আবারও উপেক্ষিত স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাত
মহামারি চলাকালীন স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়ার প্রয়োজন ছিল। প্রথমটি রোগীর চাপে পর্যদুস্ত হয়, আর দ্বিতীয়টি এক বছরের বেশি সময় ধরে বন্ধ। তারপরও, চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের তুলনায় নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের শতাংশ হিসেবে এ দুই খাতে বরাদ্দ কমার চিত্র উঠে এসেছে, কমেছে জিডিপি'র বিচারেও।
অথচ, জিডিপি অনুপাতে এ দুই খাতে স্বাভাবিক ভাবেই বরাদ্দ বৃদ্ধির আশা করা হয়েছিল। কিন্তু, প্রস্তাবিত বাজেট দুদিক থেকেই ব্যর্থ হয়েছে। ফলে জিডিপি অনুপাতে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে বরাদ্দের দিক থেকে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম কম ব্যয়কারী দেশ হয়ে ওঠার অনাকাঙ্ক্ষিত স্থান অধিকার করলো বাংলাদেশ।
স্বাস্থ্যখাতে বাজেট প্রস্তাব করা হয়েছে মোট ৩২,৭৩১ কোটি টাকা, বা জিডিপি'র মাত্র ০.৯৫ শতাংশ, যা গেল বছরের সংশোধিত বাজেটের ১.০২ শতাংশের চেয়েও কম।
অথচ জাতিসংঘের বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) মানসম্মত স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতকরণে সদস্য দেশকে তাদের জিডিপির ন্যূনতম পাঁচ শতাংশ স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দের সুপারিশ করে।
স্বাস্থ্য খাতে জিডিপির শতাংশ অনুপাতে বরাদ্দের দিক থেকে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট কেবল পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের চাইতে উপরে আছে। অথচ, দ্বীপরাষ্ট্র মালদ্বীপ তার জিডিপির ৯ শতাংশ এখাতে ব্যয় করে।
কোভিড মহামারি হানা দেওয়ার পর থেকে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতের দুরাবস্থার চিত্র প্রকাশ পায়, তখন থেকেই দেশের বিশেষজ্ঞ ও অর্থনীতিবিদেরা জিডিপির ন্যূনতম ২ শতাংশ স্বাস্থ্যতে বরাদ্দের দাবি জানিয়ে আসছেন।
আগামী অর্থবছরে স্বাস্থ্য খাতে বাজেটের ৫.৪২ বরাদ্দের প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে যার পরিমাণ ছিল ৫.৮৪ শতাংশ।
একইভাবে, জিডিপির তুলনায় প্রস্তাবিত বাজেটে শিক্ষা খাতে সরকারি ব্যয়ের পরিমাণ কমেছে।
চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে জিডিপির মাত্র ২.০৯ শতাংশ শিক্ষায় বরাদ্দের জন্য নির্ধারিত করা হয়, কিন্তু প্রস্তাবিত বাজেটে তা কমে দাঁড়িয়েছে ২.০৮ শতাংশে।
সংশোধিত বাজেটে মূল বাজেটের ১২.২৮ শতাংশ বরাদ্দ পায় শিক্ষা খাত, প্রস্তাবিত বাজেটে যা নেমে এসেছে ১১.৯২ শতাংশে।
জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থা (ইউনেস্কো) কোন দেশের জিডিপির ৪-৬ শতাংশ শিক্ষা খাতে বরাদ্দের সুপারিশ করে।
তবে সার্বিক বিচারে নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ ১২ শতাংশ বেড়েছে, আর শিক্ষায় বেড়েছে ৮.৫ শতাংশ।