মাইকেল ব্যাল্ডিনি ও তার 'ডিমশিল্প' !
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের এই যুগে অনেকেই পরিচিত 'ছবি শেয়ার'- এর জনপ্রিয় মাধ্যম ইনস্টাগ্রামের সাথে। অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম- গুলোর চেয়ে কিছুটা আলাদা এই অ্যাপটি শুধুই ছবি এবং ভিডিও শেয়ার করার মাধ্যম।
ছবি- ই যেন শব্দহীন যোগাযোগের বিমূর্ত প্রতীক – এই কথাটিই জীবন্ত ভাবে ধরা দেয় বিশ্বের নানা শিল্পী, চিত্রগ্রাহকের ছবির মাধ্যমে। গহীন অরণ্যের বা মরুভূমির ছবি থেকে শুরু করে ভ্রমণের ছবি, রং -তুলিতে আঁকা শৈল্পিক ছবি, পরিচিত অপরিচিত নানা শিল্পের ছবি, দেশী-বিদেশী শিল্পী, গায়ক, অভিনেতার দৈনন্দিন ছবি পর্যন্ত কিসের ছবি নেই এখানে, সবকিছুর-ই সন্ধান মেলে এই মাধ্যমটিতে। ব্যতিক্রমী কোনো শিল্প বা ছবি আলোড়ন তুলে প্রায়ই।
এরকমই একজন আলোড়ন তোলা মানুষ মাইকেল ব্যাল্ডিনি এবং তার ডিম দিয়ে করা শিল্পকর্ম।
ডিমশিল্প বা ডিম দিয়ে করা শিল্পকর্ম, শুনতে কিছুটা অদ্ভুত শোনালেও তার তৈরি শিল্পের ছবি দেখলেই সুস্পষ্ট ধারণা পাওয়া যাবে। মাটি, কাঁসা, লোহা দ্বারা বিভিন্ন প্রাণী, ব্যক্তি বস্তুর আকৃতি দাঁড় করানো যায়। এ ধরণের শিল্পের সাথেই আমরা পরিচিত, দেখে আসছি অহরহ।
ডিমের মতো বস্তু দ্বারা কি তা সম্ভব? সম্ভব হলেও কিভাবে সম্ভব? কিংবা কতোটুকুই নিখুঁত বা জীবন্ত হতে পারে এমন কোনো শিল্প এ ধরণের প্রশ্ন মনে আসবে খুব স্বাভাবিক ভাবেই। কোনো খাদ্যবস্তু থেকেও এমন একটি ব্যতিক্রমধর্মী ধারার বাস্তব রূপ দেওয়া যায়, সর্বসাধারণের চিন্তার বাইরের এই কাজটিই করেছেন এই তরুণ।
মিশেল ব্যাল্ডিনি ২২ বছর বয়সী এক তরুণ। জন্মসূত্রে তিনি আমেরিকান। আমেরিকান মা এবং ইতালীয়ান বাবার পরিবারে জন্ম মাইকেলের। আমেরিকার 'মেক্সিকো সিটি' অঙ্গরাজ্যের প্রান্ত ঘেঁষা টেক্সকোকো শহরে জন্ম তার। বেড়ে ওঠাও এই একই শহরেই। বর্তমানে মেডিসিন নিয়ে পড়াশোনা করছেন এই তরুণ।
অদ্ভুত ও অসাধারণ শিল্পচর্চাটির শুরু যেভাবে
তার সাথে কথা বলে জানা যায়, আজ থেকে প্রায় ৩ বছর আগে শুরু হয় তার এই শিল্পচর্চা। কিভাবে শুরু হয়? হ্যাঁ, অবশ্যই হুট করে নয়, কোনো কিছু দেখে কৌতূহলের উদয় হওয়ায় এবং সেই থেকে অনুপ্রাণিত হয়েই শুরু। একদিন মাইকেল খেয়াল করেন, একটি ভাজা ডিম দেখতে কিছুটা 'ইয়িন-ইয়াং' প্রতীকের মতো দেখাচ্ছে।
ইয়িন-ইয়াং মূলত চীনা দর্শনের একটি প্রতীক, যা বর্ণনা করে, পৃথিবীতে বিপরীত ব্যাপার সমূহ কোনো না কোনো ভাবে পরস্পরের সাথে সম্পর্ক যুক্ত, এবং একটি অপরটির উপর নির্ভরশীল। মিশেলের এই প্রতীক ও দর্শনের উপর আগ্রহ ছিল আগে থেকেই।
এবং হঠাত একদিন ভাজা ডিমের মধ্যে এই ধরণের আকৃতি দেখতে পাওয়ায়, নিজেই একদিন এই আকৃতি দিতে চেষ্টা করেন। বিস্ময়ের সাথে মাইকেল খেয়াল করেন, তিনি বেশ সফল ভাবেই ডিমের মধ্যে প্রতীকটির আকৃতি ফুটিয়ে তুলতে পেরেছেন।
সেই থেকেই শুরু হয় এই শিল্পের যাত্রা। কিসের প্রতিকৃতি তার ওপর নির্ভর করে ২০ মিনিট- ২ঘন্টা সময় লাগে এগুলো তৈরি করতে। জেনে নেয়া যাক তার এই শিল্প সম্পর্কে এবং সেইসাথে দেখে নেয়া যাক এই অসাধারণ শিল্পকর্মের নমুনা স্বরূপ কিছু ছবি।
ফুল, মানচিত্র, স্থাপত্য, চিত্রকর্ম, প্রাণী, নানান ধরণের খাবার বা কোনো চলচ্চিত্রের দৃশ্য – কি ঠাঁই পায়নি তার হাতে তৈরি আকৃতি গুলোতে। নানা জিনিসের আকৃতি প্রদানের কাজটি তিনি করে থাকেন মূলত একটি ফ্রাইং প্যানের উপরে।
বেশিরভাগ মানুষকে কাগজে কলমে মানচিত্র আঁকতেও বেগ পেতে হয়। কিন্তু মাইকেলের হাতের ছোঁয়ায় ভাজা ডিমের মধ্যেও মানচিত্রের আকৃতি অবিশ্বাস রকম নিঁখুত ভাবে ফুঁটে ওঠে।
শুধু বিশ্ব মানচিত্র- ই নয় , আফ্রিকা মহাদেশ বা দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের মতো জটিল গঠণের মানচিত্র ও বেশ সাবলীল ভাবে একে ফেলেছেন তিনি ডিম দিয়েই।
ডিসি কমিক্সের জোকার মুভিটির মাধ্যমে জোকার চরিত্রটি বেশ জনপ্রিয় বিশ্বজুড়ে। জোকার চরিত্রটিও আমরা এই শিল্পীর ক্যানভাস তথা ফ্রায়িং প্যানে খুঁজে পাই।
ডাচ চিত্রশিল্পী ভিনসেন্ট ভ্যান গঘের জগত বিখ্যাত চিত্রকর্ম "দ্য স্টারি নাইট" ও এই শিল্পী অবলীলায় ডিম দিয়ে একে ফেলেছেন ফ্রায়িং প্যানেই!
তুমুল দর্শকপ্রিয় 'HBO' এর টিভি সিরিজ 'গেইম অফ থ্রোন্সের' কথা আমরা কে-ই বা না জানি! সিরিজটি না দেখে থাকলে জনপ্রিয়তার কারণে সবাই হয়তো শুনেছি কিংস ল্যান্ডিং এর সিংহাসন তথা 'থ্রোন' এর জন্য রক্তক্ষয়ী ইতিহাসের এই সিরিজের কথা। এই বিখ্যাত 'থ্রোন' ও জায়গা পেয়েছে এই শিল্পীর চিত্রকর্মে।
মানচিত্র, স্থাপত্য বা চিত্রকর্ম ছাড়াও বিখ্যাত অনেক ব্যক্তির প্রতিকৃতিও ফুটিতে তুলেছেন মাইকেল তার চিত্রকর্মে।
মাইকেল ব্যাল্ডিনি তার এই শিল্পকর্মকে 'Eggshibit' নাম দিয়েছেন। 'Eggs' ও "Exhibit" থেকেই মূলত এই নামকরণ। তিনি একজন ক্লিনিকাল সাইকোলজির শিক্ষার্থী, ভবিষ্যতে মানুষের মনোজগৎ নিয়ে কাজ করার ইচ্ছা আছে তার। তার দৈনন্দিন জীবনের নানা উপকরণ নিয়েই এই শিল্পকর্মগুলো সৃষ্টি করেন তিনি। 'the_eggshibit' নামক ইনস্টাগ্রাম একাউন্টে তার এরকম আরও অনেক শিল্পকর্মের ছবি আছে।