অর্থবছরের প্রথম মাসে কৃষি ঋণ বিতরণ ৬০% কম
অর্থবছরের প্রথম মাসে (জুলাই) কৃষি ঋণ বিতরণ কম হয়েছে ৬০ শতাংশ। লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ হাজার ৩৬৫ কোটি টাকা। যার মধ্যে বিতরণ হয়েছে ৯৪২ কোটি টাকা। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
চলতি ২০২১-২০২২ অর্থবছরে কৃষি খাতে ২৮ হাজার ৩৯১ কোটি টাকা ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার। সে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাই শেষে সকল তফসিলি ব্যাংক ৯৪২ কোটি টাকা বিতরণে সক্ষম হয়েছে। জুলাই মাসে ঋণ বিতরণে ঘাটতি ১ হাজার ৪২৩ কোটি টাকা।
এছাড়া বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড (বিআরডিবি) ব্যক্তিগত ফান্ড থেকে কৃষিতে ও গ্রামীণ ঋণ বিতরণ হয়েছে ৫৬ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পাওয়া তথ্য অনুযায়ী জানা যায়, জুলাই মাসে কৃষিখাতে রাষ্ট্রায়ত্ত আট ব্যাংক ২৯৭ কোটি ৭১ লাখ টাকা বিতরণ করেছে, যার লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯২০ কোটি টাকা।
এছাড়া বেসরকারি ও বৈদেশিক কার্যক্রম পরিচালনাকারী ব্যাংকগুলো ৬৪৪ কোটি টাকা বিতরণ করেছে। এই (বেসরকারি ও বৈদেশিক) ব্যাংকগুলোর লক্ষ্যমাত্রা ছিল এক হাজার ৪৪৫ কোটি টাকা।
কৃষি খাতের উৎপাদন বৃদ্ধি ও কোভিড-১৯ প্রভাবমুক্ত রাখতে গত অর্থবছরে (২০২০-২১) সরকার ২৬ হাজার ২৯২ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল। তার বিপরীতে ২৫ হাজার ৫১১ কোটি টাকা বিতরণ করেছে । সুবিধাপ্রাপ্ত কৃষকের সংখ্যা ৩০ লাখ ৫৫ হাজার ১৬৬ জন। এরমধ্যে ১৬ লাখ নারী কৃষক ঋণ পেয়েছেন নয় হাজার ২৮৭ কোটি টাকা।
সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা যায়, কৃষিখাতে ঋণ আদায় অন্যান্য খাতের তুলনায় ভালো। এতে করে ব্যাংকগুলো এ খাতে ঋণ দিতে আগ্রহী। তবে অর্থবছরের প্রথম মাস হওয়ায় ঋণ লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় বেশ কিছুটা কম বিতরণ হয়েছে। এছাড়া কৃষকরা নতুন করে ঋণ পেতে আবেদন করছেন। আগামী মাস থেকে এ খাতের ঋণের প্রবাহ আরও বাড়বে।
এ বিষয়ে সিপিডির সম্মানীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, "কৃষি ঋণ সিজনের উপর ভিত্তি করে বিতরণ কম-বেশি হয়ে থাকে। তবে সরকার কৃষিখাতকে খুবই গুরুত্বসহকারে দেখছেন। এটা ভালো উদ্যোগ। কোভিডকালে প্রত্যাশার তুলনায় কম খাদ্য ঝুঁকির সম্মুখীন হতে হয়েছে। সেখানে আমাদের কৃষি খাত বড় অবদান রেখেছে"।
তিনি আরও বলেন, "ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে প্রকৃত কৃষকরাই যেন পান সেক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে। উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির জন্য বাণিজ্যকরণসহ প্রযুক্তি ব্যবহারে গুরুত্ব দিতে হবে। একইসঙ্গে এ খাতকে বৈচিত্রকরণে আরও ঋণ বাড়াতে হবে। তবে কৃষি ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে যদি কিছু শ্লথ থেকে থাকে সেক্ষেত্রে ঋণ বিতরণের বাঁধার কারণগুলো খুঁজে বের করতে হবে"।
সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের এক বিজ্ঞপ্তিতে চলতি অর্থবছরে (২০২১-২২) বিতরণকৃত কৃষি ঋণের সুদহার ৯ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৮ শতাংশ করা হয়েছে।
এদিকে ২৩ আগস্ট বাংলাদেশ ব্যাংকের এক বোর্ড সভায় করোনা মহামারিতে চলমান অর্থনৈতিক মন্দা থেকে কৃষকদের রক্ষা করতে নতুন করে তিন হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এই প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় ব্যাংক থেকে চার শতাংশ সুদে ঋণ নিতে পারবে কৃষক। এবং তফসিলি ব্যাংকগুলো এই প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে এক শতাংশ সুদে তহবিল পাবে।
এর আগে গত বছরের (২০২০) এপ্রিলে পাঁচ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ চালু করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর মধ্যে প্রায় ৯২ শতাংশ ঋণ বিতরণ হয়েছে। এখন কৃষকদের সহায়তার লক্ষ্যে নতুন এই প্রণোদনা প্যাকেজ চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।