গুলশানে ই-অরেঞ্জের কার্যালয়ের সামনে গ্রাহকদের বিক্ষোভ
আজ বুধবার (১১ আগস্ট) বিতর্কিত ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম ই-অরেঞ্জের কার্যালয়ের সামনে বসে অবস্থান নিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির প্রায় ৫০ জন গ্রাহক।
বিক্ষোভের খবর পেয়ে গুলশান থানার একটি দল ঘটনাস্থলে যায়। আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে পুলিশ।
ওই সময় গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মটির প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তার (সিটিও) সঙ্গে ভিডিও কলে কথা বলেন। ই-অরেঞ্জের প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা তখন নিশ্চিত করেন যে, তাদের ব্যবস্থাপনা দল আগামী ১৬ আগস্ট আন্দোলনকারী গ্রাহকদের সঙ্গে বৈঠকের ব্যবস্থা করবে।
পরে পুলিশ দুপুর আড়াইটার দিকে আন্দোলনকারীদের ওখান থেকে সরিয়ে দেয়।
গত ৭ আগস্ট ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানটি এক ফেসবুক পোস্টে তাদের ঠিকানা ও ব্যবস্থাপনা কমিটি পরিবর্তনের গুজবে কান না দেওয়ার আহ্বান জানায় গ্রাহকদের প্রতি। এর জের ধরেই বিক্ষোভকারীরা সকাল ৯টা ৩০ মিনিটের দিকে প্রতিষ্ঠানটির কার্যালয়ের সামনে জড়ো হন।
আজ সকাল দশটায় প্রতিষ্ঠানটির এক কর্মী দরজা খুলে পুরো কার্যালয় খালি পেয়েছে বলে জানা গেছে।
বিকেল ৩টায় যখন এই প্রতিবেদন লেখা হচ্ছিল, তখন পর্যন্ত ই-অরেঞ্জের পক্ষ থেকে কেউ বিক্ষুব্ধ গ্রাহকদের সঙ্গে কথা বলেনি।
গতকাল রাতে প্রতিষ্ঠানটির ফেসবুক পেজে একটি আপডেট পোস্ট করা হয়। তাতে জানানো হয়, স্থগিত ডেলিভারি অর্ডারের তালিকা আগামী ১৬ আগস্ট প্রকাশিত হবে এবং ১৭ আগস্ট থেকে ফের ডেলিভারি শুরু হবে। পোস্টটিতে আরও জানানো হয় যে, গ্রাহকদেরকে তাদের ডেলিভারির তারিখ খুদেবার্তার মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হবে।
তবে দেশের ক্রমবর্ধমান মহামারি পরিস্থিতির মধ্যে নতুন লকডাউন আরোপের আশঙ্কায় গ্রাহকরা ই-অরেঞ্জের এ ঘোষণাকে ডেলিভারি বিলম্বিত করার কৌশল বলে মনে করছেন।
বিক্ষোভে আসা গ্রাহক তানভীর কালাম বলেন, 'ই-কমার্স কোম্পানিটির গত এপ্রিলের অর্ডার ডেলিভারি দেওয়ার কথা ছিল মে মাসে। কিন্তু তাতে ব্যর্থ হয়ে ওদের কর্তৃপক্ষ আমাকে ঘোরাতে শুরু করে, সেইসাথে বিলম্বের জন্য নানা অজুহাত দিতে থাকে।
'পরে আগস্টের ৩ তারিখে ওরা ওদের ফেসবুক হ্যান্ডেলে ক্ষমা চেয়ে নোটিশ পোস্ট করে। তাতে বলে, লকডাউন বাড়ানোর কারণে পূর্বনির্ধারিত সময় ৬ আগস্টের মধ্যে ডেলিভারি দিতে পারবে না।'
বিক্ষোভে আসা আরেক গ্রাহক মো. আতাউল্লাহ আরজু টিবিএসকে বলেন, 'কোম্পানিটি প্রতিশ্রুতিমাফিক ১৭ আগস্টের মধ্যে পণ্য সরবরাহ করতে না পারলে- ওদের বিরুদ্ধে মামলা করার কথা ভাবছি।'
এর মধ্যেই সবাইকে অবাক করে দিয়ে প্রতিষ্ঠানটি তাদের মালিকানা পরিবর্তনের ঘোষণা দিয়েছে। ই-অরেঞ্জের ফেসবুক পেজে বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বীথি আক্তার নামে একজনকে কোম্পানিটির নতুন মালিক ঘোষণা করা হয়।
অভিযোগ আছে, প্রতিষ্ঠানটির আগের মালিক সোনিয়া মেহজাবিন দেশ ছেড়েছেন।
সরকার নিষেধাজ্ঞা শিথিল করে ১১ আগস্ট থেকে সমস্ত সরকারি ও বেসরকারি অফিস খোলার অনুমতি দিলেও ই-অরেঞ্জের গুলশান কার্যালয়ের সমস্ত কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।
ই-অরেঞ্জের এক প্রাক্তন কর্মচারীর সঙ্গে যোগাযোগ করে আন্দোলনকারী গ্রাহকরা জানতে পারেন, গত মাস থেকে বেতন আটকে থাকায় প্রতিষ্ঠানটির কর্মচারীরা কাজ বন্ধ করে দিয়েছে। ওই কর্মচারী দাবি করেন, তার চাকরি আছে কি না কিংবা প্রতিষ্ঠানটির মালিকানা বদলেছে কি না, সে ব্যাপারে তিনি কিছুই জানেন না।
এর আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) ই-কমার্স মার্চেন্টদের ব্যাংক হিসাবের বিবরণ চাওয়ার পর বেশ কয়েকটি শীর্ষস্থানীয় ব্যাংক ও একটি মোবাইল ব্যাংকিং পরিষেবা ই-অরেঞ্জসহ ১০টি ই-কমার্স সাইটের লেনদেনের জন্য তাদের কার্ডের ব্যবহার সাময়িকভাবে স্থগিত করেছে।