের একসময় শাসন করেছিল, এখন আমিই সেই কোম্পানির মালিক।
সঞ্জীব মেহতার নেতৃত্বে বিলাসবহুল গিফট সেট, চা, কফি, জ্যাম এবং এ ধরনের আরো অনেক পণ্য ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মে বিক্রির চিন্তা করছে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি। তবে এ কথা সত্যি যে শুধুমাত্র আবেগের বশবর্তী হয়ে কোম্পানি কিনেননি মেহতা। কারণ সঞ্জীব মেহতার কাছে ব্যবসা আক্ষরিক অর্থেই গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি একই বছরের স্বাধীনতা দিবসে ব্র্যান্ডটি চালু করেন এবং এর ফ্ল্যাগশিপ স্টোর উদ্বোধন করেন।
১৬০০ সালে যাত্রা শুরু করা ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ছিল ১৭ শতক ও ১৮ শতকের শুরুতে বিশ্ব বাণিজ্যে রাজত্ব করা সর্বপ্রথম ও সর্ববৃহৎ কোম্পানি। ১৭৫৭ সালে ভারতে প্রবেশ করার পর দ্রুততম সময়ের মধ্যে ভারতের মাটিতেও রাজত্ব করতে শুরু করে এই কোম্পানি। এ অঞ্চলের স্থানীয় কৃষক ও ব্যবসায়ীদের দলিত করে ভারতজুড়ে নিজেদের একচেটিয়া ব্যবসা শুরু করে এবং দেশীয় কৃষি ব্যবস্থাকে পঙ্গু করে দেয়।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি থেকে শুরু করে ব্যবসা-বাণিজ্য, সব ক্ষেত্রেই ভারতীয়রা আজ বিশ্বে শীর্ষ পর্যায়ে। গুগলের সিইও সুন্দর পিচাই বা ব্রিটেনের অন্যতম ধনী ব্যক্তি লক্ষ্মী মিত্তলই হন, ভারতীয়রা সব জায়গায়ই নিজেদের প্রতিভা এবং উদ্যোগ প্রমাণ করেছে। ২০০ বছর ধরে ব্রিটিশদের দ্বারা নিপীড়িত একটি দেশের জন্য এই স্বল্প সময়ে এতকিছু অর্জন করা অসাধারণের চেয়েও বেশি কিছু।
লোকে বলে, ইতিহাসের গতিপথ পরিবর্তন করার ক্ষমতা তাদের হাতেই রয়েছে যারা স্বপ্ন দেখেন। আর সঞ্জীব মেহতা তেমনই একজন ভারতীয়, যিনি এই প্রবাদবাক্য প্রমাণ করে দেখিয়েছেন।
সূত্র: মেনসএক্সপি