মানুষের রক্তনালিতে বেড়ে উঠল মাশরুম!
পৃথিবীতে নানা ধরনের পাগলাটে মানুষ থাকেন, যারা অদ্ভুত বিষয় নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাতে ভালোবাসেন। সম্প্রতি ডাক্তাররা এমন এক ব্যক্তির সন্ধান পেয়েছেন, যিনি নিজের শিরার ভেতর ইনজেকশনের মাধ্যমে ম্যাজিক মাশরুম ঢুকিয়েছেন!
কন্সালটেশন-লিয়াজন সাইকিয়াট্রি অ্যাকাডেমির জার্নালে এই কেস রিপোর্ট উঠে আসে। চিকিৎসকরা ৩০ বছর বয়সী ওই ব্যক্তির নাম-পরিচয় গোপন রেখেছেন। তারা ওই ব্যক্তিকে 'মি. এক্স' বলে সম্বোধন করে জানান, তিনি মানসিকভাবে অসুস্থ এবং আফিমের নেশা ও ডিপ্রেশন থেকে বাঁচতে নিজের রক্তে ম্যাজিক সরাসরি মাশরুম প্রবেশ করান।
আরও জানা যায়, ওই ব্যক্তি দীর্ঘদিন ধরে বাইপোলার ডিসঅর্ডারে ভুগছিলেন এবং ডাক্তারের দেওয়া ওষুধ খাওয়া বন্ধ করে দেন। এর পরিবর্তে তিনি নিজেই 'সিলোসাইবিনে'র ভেষজ প্রভাব খুঁজতে শুরু করেন। সিলোসাইবিন এমন একটি ড্রাগ জাতীয় উপাদান, যেটি মাশরুমের প্রায় ২০০ প্রজাতির মধ্যে পাওয়া গেছে।
মি. এক্স একেই নিজের রোগমুক্তির উপায় হিসেবে ব্যবহার করতে শুরু করেন।
ডিপ্রেশন বা অন্য বিষাদগ্রস্ততার উপশম করতে বিভিন্ন মেডিক্যাল ট্রায়ালে এই উপাদানের কার্যকারিতা পাওয়া গেছে, কিন্তু তা শুধু এটি মুখ দিয়ে খাওয়া হলে। অথচ আমাদের এই অদ্ভুত গল্পের নায়ক মি. এক্সের মনে ছিল অন্য চিন্তা।
তিনি বারবার এই সাইকেডেলিক মাশরুম জোগাড় করে, পানিতে সেদ্ধ করে চায়ের মতো বানানোর চেষ্টা করেন এবং তা এক ধরনের কটন ফিল্টারের পর ইনজেকশনের মাধ্যমে নিজের শিরায় প্রবেশ করান।
যদিও মাশরুম সেদ্ধ করা প্রক্রিয়ার উদ্দেশ্য ছিল মাশরুমকে মেরে ফেলা, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তা হয়নি। মাশরুম চা ইনজেকশনের মাধ্যমে নেওয়ার দুদিন পরই মি. এক্স শরীরে দুর্বলতা অনুভব করেন এবং রক্তবমি করতে থাকেন। আস্তে আস্তে তার শরীরে জন্ডিস, ডায়েরিয়া ও বমিভাবের সব লক্ষণ দেখা দিলে পরিবারের লোকেরা তাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যান।
শুরুতে মি. এক্স নিজের সম্পর্কে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। কিছু টেস্টের পর দেখা যায়, তার লিভার ও কিডনি ঠিকমতো কাজ করছে না এবং শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো অকেজো হয়ে পড়ছে। এরপর ডাক্তাররা তার এসব অসুস্থতার আসল কারণ আবিষ্কার করে চমকে ওঠেন।
আসল ব্যাপার হচ্ছে, মি. এক্সের শরীরে থাকা সেই মাশরুম তার রক্তের ভেতর বেড়ে উঠতে শুরু করেছিল। হাসপাতালে ভর্তির সময়ে তার অসংলগ্ন কথাবার্তার কারণ রক্তের মধ্যে বেড়ে ওঠা সেই 'সিলোবি কিউবেনসিস' ফাঙ্গাসই কি না, তা স্পষ্ট বোঝা না গেলেও উল্লিখিত শারীরিক অবনতির জন্যে নিঃসন্দেহে এটিই দায়ী বলে ডাক্তাররা জানান।
২২ দিন ভেন্টিলেটরে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখে কয়েকবার শরীরের রক্ত পরিশুদ্ধ করানোর পর মি. এক্স শঙ্কামুক্ত হন। কিন্তু এখনো তাকে শরীরের ভেতরে মাশরুমের পুনর্জন্ম রোধে অ্যান্টিফাঙ্গাল ড্রাগ নিতে হচ্ছে।
মি. এক্সের এই ভয়ঙ্কর ও অদ্ভুত কেস একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আমাদের সামনে এনেছে; তা হলো, শুধুমাত্র ইন্টারনেট ঘেটে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে নিজে নিজে চিকিৎসা শুরু করা বা ওষুধ খাওয়া কখনো কখনো ভয়ানক পরিণতি ডেকে আনতে পারে।
- সূত্র: অডিটি সেন্ট্রাল