মাটির ব্যাংক থেকে ডিজিটাল সেভিংস: বিকাশ যেভাবে বদলে দিচ্ছে আর্থিক ব্যবস্থাপনা
বন্দরনগরী চট্টগ্রামে বসবাসকারী গৃহিণী শামসুন নাহার অন্য অনেক নারীর মতোই গৃহস্থালির খরচ থেকে একটি অংশ বাঁচিয়ে নিয়মিত সঞ্চয়ের চেষ্টা করেন। বহুদিন ধরেই তিনি এই সঞ্চয় করে আসছিলেন পরম যত্নে আগলে রাখা মাটির ব্যাংকে। তবে গত কয়েক বছরে তিনি অভ্যস্ত হয়ে উঠেছেন ডিজিটাল জীবনযাপনে, যা পরিবর্তন এনেছে তার সঞ্চয়ের অভ্যাসেও। অনলাইন ও ফেসবুক শপে কেনাকাটার পাশাপাশি দৈনন্দিন বিভিন্ন কেনাকাটাও করেন ডিজিটাল পেমেন্টে, বিশেষ করে বিকাশ-এর মাধ্যমে।
"কয়েক মাস আগে বিকাশ-এর মাধ্যমে একটি বিল দিতে গিয়ে লক্ষ্য করলাম সপ্তাহে মাত্র ২৫০ টাকাও জমানো যাচ্ছে বিকাশ অ্যাপের মাধ্যমে। দেখা মাত্রই মনে ধরলো বিষয়টা, কারণ প্রতি সপ্তাহে মোটামুটি এই অঙ্কের টাকাই জমাই মাটির ব্যাংকে। তাই সময় নষ্ট না করে এক বছর মেয়াদি একটি সাপ্তাহিক ডিপিএস খুলে ফেলি বিকাশ অ্যাপে," বলছিলেন নাহার।
কিন্ডারগার্টেন পড়ুয়া দুই সন্তানের এই মা ডিপিএস খোলার কারণ সম্পর্কে বলেন, "বাচ্চারা বড় হয়ে যাচ্ছে, তাই তাদের রুম নতুন করে সাজানোর জন্যই মূলত বিকাশ অ্যাপের মাধ্যমে একটি ব্যাংকে ডিপিএসটি খুলেছি।"
বিকাশ অ্যাপের এই উদ্ভাবনী সেবার প্রতি গ্রাহকদের আগ্রহই প্রমাণ করে কীভাবে ডিজিটাল আর্থিক সেবাগুলো নাহারের মতো সাধারণ মানুষদের দৈনন্দিন আর্থিক ব্যবস্থাপনাকে সহজ করে দিয়ে সঞ্চয় বৃদ্ধিতে সহায়তা করছে।
দেশের শীর্ষ এমএফএস প্রতিষ্ঠান বিকাশ তার প্ল্যাটফর্মে বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মাসিক ডিপিএস সেবা নিয়ে আসে ২০২১ সালে, আর সাপ্তাহিক ডিপিএস সেবা উন্মুক্ত করে এই বছরের প্রথমার্ধে। এখন পর্যন্ত গ্রাহকরা বিকাশ অ্যাপের মাধ্যমে চার ব্যাংক ও এক আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ২৭ লাখের বেশি মাসিক ও সাপ্তাহিক ডিপিএস খুলেছেন।
ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো হলো – ব্র্যাক ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, সিটি ব্যাংক এবং আইডিএলসি ফাইন্যান্স।
বিকাশ অ্যাপে ডিপিএস খোলার এই প্রবণতা আর্থিক খাতে ডিজিটাল প্রযুক্তির সন্নিবেশের মাধ্যমে একটি ক্যাশবিহীন জীবনধারার দিকে এগিয়ে যাওয়ার ইঙ্গিত দেয়। আর এই পরিবর্তনে প্রযুক্তি-নির্ভর তরুণরাই নেতৃত্ব দিচ্ছেন, যা সমাজের অন্যদের মাঝেও প্রভাব বিস্তার করছে।
বিকাশের শক্তিশালী অ্যাপ, আধুনিক প্রযুক্তি, শীর্ষস্থানীয় ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সাথে সংযোগ, প্রয়োজনীয় সব আর্থিক সেবা এক প্ল্যাটফর্মে নিয়ে আসা, গ্রাহকবান্ধব অ্যাপ ইন্টারফেস-সহ বিভিন্ন বিষয় সব পেশার মানুষকে বিকাশ-এর প্রতি আস্থা অর্জনে সহায়তা করেছে।
বর্তমানে বিকাশ অ্যাপে দুটি বাণিজ্যিক ব্যাংক– ঢাকা ব্যাংক ও ব্র্যাক ব্যাংক– এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইডিএলসি ফাইন্যান্স-এ ২৫০ টাকা থেকে শুরু করে ৫,০০০ টাকা পর্যন্ত সাপ্তাহিক ডিপিএস খোলা যাচ্ছে। বিকাশ-ই বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো ডিজিটাল পদ্ধতির এই সাপ্তাহিক ডিপিএস নিয়ে এসেছে। সমাজে সকল পেশার মানুষদের সহজে সঞ্চয় করার সুযোগ করে দেওয়ার জন্যই বিকাশ এই সেবা নিয়ে এসেছে।
বিকাশে যেভাবে খোলা যায় সাপ্তাহিক ডিপিএস
বিকাশ গ্রাহকেরা সাপ্তাহিক ডিপিএসে পাঁচ ধরনের কিস্তিতে অর্থ জমা রাখতে পারবেন। কিস্তিগুলো হচ্ছে— ২৫০ টাকা, ৫০০ টাকা, ১,০০০ টাকা, ২,০০০ টাকা ও ৫,০০০ টাকা। এসব সেভিংসের মেয়াদ ৬ মাস বা ১২ মাস।
নতুন ডিপিএস খুলতে প্রথমেই বিকাশ অ্যাপের হোমস্ক্রিন থেকে 'সেভিংস' আইকনে ক্লিক করতে হবে। তখন 'নতুন সেভিংস খুলুন' নামে একটি অপশন আসবে। সেটিতে ক্লিক করে সেভিংসের ধরন থেকে 'সাধারণ ডিপিএস' অপশন বেছে নিতে হবে। এরপর সঞ্চয়ের মেয়াদ ৬ মাস বা ১২ মাস বাছাই করে টাকা জমার ধরনে 'সাপ্তাহিক' এবং টাকার পরিমাণে প্রতি মাসে গ্রাহক যে পরিমাণ টাকা জমাতে ইচ্ছুক, সেটি নির্বাচন করতে হবে।
পরের ধাপে আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও ব্যাংকের তালিকা থেকে গ্রাহকরা পছন্দ অনুযায়ী আইডিএলসি ফাইন্যান্স, ব্র্যাক ব্যাংক বা ঢাকা ব্যাংক থেকে যেকোনো একটি নির্বাচন করবেন। এরপর সেভিংসের নমিনি–সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় তথ্য দিতে হবে। তারপর ডিপিএস-এর বিস্তারিত দেখে এবং নিয়ম ও শর্তাবলি ভালোভাবে পড়ে, বুঝে সম্মতি দিতে হবে।
সবশেষে গ্রাহকের বিকাশ অ্যাকাউন্টের পিন নম্বর দিয়ে স্ক্রিনের নিচের অংশ ট্যাপ করে ধরে রাখলেই সেভিংসের আবেদন সম্পন্ন হবে। প্রক্রিয়াটি সফলভাবে সম্পন্ন হলে বিকাশ ও ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে চলে আসবে নিশ্চিতকরণ মেসেজ। একটি বিকাশ অ্যাপ থেকে একাধিক ডিপিএস খুলতে পারবেন যেকোনো গ্রাহক।
বিকাশ অ্যাকাউন্টে প্রয়োজনীয় ব্যালেন্স থাকা সাপেক্ষে নির্দিষ্ট তারিখে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সঞ্চয়ের টাকা যুক্ত হয় ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে। ডিপিএস-এর মেয়াদ পূর্ণ হয়ে যাওয়ার পর বিকাশ অ্যাপেই মুনাফাসহ মূল টাকা পেয়ে যাবেন গ্রাহক। এই টাকা কোনো খরচ ছাড়াই ক্যাশ আউট করতে পারবেন গ্রাহক। তবে জরুরি প্রয়োজনে মেয়াদপূর্তির আগেই কেউ চাইলে ডিপিএস সেবাটি বন্ধ করতে পারবেন। বিকাশ অ্যাপ থেকেই তা করা যাবে।
ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা থেকে শুরু করে দৈনিক বা সাপ্তাহিক মজুরিভিত্তিক পেশাজীবী, চাকরিজীবী, কৃষক, গৃহিণী, শিক্ষার্থী, এমনকি প্রবীণ নাগরিকরাও খুব সহজে কাগজপত্রের ঝামেলা এড়িয়ে বিকাশ অ্যাপে ডিপিএস খুলছেন। এই ডিপিএস খুলতে প্রয়োজন হয়না কোনো ব্যাংক অ্যাকাউন্টেরও।