পানির নিচে বোতলে মিলল ৯৫ বছরের পুরনো বার্তা
যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান অঙ্গরাজ্যের জেনিফার ডওকার পেশাগত কারণে নৌকায় চষে বেড়ান। মিশিগানের পানির তলদেশে যে হাজারও রহস্য লুকিয়ে আছে, সে কথা তার অজানা নয়। তবু যখন একটি কাঁচের বোতল আর ১৯২৬ সালে তাতে লেখা এক বার্তা তার হাতে এসে পড়ল, জেনিফারের বিষ্ময়ের অন্ত থাকল না!
'নটিকাল নর্থ ফ্যামিলি অ্যাডভেঞ্চার' নামক একটি প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী জেনিফার ডওকার। পর্যটক বা অধিবাসীদের জন্য শিপরেক ট্যুর, স্নোর কেলিং, স্কুবা চার্টারস, প্রাইভেট চার্টারস ইত্যাদির ব্যবস্থা করে থাকে এ প্রতিষ্ঠান। শুক্রবার মিশিগানের চেবোয়গান নদীতে স্কুবা ডাইভিং করছিলেন তিনি। নৌকা 'ইয়াঙ্কি সানশাইন' এর কাঁচের তলদেশের জানালা পরিষ্কার করতে গিয়ে সবুজ রঙের ভাঙা একটি কাঁচের বোতল খুঁজে পান তিনি।
প্রথমে সাধারণ বোতল ছাড়া আর কিছু মনে না হলেও শীঘ্রই জেনিফারের চোখে পড়ে বোতলের ভেতরে কিছু একটা লেখা রয়েছে।
বোতলটির দুই-তৃতীয়াংশ পানি দিয়ে ভরা ছিল এবং বোতলের মুখ আটকানোর জন্য ব্যবহৃত কর্ক বা ছিপিটির একটি অংশ দেখা যাচ্ছিল। তবে সিল নষ্ট হয়ে যাওয়ায় মুখটি খোলাই ছিল।
কায়দা করে বোতলের ভেতরের বার্তা লেখা কাগজটি বাইরে আনার পর জানলেন, সেটি লেখা হয়েছিল ১৯২৬ সালের নভেম্বরে। তাতে লেখাঃ "যে ব্যক্তি এই বোতলটি খুঁজে পেয়েছে সে কি এই কাগজটি চেবোয়গান, মিশিগানের জর্জ মরোকে ফিরিয়ে দেবে এবং তাকে খুলে বলবে যে এটি কোথায় পাওয়া গেছে?"
জেনিফারের সহযোগী রব হ্যামার ফ্রিজারে রেখে বার্তা লেখা কাগজটি প্রথমে শুকানোর পরামর্শ দেন।
চেবোয়গান একটি ছোট শহর এবং এ শহরে একই নামের অনেকেই আছেন, জেনিফার তাই তার প্রতিষ্ঠানের ফেসবুক পেজে বোতলটির একটি ছবি পোস্ট করেন। তিনি ভেবেছিলেন, কারো না কারো নজরে ঠিক পড়বে পোস্টটি।
তার ধারণাতেও ছিল না, এই পোস্ট 'ভাইরাল' হয়ে যাবে! প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত জেনিফারের পোস্টটি এক লাখের অধিক শেয়ার হয়, পোস্টটির নিচে ৬ হাজারের বেশি মন্তব্য এসে জমা হয়। শেষ পর্যন্ত বোতলটি জর্জ মরোর কাছে ফিরিয়ে দেয়া গেছে কি না তা জানতে চান বহু মানুষ।
এত মানুষের সাড়ায় ছোট একটা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিচালনাকারী এবং তিন সন্তানের 'সিংগেল মাদার' জেনিফার পড়ে যান চিন্তায়। তার কাছে অত সময় কোথায় চিঠির সেই লোককে খুঁজে বের করার!
তার চিন্তা অবশ্য বেশিক্ষণ স্থায়ী হলো না। দু'দিন বাদে বাবা দিবসের দিনই জর্জ মরোর মেয়ে মিশেল প্রিমাউয়ের কাছ থেকে খোঁজ আসল জেনিফারের ঠিকানায়।
মিশেল সামাজিক মাধ্যমে সক্রিয় নন। তবু ঠিকই তার এক পরিচিত জেনিফারের পোস্টের ব্যাপারে তাকে অবগত করেন।
মিশেলের জন্মের অন্তত ২০ বছর আগে লেখা হলেও সে নোটটি যে তারই বাবার হাতে লেখা তা চিনতে তাকে একটুও বেগ পেতে হয়নি।
তিনি জানান, নভেম্বর তার বাবা জর্জের জন্ম মাস। হয়তো তিনি সে সময় ১৭ কিংবা ১৮ বছরের তরুণ হয়ে থাকবেন যে নিছক খেয়ালের বশে উত্তর মিশিগানের ঠান্ডা জলে নোট লেখা বোতলটি ছুঁড়ে দিয়েছিলেন। জন্মদিনের দিনই জর্জ এ কাজ করে থাকবেন বলে তার মেয়ের অনুমান।
মিশেল জানান, তার বাবা সব সময়ই কিছুটা সংবেদনশীল ছিলেন। একবার এক লেকে পারিবারিক ভ্রমণের সময়ও তিনি বোতলের ভেতর বার্তা লিখে ছুঁড়ে মারেন।
১৯৯৫ সালেই মারা গেছেন জর্জ মরো। কিন্তু এ ঘটনা অনেকগুলো স্মৃতি তাজা করে তুলেছে বলে তার মেয়ে উল্লেখ করেন।
জেনিফার এই বোতল এবং বার্তাটি জর্জের মেয়েকে ফিরিয়ে দিতে চাইলেও তিনি সেটি গ্রহণ করেন নি। বরং তার মত হলো, যিনি পানির তলদেশ থেকে এটি খুঁজে পেয়েছেন তার কাছেই এটি রেখে দেয়া উচিত।
- সূত্র- সিএনএন