করোনায় মানিকগঞ্জের মাছের বাজারে ধস
ভোর ৬ টা থেকে ৮ টা পর্যন্ত ক্রেতা-বিক্রেতার হাক-ডাকে মুখরিত থাকে মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার তরা মাছের আড়ৎ। প্রতিদিন প্রায় দেড় থেকে দুই কোটি টাকার মাছ বিক্রি হলেও করোনা সংক্রমণকালীন সময় থেকে কমে এসেছে মাছের বিকিকিনি।
এখন প্রতিদিন ৫০ লাখ বা তারও কিছু বেশি টাকার মাছ বিক্রি হয় বলে জানান স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।
তরা মাছের আড়তে ছোট-বড় মিলিয়ে মোট ৯০ জন আড়তদার রয়েছেন। মানিকগঞ্জ জেলা ছাড়াও আশেপাশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে এক হাজারেরও বেশি মৎস্য ব্যবসায়ীরা ভিড় জমান এ বাজারে। চাহিদা মোতাবেক মাছ কিনে তা বিক্রি করেন স্থানীয় খুচরা বাজারে।
তবে করোনাকালীন সময়ে খুচরা বাজারে ক্রেতা কমে আসায় পাইকারি মাছের বাজার মন্দা বলে দাবি খুচরা বাজারের মাছ বিক্রি করা ব্যবসায়ীদের।
ছোট-বড় বিভিন্ন মাছ বিক্রির হাক-ডাকে সরগরম থাকে তরা মৎস্য আড়ত। মাছের দরদাম নিয়ে পাল্লাপাল্লি হয় ক্রেতাদের মাঝে। সব্বোর্চ দাম হাকানো ব্যক্তি কেনেন তার পছন্দের মাছ। এরপর বিক্রি করেন খুচরা বাজারে। তবে খুচরা বাজারে চাহিদা কমে আসায় আড়তে কমে গেছে মাছের আমদানি। ফলে ব্যস্ততাও কমে গেছে ক্রেতা-বিক্রেতাদের মাঝে।
ধামরাই উপজেলার শ্রীরামপুর বাজারের ব্যবসায়ী নিখিল রাজবংশী বলেন, করোনার শুরু থেকে খুচরা বাজারে মাছের বিক্রি কমে গেছে। আগে প্রতিদিন ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকার মাছ বিক্রি করতেন খুচরা বাজারে। এখন ১৫ হাজার টাকার মাছ বিক্রি করতে হিমশিম অবস্থায় পড়তে হয় বলে জানান তিনি।
মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার ধানকোড়া বাজারের মাছ বিক্রেতা স্বপন হালদার বলেন, খুচরা বাজারে বড় মাছের চেয়ে এখন দেশীয় প্রজাতির ছোট মাছের চাহিদা বেশি। করোনকালীন সময়ে 'রেড জোন' ঘোষণার ফলে কিছুদিন বাজার বন্ধ থাকে। এরপর থেকে মাছের বাজার খুব মন্দা। করোনার আগে প্রতিদিন ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকার মাছ বিক্রি হলে এখন ১০/১২ হাজার টাকা মাছ বিক্রি হয়।
খুচরা বাজারে মাছের বিক্রি কমে যাওয়ায় তাদের আয়ও অর্ধেকে নেমে এসেছে। করোনার আগে মাছ বিক্রি করে সব খরচ বাদে প্রতিদিন প্রায় হাজার খানেক টাকা আয় হলেও এখন আয় হচ্ছে মাত্র তিন থেকে চারশো টাকা। ফলে পরিবার পরিজন নিয়ে বেশ চিন্তিত বলেও জানান তিনি।
আড়তটির বড় মাছ বিক্রির আড়তদার জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বরিশাল থেকে ভালো মানের ইলিশ এনে তরা আড়তে বিক্রি করেন তিনি। গত বছরের এই সময়ে প্রতিদিন আড়াই থেকে তিন লাখ টাকার ইলিশ বিক্রি হলেও এখন লাখ টাকার ইলিশ বিক্রি করাই কঠিন।
তিনি বলেন, খুচরা বাজারে চাহিদা কমে যাওয়ায় পাইকারি বাজার মন্দা। পাইকারি বাজারে বিক্রি কমে যাওয়ায় ব্যবসায়ীক মুনাফাও কমে আসছে।
মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার তরা মৎস্য আড়ত সমিতির সভাপতি ভোলা নাথ হালদার বলেন, আড়তে ছোট বড় মিলে ৯০ জন ব্যবসায়ী রয়েছেন। যাদের কাছ থেকে আশেপাশের বিভিন্ন এলাকার এক হাজারেরও বেশি খুচরা ব্যবসায়ী প্রতিদিন প্রায় দুই কোটি টাকা মাছ ক্রয় করতেন। তবে করোনাকালীন সময় থেকে পাইকারি বাজারের মাছ বিক্রি কমে গেছে। এখন গড়ে প্রতিদিন ৫০ লাখ বা তার কিছু বেশি টাকার মাছ বিক্রি হয় বলে জানান তিনি।