ভেড়ায় তৈরি ‘লাভ’ চিহ্ন: লকডাউনে আটকে পড়ে প্রিয়জনের প্রতি মেষপালকের ব্যতিক্রমী শ্রদ্ধাঞ্জলি
অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসে এসে লকডাউনে আটকা পড়েছিলেন মেষপালক বেন জ্যাকসন। লকডাউনের কারণে নিজের প্রিয় আন্টির শেষকৃত্যানুষ্ঠানেও যোগ দিতে পারেননি তিনি। তাই প্রিয় মানুষটির কথা স্মরণ করে এবং তার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের উদ্দেশ্যে ভেড়া দিয়েই একটি লাভ-চিহ্ন তৈরি করেছেন জ্যাকসন।
জ্যাকসনের বাড়ি অস্ট্রেলিয়ার গায়রা শহরে। তার প্রিয় আন্টি দুই বছর ধরে ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই করার পর সম্প্রতি মৃত্যুবরণ করেছেন। আন্টির জীবনের অন্তিম মুহূর্তে তার পাশে থাকার জন্য জ্যাকসন যেতে পারেননি ব্রিসবেনে।
'দুর্ভাগ্যবশত, তিনি আর লড়াইটা চালিয়ে যেতে পারলেন না। এমন মুহূর্তে নিজেকে খুব অসহায় মনে হয়, কারণ আপনি জানেন না কী করবেন! বিশেষত, কোভিডের সময়ে সীমান্ত বন্ধ থাকায় মানুষ নিরুপায়। প্রিয়জনের শেষ মুহূর্তেও পাশে থাকার ভাগ্য অনেকের হয় না। এটা মেনে নেওয়া খুব কঠিন,' বলেন জ্যাকসন।
তিনি জানালেন, ভেড়া দিয়ে হৃদয়াকৃতি বা লাভ চিহ্ন তৈরি করার ব্যাপারটা হুট করেই তার মাথায় এসেছিল। তার ভেড়াগুলো গর্ভবতী হওয়ায়, বাড়তি পুষ্টি দেওয়ার জন্য সেগুলোকে 'পরিপূরক খাদ্য' খাওয়াচ্ছিলেন তিনি। তখনই এই আইডিয়া পান।
এই লাভ চিহ্ন বানাতে তাকে অন্তত তিন-চারবার চেষ্টা করতে হয়েছে বলেও জানান জ্যাকসন, 'প্রথমবার যখন চেষ্টা করলাম, এটাকে মনে হচ্ছিল কোনো বাজে ইমোজির মতো। আমার আন্টি ডেব যেমন হাস্যরসবোধ সম্পন্ন ছিলেন, তাতে তার জন্য ওরকম একটা হৃদয় বানানোর কথা ভাবাই যায় না!'
ভেড়া দিয়ে হৃদয়াকৃতি বানানোর পর ড্রোনের মাধ্যমে এর ভিডিও ধারণ করা হয়। তারপর সেটি ব্রিসবেনে তার পরিবারের কাছে পাঠানো হয়, যাতে আন্টির শেষকৃত্যের দিন সিমন ও গারফুঙ্কেলে'র 'ব্রিজ ওভার ট্রাবলড ওয়াটার' গানের ভিডিও হিসেবে বাজানো যায়।
'যখন আমি চূড়ান্ত ভিডিওটা দেখলাম, মনে হচ্ছিল, হ্যাঁ, এর মাধ্যমে সত্যিই নিজের অনুভূতি প্রকাশ করতে পেরেছি। এ রকম একটা ভিডিও তার জন্য পাঠাতে পেরে আমার ভালো লাগছে। তিনি বেঁচে থাকলে নিশ্চয়ই এটির দারুণ প্রশংসা করতেন,' বলেন জ্যাকসন।
জ্যাকসন আরও জানালেন, তিনি গতবারের খরার সময় প্রথম ভেড়া দিয়ে এই শিল্পকর্ম শুরু করেন। তিনি বুঝতে পারেন, মাটিতে একটা আকৃতি এঁকে, ভেড়াগুলোকে সে অনুযায়ী জড়ো করতে পারবেন।
এর আগেও জ্যাকসন তার ভেড়া দিয়ে বিশালাকৃতির এবিসি লোগোর মতো অন্যান্য কিছু প্রতিকৃতি তৈরি করেছিলেন। তবে তিনি জানান, এবারের শিল্পকর্ম শুধুই তার আন্টির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের উদ্দেশ্যে ছিল।
জ্যাকসন বলেন, 'আমি রবিনসন ক্রুশো নই, এটা জানি। শুধুমাত্র লকডাউনে আটকা পড়ে যাওয়ায় এই কাজ করছি। এ এক চ্যালেঞ্জিং সময়। আমার এই ভেড়ার শিল্পকর্ম দেখে যদি একজন মানুষের মুখেও হাসি ফোটে, তা জেনেও আমার আন্টি ডেব অনেক গর্বিত হতেন। অনলাইনে আসলে সেরকম প্রতিক্রিয়াই পেয়েছি। এখন অনেক মানুষই খুব কঠিন সময় পার করছে; তাদেরও একটু আনন্দের প্রয়োজন আছে।'
-
সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান