করোনায় বিপুল রাজস্ব ঘাটতির মুখে বেনাপোল
চলতি বছরের প্রথম ১০ মাসে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫ হাজার ১৮৪ কোটি ৫২ লাখ টাকা। সেখানে আদায় হয়েছে ৩ হাজার ৪৪৯ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে রাজস্ব পিছিয়ে আছে এক হাজার ৭৩৪ দশমিক ৭৫ কোটি টাকা।
২০১৮-১৯ অর্থবছরে বেনাপোল কাস্টমস হাউজে ১ হাজার ১৪৫ কোটি টাকা রাজস্ব ঘাটতি ছিল। ওই অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়েছিল ৫ হাজার ১৮৫ কোটি টাকা। আদায় হয়েছিল ৪ হাজার ৪০ কোটি টাকা। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ হাজার ১৯৫ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। আদায় হয়েছিল ৪ হাজার ১৬ কোটি ২৪ লাখ টাকা। সেবারও লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে রাজস্ব ঘাটতি ছিল ১৭৯ কোটি ৬৪ লাখ টাকা।
দেশের সবচেয়ে বড় স্থলবন্দর যশোরের বেনাপোল। সরকারের সবচেয়ে রাজস্বও আদায় হয় এখান থেকে। বন্দরটি দিয়ে পণ্য আমদানি বেশি হয়। আর রপ্তানি হয় আমদানির চারভাগের একভাগ। চলতি ২০২০-২১ বছরের প্রথম ১০ মাসে আমদানি হয়েছে ৫ লাখ ৪৭ হাজার ৬৩৪ মেট্রিক টন। ২০১৯-২০ অর্থবছরে আমদানি করা হয় এক লাখ ৫৭ হাজার ৪২৮ দশমিক ১৭ মেট্রিক টন।
আর চলতি অর্থবছরে রপ্তানি হয়েছে এক লাখ ৬৫ হাজার ১৫৯ মেট্রিক টন। ২০১৯-২০ অর্থবছরে রপ্তানি করা হয় ২ লাখ ৩২ হাজার ৯৮২ মেট্রিক টন।
গত ৫ বছরে ভারত থেকে আমদানি হয়েছে ৮৮ লাখ ৮৯ হাজার ৮১১ মেট্রিক টন পণ্য। আর ভারতে রপ্তানি হয়েছে ১৮ লাখ ৭২ হাজার ২১০ মেট্রিক টন পণ্য।
বেনাপোল বন্দর দিয়ে আমদানি হওয়া পণ্যের মধ্যে রয়েছে- শিল্প কারখানায় ব্যবহৃত কাঁচামাল, তৈরি পোশাক, কেমিক্যাল, মেশিনারি যন্ত্রাংশ, সুতা ও বিভিন্ন ধরনের খাদ্যদ্রব্য। আর রপ্তানি পণ্যের মধ্যে- পাট ও পাটজাত পণ্য, মাছ, মেলামিন, তৈরি পোশাক ও বসুন্ধরা টিস্যু উল্লেখযোগ্য।
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন জানান, 'করোনার ছোবল এবং পণ্য ছাড়করণের ক্ষেত্রে বৈধ সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত না হওয়ায় আমদানি কমে যাওয়া একটি কারণ। এতে রাজস্ব ঘাটতি হচ্ছে। চাহিদা অনুপাতে বেনাপোল বন্দরের অবকাঠামো উন্নয়ন না হওয়া এবং উচ্চ শুল্ক হারের পণ্য আমদানি কমে যাওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে'।
যশোর চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সভাপতি মিজানুর রহমান খান জানান, 'চলতি অর্থবছরের শুরুতে মহামারি করোনায় নাকাল দেশের ব্যবসায়ী সমাজ। উচ্চ শুল্কযুক্ত পণ্য আমদানি কম হলে রাজস্ব কম আসবে এটাই স্বাভাবিক। বেনাপোল বন্দরে বার বার রহস্যজনক অগ্নিকাণ্ডে অনেক ব্যবসায়ীরা পুঁজি হারিয়ে পথে বসেছেন। বন্দর কোনো ক্ষতিপূরণ না দেওয়ায় অনেক আমদানিকারক বন্দর ছেড়েছেন।
উল্লেখ্য, যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়াতে দেশে স্থলপথে যে পণ্য আমদানি হয় তার ৭০ শতাংশ হয়ে থাকে বেনাপোল বন্দর দিয়ে। প্রতিবছর এ বন্দর দিয়ে প্রায় ৩৫ হাজার কোটি টাকার পণ্য আমদানি হয়ে থাকে। যা থেকে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আসতো।
জানা গেছে, প্রতিবছর বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারত থেকে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকার পণ্য আমদানি ও ৮ হাজার কোটি টাকার পণ্য রপ্তানি হয়। আমদানি পণ্য থেকে সরকারের প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয় হয়ে থাকে। তবে চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে এ লক্ষ্যমাত্রা ৬ হাজার ১৩৬ কোটি ৭২ লাখ টাকা।
ভারত-বাংলাদেশ ল্যান্ডপোর্ট ইমপোর্ট-এক্সপোর্ট কমিটির চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমান জানান, 'দেশের স্থলপথে আমদানি-রপ্তানির ৭০ শতাংশ হয় বেনাপোল দিয়ে। তবে কাঙ্ক্ষিত অবকাঠামো উন্নয়ন না হওয়ায় অনেকে এপথে বাণিজ্যে আগ্রহ হারাচ্ছেন। ফলে সরকারের রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হচ্ছে না। বন্দরের সক্ষমতা বাড়লে বেনাপোল দিয়ে সরকারের রাজস্ব দ্বিগুণ আদায় হতো'।
বেনাপোল স্থলবন্দরের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক (ট্রাফিক) আব্দুল জলিল বলেন, 'ইতোমধ্যে বেনাপোল বন্দর সম্প্রসারণে নতুন জায়গা অধিগ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়াও কয়েকটি আধুনিক পণ্যাগার নির্মাণ করা হয়েছে। সিসি ক্যামেরার জন্য বাজেট হয়েছে। এছাড়াও নিরাপত্তা বাড়াতে উঁচু প্রাচীরও নির্মাণ করা হয়েছে।'
বেনাপোল কাস্টমসের কমিশনার মো: আজিজুর রহমান জানান, 'আমরা ব্যবসায়ীদের বৈধ সুবিধা বাড়ানোর পক্ষে। ইতিমধ্যে বন্দর কর্তৃপক্ষকে অবকাঠামো সুবিধা বৃদ্ধির জন্য চিঠি দিয়েছি। বন্দরের সক্ষমতা বাড়লে বেনাপোল দিয়ে পণ্য আমদানি বেড়ে যাবে। সেই সাথে বাড়বে সরকারের রাজস্ব আহরণ। বর্তমানে উচ্চ শুল্কযুক্ত পণ্য আমদানি কম এবং কম শুল্কযুক্ত পণ্য আমদানি হবার কারণে রাজস্ব আদায় কম হচ্ছে। আশা করছি করোনার পরিস্থিতি উন্নতি হলে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়ে যাবে'।