মেলিন্ডার আগে-পরেও আরো যেসব নারী এসেছেন বিল গেটসের জীবনে!
২০২১ সালের মে মাসে বিবাহবিচ্ছেদের ঘোষণা দেন বিশ্বের অন্যতম ধনী জুটি বিল গেটস ও মেলিন্ডা গেটস। বিয়ের ২৭ বছর পর তাদের এমন সিদ্ধান্ত চমকে দেয় বিশ্ববাসীকে, বিচ্ছেদের কারণ নিয়ে শোনা যায় নানা গুঞ্জন। তবে বিচ্ছেদের ঘোষণার পরপরই দুজনের সম্পত্তির ভাগবাঁটোয়ারার জন্য একটি চুক্তিপত্র স্বাক্ষর করেন এই বিখ্যাত জুটি। সে সময় বিল-মেলিন্ডার সম্মিলিত সম্পদের পরিমাণ ছিল ১৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, বাংলাদেশি মুদ্রায় যা ১১ লাখ ২০ হাজার ৬৯৪ কোটি টাকা!
২০২২ সালেও ১২৯ মিলিয়ন ডলার নেট সম্পত্তি নিয়ে ফোর্বসের শীর্ষ বিলিয়নিয়ার তালিকার ৪ নম্বরে রয়েছেন বিল গেটস। এদিকে নতুন বিলিয়নিয়ার হওয়া ২৩৬ জনের মধ্যে যে ৩৩ জন নারী রয়েছেন, তাদের একজন হলেন মেলিন্ডা। এই মুহূর্তে মেলিন্ডার সম্পদের পরিমাণ ৬.২ বিলিয়ন ডলার।
বিল-মেলিন্ডার হাই-প্রোফাইল বিচ্ছেদ নিয়ে এযাবত কম জল ঘোলা হয়নি। শোনা গিয়েছিল, বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছেন বিল গেটস। সেই আলোচনার ধারায় আবারও গণমাধ্যমের সামনে উঠে আসে বিল গেটসের আগেপরের প্রেমের সম্পর্কগুলো। মেলিন্ডা অ্যান ফ্রেঞ্চ ছাড়াও আর কোন কোন নারী ছিলেন মাইক্রোসফটের সহ-প্রতিষ্ঠাতার জীবনে?
হারিয়ে যাওয়া প্রেম!
বিল ও মেলিন্ডা যখন বিচ্ছেদের ঘোষণা দিলেন, তখন নতুন করে আলোচনার কেন্দ্রে আসেন বিল গেটসের সাবেক প্রেমিকা অ্যান এল. উইনব্লাড। উইনব্লাড নিজেও একজন মার্কিন বিজনেসওম্যান। আশির দশকে উইনব্লাডের সঙ্গে ডেট করতে শুরু করেন বিল গেটস। কিন্তু ১৯৮৭ সালে তাদের সম্পর্ক ভেঙ্গে যায়। বিল তখনই বিয়ের জন্য প্রস্তুত ছিলেন না বলে তাদের সম্পর্ক বিয়ে পর্যন্ত গড়ায়নি। তবে নব্বইয়ের দশকেও উইনব্লাডের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ বজায় রেখেছেন বিল গেটস। টাইম ম্যাগাজিনের দাবি, এমনকি মেলিন্ডার কাছে প্রেম প্রার্থনার আগেও নাকি উইনব্লাডের মতামত জানতে চেয়েছিলেন এই বিলিয়নিয়ার!
উইনব্লাডের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক চলাকালীন দুজনে প্রচুর ঘুরে বেড়িয়েছেন বলে জানা যায়। এমনকি প্রতি বছরই নর্থ ক্যারোলাইনায় উইনব্লাডের বিচ-হাউসে ছুটি কাটাতে যেতেন দুজনে। বিল গেটসের চেয়ে বয়সে পাঁচ বছরের বড় উইনব্লাড ১৯৯৭ সালে টাইম ম্যাগাজিনকে বলেন, "আমরা পুরো দুনিয়া ও আমাদের সম্পর্কে যার যার চিন্তাভাবনা শেয়ার করতাম। কিভাবে খুব অল্প বয়সেই আমরা এতকিছু অর্জন করে ফেলেছিলাম, একটা অ্যাডভেঞ্চার শুরু করেছিলাম এবং পরিচিত হয়ে উঠেছিলাম যা আমাদেরকে এই চমৎকার পৃথিবীর আলোচনার কেন্দ্রে এনে দিয়েছে, তা ভেবে দারুণ আনন্দিত হতাম আমরা।"
উইনব্লাড ২০১৫ সালে এডওয়ার্ড অ্যালেক্স ক্লাইন নামক একজন বেসরকারী বিনিয়োগকারীকে বিয়ে করেন। তিনি অভিনেতা কেভিন ক্লাইনের ভাই। তবে উইনব্লাডের সঙ্গে এখনো বিল গেটস তার বসন্তকালীন ভ্রমণে যান কিনা, তা জানা যায়নি।
দোভাষীর সাথে প্রেম?
২০১৫ সাল থেকে বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা ফাউন্ডেশনে কাজ করছেন শেলী ওয়াং। বাতাসে গুজব, এই সেই নারী যার কারণে মেলিন্ডার সঙ্গে বিচ্ছেদ ঘটেছে বিল গেটসের!
তবে সমালোচকদের কথার জবাবও দিয়েছেন শেলী ওয়াং। তিনি বলেন, "আমি ভাবতে পারিনি এত দ্রুত ও প্রবলভাবে এই গুজব ছড়িয়ে পড়বে। ২০২১ সালে ওয়াং এর বয়স ছিল ৩৬ বছর। চীনা যোগাযোগ প্ল্যাটফর্ম ওয়েইবোতে নিজের এ বক্তব্য প্রকাশ করেছিলেন তিনি। ওয়াং আরো লেখেন, "গত ২৪ ঘন্টায় যেসব গুজব ছড়িয়েছে তা মুছে দিতে যারা সহযোগীতা করেছেন, তাদের সবাইকে ধন্যবাদ।" অর্থাৎ, বিলিয়নিয়ার বিজনেস ম্যাগনেটের সাথে সম্পর্কে সরাসরি অস্বীকারই করেছেন ওয়াং।
তবে বিল-মেলিন্ডা তাদের বিচ্ছেদ নিয়ে একটি আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেওয়ার পরে ওয়াং একথা লেখেন। বিবৃতিতে এই বিলিয়নিয়ার জুটি বলেন, "গত ২৭ বছর ধরে আমরা তিনজন অসাধারণ সন্তানকে বড় করেছি এবং একটি ফাউন্ডেশন তৈরি করেছি যা বিশ্ব জুড়ে মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে কাজ করে। ফাউন্ডেশনের জন্য আমরা একসাথে কাজ করে যাবো। কিন্তু জীবনের পরবর্তী ধাপে আমরা একত্রে এগিয়ে যেতে পারবো বলে আমরা আর বিশ্বাস করি না।"
হলিউড তারকার সঙ্গ
হলিউড তারকা এলিজাবেথ শ্যু'কে আমরা দেখতে পাই দ্য কারাতে কিড এবং ব্যাক টু দ্য ফিউচার টু চলচ্চিত্রে। গেল মার্চে এলিজাবেথ ও বিল গেটকে একসঙ্গে দেখা যায় একটি টেনিস ম্যাচে। অস্কার মনোনয়নপ্রাপ্ত এই ৫৮ বছর বয়সী অভিনেত্রীকে নিয়ে বিল গেটস প্রায়ই টেনিস ম্যাচ উপভোগ করতে যান বলে দাবি ফোর্বসের। ১৯৯৪ সাল থেকে লেখক, পরিচালক ও প্রযোজক ফিলিপ গুগেনহাইমের সাথে সংসার করছেন এলিজাবেথ।
কোনো রহস্যময়ী প্রেমিকা ছিল কি?
মেলিন্ডার সাথে বিচ্ছেদের পর ব্যক্তিগত প্রেমের প্রসঙ্গে একেবারেই মুখে তালা দিয়েছেন বিল গেটস! কিন্তু চলতি বছরের মার্চে সিবিএস'কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মেলিন্ডা জানান, মাইক্রোসফটের একজন কর্মীর সাথে বিল গেটসের সম্পর্ক ছিল এবং তা নিয়ে তারা দুজন আলোচনা করে সমাধান করেছিলেন বটে। কিন্তু দুজনের মধ্যে বিশ্বাসটা আর ছিল না।
মেলিন্ডা বলেন, "এটা আসলে এক মুহূর্তে বা একটা কারণে ঘটেনি। দীর্ঘদিন যাবত চলতে চলতে এমন একটা সময় আসে যখন আমার মনে হয়, আমাদের সম্পর্কটা আর সুন্দরভাবে চলছে না এবং আমাদের মধ্যে আর বিশ্বাস বজায় নেই।"
সূত্র: সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট