জাদুঘরের ৭২ লাখ টাকা নিয়ে ফাঁকা ফ্রেম পাঠালেন শিল্পী!
ডেনমার্কের আলবর্গ শহরে জাদুঘর কর্তৃপক্ষের দেওয়া ৫৩৮,০০০ ড্যানিশ ক্রোনার (৮৪,০০০ ডলার, যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৭২ লাখ) আত্মসাৎ করেছেন জেনস হ্যানিং নামক জনৈক শিল্পী। কিন্তু এই বিপুল পরিমাণ টাকা নিয়ে তিনি পালিয়ে যাননি কিংবা গা ঢাকাও দেননি। এর বদলে জাদুঘরকে ফেরত দিয়েছেন দুখানা ফাঁকা ফ্রেম! শিল্পীর দাবি, তার এই কাজ আসলে একটি 'কনসেপচুয়াল আর্টওয়ার্ক।'
বিষয়টি আরেকটু খোলাসা করা যাক। গল্পের মূল নায়ক, জেনস হ্যানিং একজন ড্যানিশ শিল্পী। ২০১১ সালে 'অ্যান এভারেজ ড্যানিশ অ্যানুয়াল ইনকাম' শিরোনামে একটি শিল্পকর্ম তৈরি করেন তিনি, যেখানে একটি ছবির ফ্রেমভর্তি ছিল ক্রোন (ড্যানিশ মুদ্রা) ব্যাংকনোট। এর আগে 'অ্যান এভারেজ অস্ট্রিয়ান অ্যানুয়াল ইনকাম' শিরোনামে একই শিল্পকর্মের প্রাথমিক সংস্করণের তৈরি করেছিলেন তিনি।
আলবর্গ শহরের কুনস্টেন মিউজিয়াম অব মডার্ন আর্টস কর্তৃপক্ষ হ্যানিংকে তার এই দুটি শিল্পকর্মের প্রতিরূপ তৈরির দায়িত্ব দেয়। উদ্দেশ্য ছিল, জাদুঘরে 'ওয়ার্ক ইট আউট' শীর্ষক প্রদর্শনীতে ছবি দুটি প্রদর্শন করা। কর্মজীবন ও শ্রমের ভবিষ্যত সম্পর্কিত বিষয় তুলে ধরার লক্ষ্যে, গত ২৪ সেপ্টেম্বর থেকে কুনস্টেন জাদুঘরে শুরু হয়েছে এই প্রদর্শনী।
কুনস্টেন জাদুঘরের পরিচালক, ল্যাস অ্যান্ডারসন জানান, হ্যানিং তার আগের দুটি শিল্পকর্ম তৈরি করতে ব্যাংক থেকে টাকা ধার নিয়েছিলেন। তাই জাদুঘর কর্তৃপক্ষ এবার নিজস্ব রিজার্ভ থেকে তাকে টাকা ধার দিতে রাজি হয়। তার কাছ থেকেই জানা যায়, 'দ্য এ্ভারেজ ড্যানিশ অ্যানুয়াল ইনকাম' নামক ছবিটিতে ছিল ৩২৮,০০০ ক্রোনার। এবং অস্ট্রিয়ান ফ্রেমে ছিল ২৫,০০০ ডলার। কিন্তু প্রদর্শনীর আগেরদিন শিল্পকর্মগুলো ডেলিভারি নেওয়ার পর, প্যাকেট খুলে ফাঁকা ফ্রেম ছাড়া আর কিছুই পাননি তারা।
তবে জাদুঘর কর্তৃপক্ষকে একটি ইমেইল পাঠাতে ভুলেননি হ্যানিং! ইমেইলে তিনি জানান, পুরনো কাজ পুনঃনির্মাণের চাইতে নতুন কিছু সৃষ্টি করেই আনন্দ পেয়েছেন তিনি। হ্যানিং তার এই শিল্পকর্মের নাম দিয়েছেন 'টেক দ্য মানি অ্যান্ড রান'।
অ্যান্ডারসন জানান, এই ব্যাপারে এখনই পুলিশের কাছে যেতে ইচ্ছুক নন তিনি। জাদুঘরের সাথে চুক্তি অনুযায়ী, হ্যানিংকে ২০২২ সালের ১৪ জানুয়ারির মধ্যে পাওনা টাকা ফেরত দিতে হবে।
পরিচালক বলেন, "আমরা টাকাপয়সায় সমৃদ্ধশালী জাদুঘর নই। জাদুঘরের রক্ষণাবেক্ষণের টাকা থেকে তাকে ধার দেওয়া হয়েছিল। আমাদের প্রত্যাশা, টাকাটা আমরা ফেরত পাবোই।"
কিন্তু শিল্পী জানিয়ে দিয়েছেন, এই টাকা ফেরত দেওয়ার কোনো ইচ্ছাই তার নেই; এবং এর পরিণাম নিয়েও তিনি চিন্তিত নন!
"আমার মনে হয়না, আমি টাকা চুরি করেছি। আমি একটা নতুন শিল্পকর্ম তৈরি করেছি। আমরা যা পরিকল্পনা করেছিলাম, সেগুলোর চাইতে এটা দশ কিংবা একশো গুণ ভালো কাজ!" বলেন হ্যানিং।
ইতিমধ্যেই জাদুঘর কর্তৃপক্ষ হ্যানিংয়ের পাঠানো খালি ফ্রেমগুলো প্রদর্শনীতে ঝুলিয়েছে। ফ্রেমের পাশেই সাঁটানো আছে হ্যানিং এর ইমেইল, যেখানে তিনি এই 'কনসেপচুয়াল আর্টওয়ার্ক' এর কারণ ব্যাখ্যা করেছেন। শিল্পকর্মটি মূল্যায়ন বা সমালোচনা করার সুযোগও থাকছে।
হ্যানিং জানান, তার এই শিল্পকর্ম সিরিজ আকারে আসার কোনো সম্ভাবনা নেই।
"কারও যদি খুব বেশি টাকা থাকে, তাহলে সে টাকা দিতে পারে। আমার দরজা খোলাই আছে!" হাসিমুখে বলেন হ্যানিং।
- সূত্র: সিএনএন ও দ্য আর্ট নিউজপেপার