মেয়ার্স পরীক্ষায় আরেকবার ‘ফেল’ বাংলাদেশ
বেশিদিন আগের কথা নয়, গত বছরের ফেব্রুয়ারি ম্যাচ ছিল সেটা। ৩৯৫ রানকে বিশাল মনে করে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে পাঠায় বাংলাদেশ। টেস্টে এই লক্ষ্য আদতে বিশালই। কিন্তু সেটা বিশাল রইলো না। অভিষেক টেস্ট খেলতে নামা কাইল মেয়ার্স ইতিহাস গড়েন, ২১০ রানের হার না মানা ইনিংস খেলে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে অসাধারণ এক জয় এনে দেন তিনি।
মেয়ার্স তখন বাংলাদেশের সিলেবাসের বাইরে ছিল। তাকে নিয়ে সেভাবে পড়ালেখার সুযোগ ছিল না। সুযোগ কাজে লাগিয়ে অতিমানবীয় ইনিংসে ইতিহাসের পাতায় নিজের নামটি খোদাই করে নিয়েছিলেন তিনি। সেই মেয়ার্স আবার যমদূত হয়ে ফিরেছেন বাংলাদেশের জন্য। প্রথম টেস্টে বল হাতে বাংলাদেশকে ভোগানো ক্যারিবীয় এই অলরাউন্ডার সেন্ট লুসিয়ায় ব্যাট হাতে দাপট দেখিয়ে গেলেন, তাকে ফেরানেই গেল না।
এবার জানাশোনা থাকলেও মেয়ার্স পরীক্ষায় পাস করা হলো না বাংলাদেশের। অসাধারণ ব্যাটিংয়ে তুলে নিলেন সেঞ্চুরি, যা তার টেস্ট ক্যারিয়ারের দ্বিতীয়। মজার ব্যাপার হচ্ছে ক্যারিবীয় এই ব্যাটসম্যানের দুটি সেঞ্চুরিই বাংলাদেশের বিপক্ষে। সেন্ট লুসিয়ার ড্যারেন স্যামি স্টেডিয়ামে বাংলাদেশে প্রথম ইনিংসে করা ২৩৪ রানের জবাবে ভালো শুরু করেও দ্বিতীয় দিন বিপদে পড়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সেখান থেকে দলকে পথ দেখিয়ে শক্ত অবস্থানে নিয়ে গেছেন মেয়ার্স।
১০০ থেকে ১৩২ রানের মধ্যে ৪ উইকেট হারানো ক্যারিবীয়রা পঞ্চম উইকেট হারায় ২৪৮ রানে। জার্মেইন ব্ল্যাকউডের সঙ্গে ১১৬ রানের জুটি গড়েন মেয়ার্স। যেখানে তার অবদান ৬০ রান। এরপর জশুয়া দা সিলভার সঙ্গে ৯২ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়ে দ্বিতীয় দিন শেষ করেন মেয়ার্স। ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্কোরকার্ডে জমা হয়েছে ৫ উইকেটে ৩৪০ রান, লিড দাঁড়িয়ে গেছে ১০৬ রানের।
১৮০ বলে ১৫টি চার ও ২টি ছক্কায় মেয়ার্স অপরাজিত আছেন ১২৬ রানে, যা তার টেস্ট ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেরা ইনিংস। তাকে দারুণ সঙ্গ দেওয়া উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান দা সিলভা ১০৬ বলে খেলে ৩টি চারে ২৬ রান করে অপরাজিত আছেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের হাতে থাকা বাকি ৫ উইকেটে ১০০ রানের লিড হলেও বাংলাদেশের জন্য ম্যাচটি কঠিন হয়ে যাবে। প্রথম টেস্টের মতো এই টেস্টেও ইনিংস হারের শঙ্কায় পড়ে যেতে হবে সাকিব আল হাসানের দলকে।
দলকে শক্ত অবস্থানে পৌঁছে দেওয়ার পথে মেয়ার্স দায়িত্বশীল থাকলেও রক্ষণাত্মক ছিলেন না। সেঞ্চুরির দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেও বাউন্ডারি মারতে একবারের জন্য ভাবেননি তিনি। মেয়ার্স তখন ৯১ রানে, ৯৪তম ওভারটি করতে আসেন শরিফুল ইসলাম। প্রথম বলটি কেবল দেখে খেলেন মেয়ার্স, এরপর মুহূর্তেই তার ব্যাটে ঝড়। দ্বিতীয় বলে ২ রান নেওয়ার পর শরিফুলকে পরপর এক চার ও এক ছক্কা মেরে ১৫০ বলে সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন মেয়ার্স।
এর আগে বিনা উইকেটে ৬৭ রান নিয়ে দ্বিতীয় দিন শুরু করেন স্বাগতিকদের আগের দিনের দুই অপরাজিত ব্যাটসম্যান ক্রেইগ ব্রাথওয়েট ও জন ক্যাম্ববেল। উদ্বোধনী জুটিতে এদিন আরও ৩৩ রান যোগ করেন করেন তারা। শরিফুলের বলে আউট হওয়ার আগে ৪৫ রান করেন ক্যাম্ববেল।
দলীয় ১৩১ রানে মেহেদী হাসান মিরাজের বলে ব্রাথওয়েট আউট হলে দিক হারায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ৫১ রান করা ক্যারিবীয় অধিনায়কের বিদায়ের পরের ওভারে দুই উইকেট তুলে নেন খালেদ আহমেদ। ডানহাতি এই পেসারের শিকারে পরিণত হন ২২ রান করা রেমন রেইফার ও শূন্য রানে ফেরা এনক্রুমা বনার। বাংলাদেশের পক্ষে খালেদ ও মিরাজ ২টি করে উইকেট নিয়েছেন। একটি উইকেট পেয়েছেন শরিফুল।