ই-কমার্স কেলেঙ্কারি: এবার ১,৩০০ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগ ফস্টারের বিরুদ্ধে
বিতর্কিত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ই-ভ্যালি, ই-অরেঞ্জ, আদিয়ান মার্ট, কিউ কম ও দালাল প্লাসকে পেমেন্ট গেটওয়ে (এসক্রো) সেবা দানকারী প্রতিষ্ঠান ফস্টার পেমেন্টসের বিরুদ্ধে প্রায় ১৩০০ কোটি টাকা বিদেশে পাচারের অভিযোগ পেয়েছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।
এ বিষয়ে তদন্ত করে ফস্টারের শীর্ষ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) কে চিঠি দিয়েছে বিএফআইইউ। বাংলাদেশ ব্যাংক ও সিআইডির একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
সিআইডির কর্মকর্তারা জানান, তারা ফস্টারের কর্মকর্তাদের খুঁজে পাচ্ছেন না। প্রতিষ্ঠানটির কোন কর্মকর্তা দেশে নেই বলে জানান তারা।
বিএফআইইউ এর একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ফস্টার ঠিক কি পরিমাণ টাকা পাচার করেছে, তা বিস্তারিত তদন্তের আগে বলা কঠিন। তবে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে প্রায় ১৩০০ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
'এ ধরণের প্রতিষ্ঠান টাকা পাচারের জন্য হুন্ডিসহ নানা অবৈধ পন্থার আশ্রয় নিয়ে থাকে। তবে অর্থপাচারের পুরো বিষয়টি আমরা তদন্ত করে দেখছি,' জানান তিনি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পেমেন্ট সিস্টেম বিভাগের জেনারেল ম্যানেজার মেজবাউল হক বলেন, ফস্টার বাংলাদেশ ব্যাংকের লাইসেন্স প্রাপ্ত নয়। পেমেন্ট গেটওয়ে সেবা প্রদানের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক নীতিমালা জারি করার আগে থেকেই কোম্পানিটি কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে।
ইভ্যালিসহ বিভিন্ন ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে গ্রাহকদের কাছ থেকে অগ্রিম মূল্য নেওয়ার পরও পণ্য ডেলিভারি না দেওয়ার অভিযোগে গত ৪ জুলাই এসক্রো সার্ভিস চালু করে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এ পদ্ধতিতে ক্রেতারা কোন ই-কমার্স কোম্পানিতে পণ্য অর্ডার করে মূল্য পরিশোধের পর তা পেমেন্ট গেটওয়ে সেবাদানকারী ফস্টারসহ বিভিন্ন কোম্পানির একাউন্টে জমা হয়। ই-কমার্স কোম্পানি ওই পণ্য ক্রেতাকে ডেলিভারি দেওয়ার পর তার ডকুমেন্ট দাখিল করার পর পেমেন্ট গেটওয়ে ক্রেতার পরিশোধ করা মূল্য ই-কমার্স কোম্পানির ব্যাংক একাউন্টে ট্রান্সফার করে।
এসক্রো সার্ভিস চালু হওয়ার পর থেকেই ফস্টারসহ বিভিন্ন পেমেন্ট গেটওয়েগুলোর কাছে বিপুল পরিমাণ অর্থ জমা হতে থাকে। বিভিন্ন গেটওয়ে থেকে সময়মত অর্থ না পাওয়ার অভিযোগও রয়েছে ই-কমার্স কোম্পানিগুলোর।
পেমেন্ট গেটওয়েগুলোর এমন আচরণ সম্পর্কে ই-কমার্স কোম্পানিগুলো বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কেও অবহিত করেছে বলে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানিয়েছেন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ও ডিজিটাল কমার্স সেলের প্রধান মো. হাফিজুর রহমান।
এদিকে, দেশের ই-কমার্স খাতে প্রতারণা রোধ করে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে নতুন আইন ও নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ গঠনের প্রয়োজন আছে কি-না তা পর্যালোচনা করতে ৯ সদস্যের আন্তঃমন্ত্রণালয় সাব-কমিটি গঠন করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
আগামী ৩০ দিনের মধ্যে কমিটি প্রচলিত বিভিন্ন আইন পর্যালোচনা করে নতুন আইন প্রণয়ন করার প্রয়োজনীয়তা কিংবা বিদ্যমান মানি লন্ডারিং অ্যাক্ট, ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন সংশোধন করে ই-কমার্স খাতের প্রতারণা রোধ করা সম্ভব কি-না, সে বিষয়ে পর্যালোচনা সহ সুপারিশ করবে।
কমিটিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি ছাড়াও আইন মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এটুআই, প্রতিযোগিতা কমিশন, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, বেসিস, এফবিসিসিআই ও ই-ক্যাবের প্রতিনিধিরা থাকবেন।
ই-কমার্স খাতে প্রতারণা রোধ ও খাতটিকে সুশৃঙ্খলভাবে পরিচালনার জন্য গত ২২ সেপ্টেম্বর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ ও ডিজিটাল ই-কমার্স আইন করার সিদ্ধান্ত নিয়ে পাঁচ দিনের মাথায় ১৬ সদস্যের আইন প্রণয়ন কমিটি গঠন করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
সোমবার ওই কমিটির প্রথম বৈঠক শেষে কমিটির আহ্বায়ক ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (আআইটি) এএইচএম সফিকুজ্জামান জানান, নতুন আইন ও পৃথক কর্তৃপক্ষ গঠনের আদৌ দরকার আছে কি-না, সাব কমিটি তা পর্যালোচনা করবে।
বিদ্যমান মানি লন্ডারিং অ্যাক্ট ও ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টসহ আরও যেসব আইন রয়েছে, সেসব আইনে সংশোধনী এনে তা ই-কমার্স খাতের সঙ্গে সমন্বয় করা যায় কি না, তা খতিয়ে দেখবে সাব-কমিটি।
এছাড়া, ই-কমার্স খাত নিয়ন্ত্রণে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে যে ডিজিটাল ই-কমার্স সেল রয়েছে সেটিকে আরও শক্তিশালী করার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিলে সেটি নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের পরিপূরক হবে কি না, তাও পর্যালোচনা করা হবে।
সার্বিক দিক বিচার বিশ্লেষণ ও পর্যালোচনা করে আগামী এক মাসের মধ্যে একটি প্রতিবেদন আইনি কমিটির কাছে জমা দেবে বলে জানান সফিকুজ্জামান ।
তিনি বলেন, 'সাব-কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ ও স্বতন্ত্র আইন প্রণয়ন বিষয়ে পরে পদক্ষেপ নেয়া হবে।'