টাঙ্গাইলে তালিপাম গাছে ‘মরণফুল’
টাঙ্গাইলের সার্কিট হাউসে রোপনকৃত তালিপাম গাছে 'মরণফুল' ফুটেছে। গাছটি ২০১২ সালের ১৮ জুন তৎকালীন জেলা প্রশাসক এম বজলুল করিম চৌধুরী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্যের বাসা থেকে এনে রোপন করেছিলেন। ৯ বছর পর এই তালিপাম গাছে ফুল ফুটেছে।
শনিবার সরেজমিনে দেখা যায়, তালিপাম গাছ দেখতে অনেকটা তাল গাছের মতোই। ঝড়ে হেলে না পড়ার জন্য গাছের নিচে রড নিয়ে খাঁজা তৈরি করা হয়েছে। আকাশ থেকে বৃষ্টি পড়ছে আর তালিপাম গাছের ফুল থেকে মৌমাছি ও ভোমর ওড়াউড়ি করছে। বারবার ফুলের পরশ বা ফুল থেকে মধু নেওয়ার চেষ্টা করছে মৌমাছি।
করোনাভাইরাস প্রতিরোধে কঠোর বিধিনিষেধের কারণে সার্কিট হাউসে তেমন কাউকে দেখা যায়নি। তবে পাশে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের কয়েকজন গাড়িচালক তাদের গাড়ি রক্ষণাবেক্ষণ করছেন। তারা এই গাছের সঠিক নামও বলতে পারেননি।
ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচারের তথ্য অনুযায়ী, পৃথিবীর কোথাও আর বুনো পরিবেশে তালিপাম গাছ দেখা যায় না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে থাকা শেষ তালিপাম গাছটিও ফুল দিয়ে মারা যায় ২০১০ সালে। সেই গাছের ফল থেকেই চারা তৈরি করা সম্ভব হয়েছে।
১৮১৯ সালে ভারতের পূর্বাঞ্চলে তালিপাম গাছের সন্ধান পেয়েছিলেন ব্রিটিশ উদ্ভিদবিজ্ঞানী উইলিয়াম রক্সবার্গ। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুলার রোডের পাশে ১৯৫০ সালে আরেকটি গাছ শনাক্ত করেন অধ্যাপক এম সালার খান।
সে সময় পশ্চিমবঙ্গের বীরভূমে আরেকটি গাছ ছিল। সেই গাছে ১৯৭৯ সালে ফুল আসে। শতবর্ষী সেই গাছে হঠাৎ ফুল দেখে স্থানীয়রা চমকে যান। 'ভূতের আছর' ভেবে ফল ধরার আগেই গাছটি কেটে ফেলেন তারা।
ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচার ১৯৯৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গাছটিকে বুনো পরিবেশে বিশ্বের একমাত্র তালিপাম গাছ হিসেবে ঘোষণা করে। গাছটি লাগানো হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্মের আগে। ২০০৮ সালে এই গাছে ধরে 'মরণফুল'। জীবনচক্র মেনে ফুল থেকে ফল হয়; ২০১০ সালে মারা যায় গাছটি। তবে মৃত্যুর আগে দিয়ে যায় অনেক ফল।
টাঙ্গাইলের নেজারত ডেপুটি কালেক্টর (এনডিসি) দীপ ভৌমিক বলেন, 'গাছটি সাবেক জেলা প্রশাসক এম বজলুল করিম চৌধুরীর সময় লাগানো। আমি যতটুক জানি, ৯৯ বছরের আগে ফুল ধরে না। কিন্তু এই গাছে অনেক আগেই ফুল ধরেছে। রোপন করার ৯ বছরে ফুল দিয়েছে।'
টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক ড. মো. আতাউল গনি বলেন, 'গাছে দুই দিন আগে ফুল ফুটেছে। ধারণা করা হচ্ছে হাউব্রিড হওয়ার কারণে এত তাড়াতাড়ি ফুল ফুটল। গাছটি একবার ফুল দেওয়ার পর মারাও যাবে।'