হিমবাহ গলে ভরে যাচ্ছে পাহাড়ী হ্রদ, সংখ্যাও বাড়ছে আশঙ্কাজনক হারে
প্রায় জমে যাবার মতোই হিমশীতল, অদ্ভুত স্বচ্ছ নীল জলের হিমবাহ হ্রদের জন্ম হয় হিমবাহ গলা পানি দিয়ে। এইসমস্ত হ্রদ পাহাড়ী অনেক জনপদের খাবার পানি ও কৃষি কাজে সেচের পানির উৎস হিসেবে ব্যবহৃত হয়। কিন্তু হ্রদের তলদেশ পাহাড়ী পাথরে গড়া। কোন কারণে যদি পাথর নড়েচড়ে সরে যায়, তবে এই পানির উৎসই হয়ে উঠতে পারে ভয়ানক। প্রবল পানির তোড়ে ভেসে যেতে পারে জনপদগুলো।
সম্প্রতি বিশ্বের হিমবাহ হ্রদগুলো নিয়ে প্রথমবারের মতো একটি ডাটাবেজ তৈরি করেছেন গবেষকরা। এই গবেষনার ফলাফল বলছে, গত ১ দশকে বিশ্বজুড়ে এধরণের হ্রদের সংখ্যা বেড়েছে ৫০ শতাংশ। অর্থাৎ ক্রমেই গলে যাচ্ছে হিমবাহের বরফ। আসা পরিবর্তন থেকেই এমনটা হচ্ছে বলে জানান তারা।
গবেষণাটি পরিচালনা করেন ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালগারির ভূতত্ত্ববিদ ড্যান শাগার আর তার দল। গত ৩১ আগস্ট নেচার ক্লাইমেট চেঞ্জ নামের একটি সাময়িকীতে এই গবেষণাটি প্রকাশ করেন তারা।
তবে প্রাথমিক পর্যায়ে তাদের লক্ষ ছিল হিমালয়সহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কয়েকটি হিমবাহ হ্রদ নিয়ে কাজ করবেন তারা। এজন্য তারা স্যাটেলাইট এর তোলা ছবি থেকে জলাশয়ের উপস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেন। পরে এই বিশ্লেষণের জন্য কম্পিউটার প্রোগ্রাম তৈরি শেষ হলে তারা দেখলেন এর মাধ্যমে শুধু ঐ একটি এলাকা নয়, বরং পৃথিবীর অধিকাংশ গ্লেসিয়ার নিয়েই কাজ করা যেতে পারে।
ড. ড্যান শাগার নিউ ইয়র্ক টাইমসকে বলেন, 'এটা আমাদের গবেষণার কাঠামোর জন্য আসলে খুব বড় কোন পরিবর্তন ছিল না। বিদ্যমান কম্পিউটার প্রোগ্রাম দিয়েই এই বিশ্লেষণ করতে পেরেছি আমরা, কেবল উপাত্তের সংখ্যা বেড়েছে।'
এই গবেষণার জন্য নাসার ল্যান্ডস্যাট থেকে আড়াই লাখের মতো ছবি সংগ্রহ করেন ড্যানের দল। এরপর এই ছবিগুলোকে গুগল আর্থে দিয়ে হিমবাহসংশ্লিষ্ট ছবিগুলো আলাদা করে নেন তারা।
ড. শাগার ও তার সহযোগীরা পরিমাপ করে বের করলেন যে কীভাবে হিমশীতল এইসমস্ত হ্রদের সংখ্যা এবং আকার ১৯৯০ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ধীরে ধীরে কেবল বেড়েছেই। দলটি আবিষ্কার করেছে যে, এরকম হিমবাহ গলা হ্রদের সংখ্যা প্রায় ৯ হাজার ৪০০টি থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪ হাজার ৩০০টিরও বেশি, যা প্রায় ৫০ শতাংশেরও বেশি। আর এর সঙ্গে সঙ্গে আগে থেকেই বিদ্যমান বিদ্যমান হ্রদের পানির পরিমাণ বেড়ে উপচে পড়ার পরিস্থিতিও বেড়েছে।
শাগারের গবেষণা দলের সদস্যরা বলেন, এই পরিস্থিতি খুবই ভয়ানক রূপ নিতে পারে। এর ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন পাহাড়ের ঢালুর দিকে বসবাসরত জনপদ। এর মধ্যে আছে নেপাল, পেরু ও আইসল্যান্ডের মতো দেশগুলো।
এর মধ্যে কিছু কিছু অঞ্চল কার্যকর পদক্ষেপ নিয়েছে। যেমন ২০১৬ সালে নেপালের মাউন্ট এভারেস্টের নিকটবর্তী একটি হিমবাহ হ্রদ ইমজা হ্রদের পানি ১১ ফিট পর্যন্ত কমিয়েছে দেশটির প্রশাসন।
ড. শাগার বলেন, 'আমরা আশা করব এই গবেষণার প্রতিবেদন থেকে বিভিন্ন দেশের কর্তৃপক্ষরা সচেতন হবেন এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।'
সূত্র: দ্য নিউইয়র্ক টাইমস