আগামী বছর ৪৯.৮ লাখ মেট্রিক টন জ্বালানি আমদানির পরিকল্পনা সরকারের
সরকার ২০২১ সালে ৪৯.৮ লাখ মেট্রিক টন পেট্রোলিয়াম জ্বালানি আমদানির পরিকল্পনা করছে।
জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের এক সরকারি নথি অনুসারে, প্রস্তাবিত বিশাল আমদানির প্রায় ৫০ শতাংশ বা ২৪.৯ লাখ মেট্রিক টন সরকারিভাবে (জি-টু-জি) আলোচনার মাধ্যমে আটটি দেশ থেকে কেনা হবে এবং বাকি ৫০ শতাংশ খোলা দরপত্রের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক বাজার থেকে সংগ্রহ করা হবে।
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গত ১৬ সেপ্টেম্বরের বৈঠকে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের এ প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে।
পরিকল্পনা অনুসারে, পেট্রোলিয়ামের রাষ্ট্রীয় বিপণন সংস্থা বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) দুই ধাপে ৫০ শতাংশ বিভিন্ন পেট্রোলিয়াম জাতীয় পণ্য আমদানি করবে। প্রথম ধাপে জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত এবং দ্বিতীয় ধাপে জুলাই থেকে ডিসেম্বরে মধ্যে এ আমদানি করা হবে।
বিপিসি চেয়ারম্যান শামসুর রহমান জানান, সংস্থাটির প্রাক্কলন অনুসারে ২০২১ সালে দেশে প্রায় ৬১ লাখ মেট্রিক টন বিভিন্ন পেট্রোলিয়াম পণ্যের চাহিদা হবে।
এর মধ্যে, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ইস্টার্ন রিফাইনারিসহ দেশীয় উৎস থেকে বিপিসি প্রায় সাড়ে ১১ লাখ মেট্রিক টন পেট্রোলিয়াম পাবে বলে আশা করছে, ইউএনবিকে জানান তিনি।
কর্মকর্তারা বলছেন, বাংলাদেশ সরকারের দ্বিপক্ষীয় জি-টু-জি চুক্তির ধারাবাহিকতায় বিভিন্ন পেট্রোলিয়াম পণ্য- ডিজেল, জেট এ-১, অকটেন, ফার্নেস অয়েল এবং সামুদ্রিক জ্বালানি আমদানির জন্য বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন আটটি আউটসোর্সিং সংস্থাতে কোনো পরিবর্তন আনেনি বিপিসি।
বিভিন্ন দেশের সরকারি মালিকানাধীন সংস্থাগুলো হলো- মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কুয়েতের কেপিসি, মালয়েশিয়ার পিটিএলসিএল, সংযুক্ত আরব আমিরাতের ইএনওসি, চীনের পেট্রোচায়না ও ইউএনআইপিইসি, ইন্দোনেশিয়ার বুমি সিয়াক, থাইল্যান্ডের পিটিটিটি এবং পার্শ্ববর্তী ভারতের এনআরএল।
সরকারের ওই নথিতে দেখা যায়, কুয়েতের কেপিসি থেকে সর্বাধিক ১২.৩ লাখ মেট্রিক টন পেট্রোলিয়াম আমদানি করা হবে এবং এ তালিকায় দ্বিতীয় ও তৃতীয় বৃহত্তম সরবরাহকারী হিসেবে চীনের ইউএনআইপিইসি ও পেট্রোচায়না থেকে যথাক্রমে ২.৪ লাখ মেট্রিক টন ও ১.৪ লাখ মেট্রিক টন পেট্রোলিয়াম আমদানি হবে।
এছাড়া, ২০২১ সালে মালয়েশিয়ার পিটিএলসিএল থেকে প্রায় ২.৬ লাখ মেট্রিক টন, সংযুক্ত আরব আমিরাতের ইএনওসি থেকে ১.৬ লাখ মেট্রিক টন, ইন্দোনেশিয়ার বুমি সিয়াক থেকে ৩ লাখ মেট্রিক টন, থাইল্যান্ডের পিটিটিটি থেকে ১ লাখ মেট্রিক টন এবং ভারত থেকে ৬০ হাজার মেট্রিক টন পেট্রোলিয়াম আমদানি করা হবে।
বিপিসি কর্মকর্তারা জানান, আগামী বছর থেকে বিদেশ থেকে কোনো পেট্রোল এবং কেরোসিন আমদানি করবে না সরকার। এখন দেশের মধ্যে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি রিফাইনারি সংস্থা পেট্রোলিয়ামের এ দুটি উপাদান উৎপাদন করছে।
এর পরিবর্তে, বিপিসি আন্তর্জাতিক মেরিটাইম অর্গানাইজেশনের (আইএমপিও) মান প্রতিপালনের জন্য পেট্রোলিয়াম আমদানির এ তালিকায় সামুদ্রিক জ্বালানিকে নতুন আইটেম হিসেবে যুক্ত করেছে। তবে, সমুদ্রগামী জাহাজগুলোতে সরবরাহের জন্য সামুদ্রিক জ্বালানিতে ০.৫ শতাংশের কম সালফার থাকতে হবে।
বিপিসি চেয়ারম্যান বলেন, 'অতীতে দেশীয় উৎস থেকে সামুদ্রিক জ্বালানি সরবরাহ করেছি। তবে এখন আইএমপিও'র মানদণ্ড বজায় রাখতে বিদেশ থেকে তা আমদানি করতে হবে।'
বিপিসি তাদের প্রস্তাবে বলছে, চলতি ২০২০ সালের জন্য তারা সাড়ে ৩৩ লাখ মেট্রেক টন পেট্রোলিয়াম জ্বালানি আমদানির পরিকল্পনা করেছে।
বিপিসি জানায়, ২০২০ সালের মার্চ পর্যন্ত আমদানি ও সরবরাহ পরিস্থিতি সন্তোষজনক ছিল। কোভিড-১৯ মহামারির কারণে এপ্রিল থেকে মে মাসে দেশে জ্বালানির চাহিদা কমেছে। তবে, জুন থেকে চাহিদা ধীরে ধীরে বাড়ছে বলে সংস্থাটি জানায়।
বিপিসি উল্লেখ করেছে যে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক রুটে বিমান চলাচল বন্ধ থাকার কারণে জেট জ্বালানির চাহিদা যথেষ্ট পরিমাণে কমেছিল। তবে, এখন দেশীয় ও আন্তর্জাতিক রুটে পুনরায় বিমান চলাচল শুরুর পরে জেট জ্বালানির চাহিদা বাড়তে শুরু করেছে।