ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহারে কেন খরচ বাড়ে?
ক্রেডিট কার্ড যে খরচ করার ইচ্ছা বাড়িয়ে তুলে, তা নতুন কিছু নয়। কয়েক দশক ধরেই মানুষ বিষয়টির সাথে পরিচিত। নিয়মিত ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারকারীরাও সম্ভবত তা হাড়ে হাড়ে টের পান।
কিন্তু কেন এমন হয়ে থাকে? নতুন এক গবেষণায় দীর্ঘদিনের এই প্রশ্নের উত্তর পাওয়া গেছে বলে মনে করছেন গবেষকরা। একইসঙ্গে, কৌশলে ভোক্তা বা কনজিউমারদের প্রভাবিত করার মাধ্যমে কাগজের অর্থ বিলুপ্ত হয়ে নতুন এক সমাজের উদ্ভব হতে চলেছে বলেও ইঙ্গিত দিয়েছেন তারা।
ক্রেডিট কার্ড ব্যয়ের ওপর পরিচালিত গবেষণাগুলো মূলত ক্রেতার আচরণের মনস্তাত্ত্বিক ব্যখ্যা দিয়ে থাকে। ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে নিজের টাকা দিতে হয় না বলে খরচের বিষয়ে ক্রেতারা কোনো বাধা অনুভব করেন না।
তবে, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে প্রকাশিত গবেষণায় নতুন এক বিষয় উঠে এসেছে। ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারকারী এবং নগদ অর্থ ব্যয়কারী ক্রেতাদের কেনাকাটার পরিকল্পনাকালে মস্তিষ্ক ভিন্নভাবে কাজ করে বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে।
ক্রেডিট কার্ডে কেনাকাটা করলে ক্রেতারা কেবল লাগামহীন হয়ে পড়েন তা না, বরং ক্রেডিট কার্ড তাদের সক্রিয়ভাবে কেনাকাটায় প্ররোচিত করে থাকে বলেও দাবি করেছেন গবেষকরা।
কার্ডে কেনাকাটার সময় মানুষ পছন্দের কোনো পণ্য দেখলে মস্তিষ্কের স্নায়ুতন্ত্রে পুরষ্কৃত হওয়ার উদ্দীপনা বোধ করেন। ফলে, খরচ করার ইচ্ছা তীব্র হয় বলে জানান ইউনিভার্সিটি অব ইউটাহের সহকারী অধ্যাপক সাচিন ব্যানকার।
"ক্রেডিট কার্ডে কেনাকাটার সময় আপনি বেশি বেশি পুরষ্কৃত বা লাভবান হচ্ছেন বলে মনে করেন। নগদ টাকার ক্ষেত্রে আমরা তা দেখি না। দুটি ক্ষেত্রে ভীষণ স্পষ্ট পার্থক্য কাজ করে," বলেন তিনি।
গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের কেনাকাটার সময় তাদের মস্তিষ্কের এমআরআই (ম্যাগনেটিক রেজোন্যান্স ইম্যাজিং) করা হয়। প্রত্যেক অংশগ্রহণকারীকে তিনটি সেশনে নিত্যব্যবহার্য মোট ৮৪টি পণ্য দেখানোর পর প্রতিটি পণ্য তারা উল্লেখিত মূল্যে কিনবেন কিনা তা জিজ্ঞেস করা হয়।
অর্ধেক পণ্য কেনার ক্ষেত্রে ক্রেডিট কার্ড সুবিধা রাখা হয়। বাকি অর্ধেক পণ্য কিনতে চাইলে নগদ অর্থ ব্যবহারের সুযোগ দেওয়া হয়। কোনো পণ্যের মূল্যই ৫০ ডলারের বেশি ছিল না।
অংশগ্রহণকারীদের মস্তিষ্কের কার্যক্রম পর্যালোচনা করে দেখা যায় যে, সময়ের সাথে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের পুনরাবৃত্তি থেকে মস্তিষ্ক ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারে পুরষ্কৃত হচ্ছে বলে মনে করতে থাকে।
নতুন প্রায় সকল পেমেন্ট ব্যবস্থায় কনজিউমারদের মধ্যে কৌশলে স্নায়বিক পুরষ্কারের সংবেদন সৃষ্টির মাধ্যমে খরচে উদ্ধুদ্ধ করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন ড. ব্যানকার।
উদাহরণ হিসেবে বর্তমান ডিজিটাল পেমেন্টের কথা বলা যায়। স্মার্টফোনে কোনো জিনিস কেনার পর বিশেষ ধরনের শব্দ বা ভাইব্রেশন সৃষ্টি হয়। সময়ের সাথে নতুন পণ্য কেনার ক্ষেত্রে এই শব্দ মস্তিষ্কে সৃষ্ট উদ্দীপনায় অভ্যস্ত করবে।
তবে, দামি বা বিলাসবহুল পণ্যের ক্ষেত্রেও বিষয়টি একই ভাবে কাজ করে কিনা তা জানতে আরও গবেষণার প্রয়োজন আছে বলে মন্তব্য করেন ড. ব্যানকার।
এছাড়া, কনজিউমারদের মধ্যে ক্রেডিট কার্ডের অত্যধিক ব্যবহার কিংবা অপব্যবহারের আচরণগত দিকগুলো বিশ্লেষণেও ব্যবহৃত হবে এই গবেষণা।
গবেষণাটি মূলত নিয়মিত এবং সঠিকভাবে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারকারীদের ওপর পরিচালিত হয়েছে। অন্যান্য ধারার কনজিউমারদের ধরন এবং মাত্রাতিরিক্ত খরচের ঝুঁকিপূর্ণ আচরণের সমাধান খুঁজে পেতেও এই গবেষণা পথ দেখাবে বলে মনে করেন ড. ব্যানকার।
সূত্র: ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল