কোরবানীর পরের লকডাউনে ক্ষতির আশঙ্কায় ট্যানারি শিল্প মালিকরা
ঈদের পরে দুই সপ্তাহের কঠোর লকডাউনে সব ধরণের কলকারখানা বন্ধ ঘোষণা করায় বিপাকে পড়েছে ট্যানারি শিল্প। কোরবানীর পশুর চামড়া কেনার পর তা প্রক্রিয়াজাত করতে না পারলে পচে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন ট্যানারি শিল্প মালিকরা। লকডাউনের কারণে সারাদেশে কাঁচা চামড়া কেনাবেচাও ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা করছেন তারা।
সরকার মঙ্গলবার লকডাউনের ঘোষণা দেওয়ার পর থেকেই কারখানা চালু রাখতে ট্যানারি শিল্প মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ট্যানার্স এসোসিয়েশন (বিটিএ) লকডাউনে কারখানা চালু রাখার সুযোগ পেতে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানসহ বিভিন্ন মন্ত্রী ও সচিবদের সঙ্গে যোগাযোগ করে ট্যানারি চালু রাখার অনুরোধ করলেও এখনও আশ্বাস মেলেনি।
বৃহস্পতিবার বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির সভাপতিত্বে অনলাইনে অনুষ্ঠিত চামড়ার দাম নির্ধারণ বিষয়ক সভায়ও সবকিছু ছাপিয়ে লকডাউনে ট্যানারি চালু রাখার বিষয়টি সামনে নিয়ে আসেন চামড়া ব্যবসায়ীরা।
সভা শেষে বাণিজ্যমন্ত্রী ঢাকায় লবণযুক্ত গরুর চামড়া প্রতি বর্গফুট ৪০-৪৫ টাকা, ঢাকার বাইরে ৩৩-৩৭ টাকা, সারাদেশে খাসির চামড়ার বর্গফুট ১৫-১৭ টাকা এবং ছাগলের চামড়া ১২-১৪ টাকা ঘোষণা করেন। গতবছর নির্ধারিত দামের চেয়ে গরুর চামড়ার দাম বর্গফুটে ৫ টাকা এবং খাসী ও ছাগলের চামড়ার ক্ষেত্রে ২ টাকা বাড়ানো হয়েছে।
নির্ধারিত দামে ব্যবসায়ীদের চামড়া কেনার আহ্বান জানিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, দেশে চামড়ার দাম নিশ্চিত হলে ওয়েট ব্লু রপ্তানির অনুমোদন দেওয়া বন্ধ করবে মন্ত্রণালয়।
তবে ঈদের পরের লকডাউনের সময়ে ট্যানারি কারখানা চালু রাখার বিষয়ে কোন আশ্বাস দেননি বাণিজ্যমন্ত্রী, বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ কিংবা শিল্প সচিব জাকিয়া সুলতানা।
ট্যানার্স এসোসিয়েশনের তথ্য অনুযায়ী, সাভারের হেমায়েতপুরে চামড়া শিল্প নগরীতে মোট কারখানা রয়েছে ১৫৫টি, যাতে কর্মরত শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় ৩৫ হাজার। এছাড়া, কোরবানী মৌসুমে সারাদেশের কয়েক লাখ মানুষ চামড়া কেনাবেচার সঙ্গে যুক্ত থাকেন। কঠোর লকডাউনের কারণে তারা বের হতে পারবেন না।
এতে ট্যানারি কারখানাগুলো চালু রাখার ব্যবস্থা করতে ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মো. জসিম উদ্দিনকেও চিঠি পাঠিয়েছে বিটিএ।
বিটিএ সভাপতি শাহীন আহমেদ বলেন, "চামড়া পচনশীল পণ্য। কোরবানীর চামড়া ঢাকায় এনে ট্যানারিতে প্রসেসিং করতে না পারলে চামড়া পচে যাবে। তাই লকডাউনকালে অবশ্যই ট্যানারি কারখানাগুলো চালু রাখা জরুরি। এ বিষয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনা চলছে"।
লেদার গুডস এন্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স এন্ড এক্সপোর্টার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (এলএফএমইএবি) এর প্রেসিডেন্ট মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, "নিয়মানুযায়ী ২৩ জুলাই পর্যন্ত সারাদেশে পশু কোরবানী হবে। আর সেদিন থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত লকডাউন। অথচ এই সময়ে সারাদেশের চামড়ার হাটে চামড়া কেনাবেচা হয়"।
"লকডাউনের ভয়ে তৃণমূল ব্যবসায়ীরা চামড়া কেনা থেকে বিরত থাকতে পারে। অন্যদিকে ট্যানারি চালু থাকলে প্রসেসিংয়ের অভাবে চামড়া নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় লকডাউনের সময় ট্যানারিগুলো চালু রাখা জরুরি।"
তৃণমূলের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা যাতে চামড়া কেনার পর লবণ দিয়ে স্থানীয় পর্যায়ে কিছুদিন সংরক্ষণ করতে পারেন, সে জন্য মসজিদভিত্তিক বিনামূল্যে লবণ বিতরণের প্রস্তাব করেন সাইফুল ইসলাম।
প্রাণি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর ১.১৯ কোটি পশু কোরবানীর জন্য প্রস্তুত রয়েছে জানিয়ে বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেন, "ট্যানারি ব্যবসায়ীরা নির্ধারিত মূল্যে চামড়া কেনেন না বলেই তৃণমূলের ব্যবসায়ীরা লবণ দিয়ে চামড়া সংরক্ষণ করেন না। কারণ, লবণযুক্ত করার পর তাদের যে খরচ হয়, সেই দামে তারা চামড়া বিক্রি করতে পারেন না"।
তিনি ট্যানারি মালিকদের কাছে প্রতি জেলায় তাদের এজেন্টদের নাম-ঠিকানার তালিকা চেয়ে বলেন, এসব তালিকা জেলা প্রশাসকদের কাছে পাঠানো হবে। এজেন্টরা নির্ধারিত মূল্যে চামড়া কিনছে কি-না, তা প্রশাসন তদারকি করবে।
বাণিজ্য সচিব বলেন, "আন্তর্জাতিক বাজারে চাহিদা বাড়ায় বাংলাদেশের রপ্তানি বাড়ছে। ১.২০ কোটি বর্গফুট ওয়েট ব্লু রপ্তানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে, আরও ১ কোটি বর্গফুট রপ্তানির অনুমোদন দেওয়া হবে। কোভিডের কারণে এবার কোরবানীও কিছুটা কম হবে। সব মিলিয়ে এবার কোরবানীর চামড়ার দাম আগের চেয়ে বেশি হওয়া উচিত"।
আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের প্রতিনিধি সভায় জানান, ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর এমডিদের সঙ্গে বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে যে, কোরবানীর চামড়া কেনার জন্য এ বছর প্রায় ৬০০ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করা হবে। যেসব চামড়া ব্যবসায়ী খেলাপি রয়েছেন, তারা ৩% ডাউন পেমেন্ট দিয়ে তা পুনঃতফসিল করতে পারবেন।