আরও প্যারেন্টাল কন্ট্রোল যুক্ত হচ্ছে ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামে, যথেষ্ট নয় বলছেন বিশেষজ্ঞরা
ইনস্টাগ্রাম ও ফেসবুকের মূল মালিকানা কোম্পানি - মেটা তাদের সামাজিক মাধ্যমগুলোয় নতুন কয়েকটি প্যারেন্টাল সুপারভিশন টুল ও প্রাইভেসি ফিচার যোগ করতে চলেছে। টিনেজারদের মানসিক স্বাস্থ্যে সামাজিক মাধ্যমের বিরূপ প্রভাব নিয়ে যখন তুমুল সমালোচনা চলছে, তার মধ্যেই এ উদ্যোগ নেওয়া হলো। তবে এরমধ্যে কিছু ফিচার ব্যবহার করতে হলে– অপ্রাপ্তবয়স্কদের সম্মতির মাধ্যমেই তার প্রোফাইলের সাথে যুক্ত হতে পারবেন মা-বাবারা। ফলে এগুলো কতোটা কার্যকর হবে, তা নিয়ে এখনই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
নতুন ফিচারের আওতায়, কোনো টিনেজার কাউকে ব্লক করলে- তাদের একটি নোটিশ পাঠাবে ইনস্টাগ্রাম। সেখানে অভিভাবককে তাদের একাউন্টে 'পর্যবেক্ষকের' ভূমিকা দেওয়ার জন্য টিনেজারকে অপশন দেওয়া হবে। অর্থাৎ, প্রোফাইলে মা-বাবার সম্পৃক্ততার বিষয়ে শিশু-কিশোরদের মনোযোগ আকর্ষণ করাটাই হবে এর উদ্দেশ্য।
টিনেজার ব্যবহারকারী সম্মতি দিলে, তার মা-বাবা দৈনিক ওই একাউন্ট ব্যবহারের সময়সীমা বেঁধে দিতে পারবেন। জানতে পারবেন, কারা তার সন্তানের ফলোয়ার, এবং সে কাদের ফলো করছে।একইসঙ্গে, কতোটা সময় তাদের সন্তান ইনস্টাগ্রামে কাটাচ্ছে, পাবেন সে ধারণাও। তবে অপ্রাপ্তবয়স্কের ম্যাসেজের কন্টেট দেখতে পারবেন না তারা।
এই ফিচারটি নতুন হলেও, গত বছরেই এই বয়সীদের জন্য পারিবারিক তদারকির টুল যুক্ত করেছিল ইনস্টাগ্রাম। যাতে অভিভাবকরা সন্তানকে ভার্চুয়াল জগতে সুষ্ঠু দিক-নির্দেশনা দিতে পারেন। তবে মূল সমস্যা এখনও দূর হয়নি। সেটা হলো- টিনেজারদের অনুমতির দিকটি। তারা এই ফিচারে সাইন-আপ না করলে, অভিভাবকরা নজরদারি করতে পারবেন না। তাছাড়া, কতজন টিনেজার এতে সম্মতি দিয়েছে, সে সম্পর্কিত কোনো তথ্য প্রকাশ করেনি মেটা।
ফিচারটি ঐচ্ছিক রেখে মেটা দাবি করছে, 'টিনেজারদের নিরাপত্তার সাথে তাদের স্বাধীনতার ভারসাম্য' রাখার চেষ্টা করছে তারা। একইসঙ্গে সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারের বিষয়ে সন্তানদের সাথে মা-বাবার আলোচনাকে উৎসাহ দিচ্ছে।
কোন পরিবার যদি এই অপশনে যুক্ত থাকে, তাহলে মা-বাবা দেখতে পারবেন তাদের যেসব বন্ধুবান্ধব, পরিচিতজন রয়েছেন- তাদের মধ্যে কতজন তাদের সন্তানের প্রোফাইলে কমন ফ্রেন্ড হিসেবে রয়েছেন। পরিচিতদের বাইরে নতুন কাউকে ফলোয়ার লিস্টে দেখলেই অভিভাবকরা একটি সতর্কবার্তা পাবেন। কারণ, ওই ব্যক্তিকে হয়তো তারা বা তাদের সন্তান কেউই ব্যক্তিজীবনে চেনেন না। আর এ ধরনের অপরিচিতরাই সাধারণত টিনেজারদের বিপথগামী হতে উৎসাহ দেয়।
মেটা আরও বলেছে, 'এর ফলে এসব একাউন্টের সাথে তাদের সন্তান কীভাবে পরিচিত হলো, সেটাও অভিভাবকরা বুঝতে পারবেন। এনিয়ে তার সাথে আলোচনা করতে পারবেন।'
যদিও এসব পদক্ষেপকে শাক দিয়ে মাছ ঢাকার শামিল বলে উল্লেখ করেছেন কমন সেন্স মিডিয়ার প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী জিম স্টেয়ার। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, 'স্বাস্থ্য-সহ শিশুর সার্বিক ভালো থাকাকে তাদের ব্যবসার মডেল যত ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে – তা সমাধানের কোনো উদ্যোগ নেই নতুন ফিচারগুলোয়। তাই শিশু-কিশোরদের সুরক্ষায় আমাদের জাতীয় প্রাইভেসি আইন দরকার।'
এদিকে ইনস্টাগ্রামের বিদ্যমান প্যারেন্টাল টুল ম্যাসেঞ্জারে যুক্ত করছে মেটা। এতে টিনেজাররা কতোটা সময় ম্যাসেজিং অ্যাপটি ব্যবহার করছে, বা তাদের বার্তাবন্ধুর তালিকায় কারা রয়েছে তা জানতে পারবেন অভিভাবকরা। এক্সেস পাবেন প্রাইভেসি সেটিংসেও। তবে কখন কার সাথে তাদের সন্তান চ্যাট করছে, সেটা জানতে পারবেন না।
যেসব পরিবারে মা-বাবা এরমধ্যেই সন্তানের ভার্চুয়াল বিচরণের সাথে যুক্ত, সেখানে এই ফিচার বেশ ফলপ্রসূ হবে। কিন্তু, অধিকাংশ পরিবারেই বাস্তবতাটা ভিন্ন বলে জানাচ্ছেন গবেষকরা।
গত মাসে যুক্তরাষ্ট্রের সার্জন জেনারেল বিবেক মূর্তি সতর্ক করে বলেন, সামাজিক মাধ্যম শিশুদের জন্য নিরাপদ কিনা– এর স্বপক্ষে যথেষ্ট প্রমাণ নেই। এই বাস্তবতায় 'শিশুদের সুরক্ষায় অবিলম্বে পদক্ষেপ নিতে' প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
বার্তাসংস্থা অ্যাসোসিয়েট প্রেসকে মূর্তি বলেন, নিজেদের প্ল্যাটফর্মকে সুরক্ষিত করতে সামাজিক মাধ্যম কোম্পানিগুলো কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে, সে বিষয়টি তিনিও স্বীকার করেন, তবে তা যথেষ্ট নয়। যেমন, তাত্ত্বিকভাবে ১৩ বছরের কম বয়সী কোনো শিশুর সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারে ব্যান থাকলেও, কার্যত দেখা যায় তারা বয়সের বিষয়ে মিথ্যা তথ্য দিয়ে ইনস্টাগ্রাম, টিকটকসহ আরও অন্যান্য অ্যাপ ব্যবহার করছে। আর মা-বাবার অনুমতিও নিচ্ছে না।
এদিকে প্রযুক্তিও আমূল বদলাচ্ছে দিনকে দিন। আসছে নিত্যনতুন সব অ্যাপ। এর সাথে তাল মিলিয়ে মা-বাবারা সন্তানের অনলাইন বিচরণ নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন – এমনটা দুঃসাধ্য। প্রযুক্তির দ্রুত অগ্রগতির কারণেই, শিশুরা নিজেদের সম্পর্কে যেভাবে ভাবে, যেভাবে বন্ধুত্ব স্থাপন করে, বা বিশ্ব সম্পর্কে যে ধারণা রাখে – তাতে আসছে অবিশ্বাস্য পরিবর্তন। এগুলো আগের প্রজন্মের মানুষের জন্য উপলদ্ধি বা আয়ত্ত করা বেশ কঠিন।
মূর্তি বলেন, 'এই গুরুদায়িত্ব তারা অভিভাবকদের কাঁধে চাপাতে চায়, যা মোটেই ন্যায়সঙ্গত নয়'। মেটার সাম্প্রতিকতম পদক্ষেপের বিষয়েও তার দপ্তরে যোগাযোগ করে স্প্যানিশ গণমাধ্যম এল পাইস। তবে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য জানানো হয়নি।