চড়া মূল্যে নতুন দুই প্ল্যান্টে সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদন পরিকল্পনা
বিশ্বজুড়ে গত এক দশকে সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ ক্রমান্বয়ে হ্রাস পেলেও বাংলাদেশের ক্ষেত্রে বিষয়টি ভিন্ন। প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনে নির্ধারিত চড়া মূল্যে সরকার দুটি নতুন সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপনের পরিকল্পনা করছে।
জামালপুরের শেখ হাসিনা সোলার পার্কে ১০০ মেগাওয়াট সক্ষমতার দুটি সোলার প্ল্যান্ট স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনে খরচ পড়বে ৮.৯০ টাকা থেকে ৯.৩৩ টাকা (০.১০ থেকে ০.১১ মার্কিন ডলার)। প্রতিবেশি দেশ ভারতের সাধারণ সৌর বিদ্যুৎ খরচের তুলনায় এই হার তিন গুণ বেশি।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ সম্প্রতি দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, সবথেকে কম খরচে সৌর প্রকল্পের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়েছিল। কিন্তু, নিলামে উল্লেখিত মূল্যের থেকে কম হারে কোনো প্রস্তাব পাওয়া যায়নি বলে মন্তব্য করেন তিনি।
"প্রকল্পের সাথে জমির মূল্য অন্তর্ভুক্ত থাকার কারণেই সম্ভবত ইউনিট প্রতি বিদ্যুতের দাম চড়া। জমির মূল্য প্রকল্প খরচের অন্তর্ভুক্ত করা না হলে প্রতি ইউনিট সৌর বিদ্যুতের খরচ হ্রাস যায়," বলেন তিনি।
"এছাড়া, ভারতের তুলনায় আমাদের দেশ সূর্যের আলো কম পেয়ে থাকে। বছরের প্রায় ছয় মাসই আমরা বৃষ্টিপাত দেখে থাকি। সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো বিবেচনায় আনলে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পায়," বলেন তিনি।
আন্তর্জাতিক নবায়নযোগ্য জ্বালানি সংস্থার (আইআরইএ) তথ্যানুসারে, গত ১০ বছরে বিশ্ব বাজারে সৌর মডিউলের দাম ৯০ শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস পেয়েছে। মূল্য হ্রাসের কারণে অন্য যেকোনো সময়ের তুলনায় বর্তমানে সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ কম।
ভারতের উত্তর প্রদেশে চলতি বছরের ১৩ এপ্রিল আদানি সোলার এনার্জি ৫০ মেগাওয়াটের একটি সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করে। সেখানে, প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের ব্যয় ধরা হয়েছে ৩.০৭ রুপি বা ৩.৫৭ টাকা। বাংলাদেশে ইতোমধ্যে বিদ্যমান এবং ভবিষ্যতের জন্য পরিকল্পিত সোলার প্ল্যান্টগুলোর তুলনায় এই মূল্য বহুলাংশে কম।
খরচ এত বেশি কেন?
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) সহযোগী সংস্থা রুরাল পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (আরপিসিএল) জামালপুরে দুটি সৌর বিদ্যুৎ প্ল্যান্টের একটি স্থাপন করবে।
প্রকল্পের জন্য সরকার জেলার মাদারগঞ্জ উপজেলায় আরপিসিএলকে ৩২৬ একর জমি বরাদ্দ দিয়েছে।
আরপিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আবদুস সবুর দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "তৃতীয় ভারতীয় ঋণ চুক্তির (এলওসি) অধীনে প্ল্যান্টের অর্থায়নের দায়িত্বে আছে ইন্ডিয়া এক্সিম ব্যাংক। প্রকল্পের প্রাথমিক মূল্যায়ন ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে।"
উচ্চ উৎপাদন খরচের বিষয়টি ব্যখ্যা করে মোহাম্মদ আবদুস সবুর বলেন, প্রকল্পটির কিছু অতিরিক্ত ব্যয় আছে যার কারণে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে।
"জাতীয় গ্রিডের সাথে যুক্ত হতে আমাদের ৪৭ কিলোমিটার দীর্ঘ সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করতে হবে। পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ এই লাইন নির্মাণের খরচ বহন করবে না," বলেন তিনি।
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) এবং আরপিসিএলের একটি যৌথ প্রতিষ্ঠান বিআর-পাওয়ারজেন লিমিটেডের সাথে মিলিতভাবে চীনা একটি প্রতিষ্ঠান অপর প্ল্যান্টটি নির্মাণ করবে। এই প্ল্যান্টে বাংলাদেশ-চীনের অংশীদারিত্ব যথাক্রমে ৩০ ও ৭০ শতাংশ।
সূত্রানুসারে, বিপিডিবি ইতোমধ্যে বিআর-পাওয়ারজেনের সাথে খসড়া চুক্তি বা লেটার অব ইনটেন্ট সম্পন্ন করেছে। প্ল্যান্টের প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৯.৩৩ টাকা।
যোগাযোগ করা হলে, বিআর-পাওয়ারজেনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, ৩৪৮ একর জমির বরাদ্দ প্রদান ছাড়া প্রকল্পের আর কোনো অগ্রগতি নেই।
"প্রকল্প বাস্তবায়নে এখন পর্যন্ত কোনো যৌথ উদ্যোগের প্রতিষ্ঠান গঠিত হয়নি। বর্তমানে আমরা সমান অংশীদারিত্ব লাভের লক্ষ্যে চীনা সংস্থার সাথে আলোচনা করছি," বলেন তিনি।
বাংলাদেশের সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২৫ হাজার মেগাওয়াট হলেও জাতীয় গ্রিডের সাথে যুক্ত হয় মাত্র ১৪৯ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। বিদ্যমান সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোতে উৎপাদিত বিদ্যুতের দামও প্রতিবেশী দেশ ভারতের তুলনায় বেশ উচ্চ।
বিপিডিবির বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রতি ইউনিট সোলার বিদ্যুতের মূল্য ১১ টাকা থেকে ১৬ টাকা পর্যন্ত।