করোনা মহামারির সময় মেধাবীরা অসুখী ছিল
কোভিড-১৯ মহামারির সময় কেউ মানসিকভাবে কেমন অনুভব করেছেন এর সঙ্গে ওই ব্যক্তির বুদ্ধিমত্তা কেমন তার সম্পর্ক আছে, সম্প্রতি 'জার্নাল অব পার্সোনালিটি'তে প্রকাশিত গবেষণায় এমন কথাই বলা হয়েছে।
গবেষণাটি বলছে মহামারি চলাকালীন বুদ্ধিমত্তায় এগিয়ে থাকা মানুষরা তাদের বিপরীত গোত্রীয় অর্থাৎ কম বুদ্ধিমত্তার মানুষদের থেকে কম সুখী ছিল। বেশি বুদ্ধিমত্তার মানুষ আধুনিক বিশ্বের সাথে খাপ খাইয়ে উঠতে পারে না, যা তাদেরকে অসুখী করে তোলে। গবেষণার নতুন তথ্যগুলো সুখ সম্পর্কিত 'সাভানা তত্ত্বের' ধারণাকে আরও শক্তিশালী প্রমাণ করেছে।
সাতোশি কানাজাওয়া ও তার সহকর্মীরা গবেষণাটির জন্য ব্রিটিশ সরকারের 'সরকারী শিশু উন্নয়ন' গবেষণার ৫১৭৮জন ব্যক্তির তথ্য বিশ্লেষণ করেন। সেইসঙ্গে ব্রিটিশ কোহর্ট গবেষণায় অংশ নেওয়া আরও ৪২২৩ জনের তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করেন।
গবেষণা দুটিতে অংশগ্রহণকারীরা তাদের শৈশবে বেশ কিছু বুদ্ধিমত্তার টেস্ট দিয়েছেন। তারা এখন নিয়মিতভাবে নিজেদের জীবনে সুখী কিনা, হলে কতোটুকু সুখী এ ধরনের তথ্য দিয়ে থাকেন। গবেষণাটিতে ২০২০ সালে করোনা মহামারি শুরুর প্রথমদিকে তাদের মানসিক তুষ্টি সংক্রান্ত তথ্য ছিল।
গবেষকরা দেখতে পান, পরিণত বয়সে কম মেধাবীদের তুলনায় বুদ্ধিমত্তায় এগিয়ে থাকা মানুষ সাধারণত বেশি সুখী থাকে। কিন্তু ২০২০ সালে, অর্থাৎ মহামারি শুরুর পর এই প্রবণতা বদলে যায়। মহামারি চলাকালীন সময়ে শৈশবে আইকিউ টেস্টে ৯০ এর বেশি স্কোর পাওয়া মানুষদের চেয়ে যারা ৯০ এর কম পেয়েছিল তারাই বেশি সুখী ছিল।
গবেষণাটি পরিচালনাকারীরা মনে করেন সুখ সম্পর্কিত 'সাভানা তত্ত্ব' তাদের এই গবেষণার ক্ষেত্রে অনেকটাই কার্যকারী। তত্ত্বটি বলছে, আধুনিক সময়ে ব্যক্তির সুখ শুধুমাত্র বর্তমান অবস্থার পর নির্ভরশীল নয়, এক্ষেত্রে ব্যক্তির পূর্বের অবস্থাও জড়িত থাকে। সুখের ওপর করা একাধিক গবেষণা সাভানা তত্ত্বকে সমর্থন করলেও, গবেষকরা মনে করছেন ভবিষ্যতে গবেষণার ক্ষেত্রে এর আরও অনেক নতুন বিষয় উন্মোচিত হবে।
কানাজাওয়া বলেন, " বিশাল জনগোষ্ঠীর ওপর তথ্য বিশ্লেষণ থেকে দেখা গেছে করোনা পূর্ববর্তী সময়তে অধিক বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন ব্যক্তিরা মেধাবী এইজন্য সুখী ছিলেন এমনটা না। তাদের সুখী থাকার পেছেনে কারণগুলো ছিল মেধায় এগিয়ে থাকার ফলে তাদের উপার্জন ও বিয়ে হওয়ার সম্ভাবনা বেশি ছিল। কিন্তু মহামারির সময় এসব মানুষের বেশিরভাগ প্রথমবারের মতো কম সুখী ছিলেন অন্যদের তুলনায়। অন্যদিকে করোনা মহামারিকালীন কম বুদ্ধিমত্তার মানুষদের আগের চেয়ে বেশী সুখী হতে দেখা যায়"।
তিনি আরও বলেন, "গবেষণাটি আমাদের আরও উপলব্ধি করতে শিখিয়েছে বেশি বুদ্ধিমত্তা সবসময় জীবনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে না"।