তলবি ঋণের তদারকি বাড়াতে নীতিমালা জারি
![](https://947631.windlasstrade-hk.tech/bangla/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2021/06/11/loans.jpg)
বাণিজ্যের ক্ষেত্রে নেওয়া স্বল্প মেয়াদি ঋণের (ডিমান্ড লোন) খেলাপি কমিয়ে আনতে তদারকি বাড়ানোর উপর জোর দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এসব ঋণকে এখন থেকে পোস্ট ইমপোর্ট ফিন্যান্সিং (পিআইএফ) নামে অভিহিত করা হবে এবং এর তদারকির জন্য ব্যাংকগুলোতে আলাদা একটি বিশেষ ইউনিট গঠন করতে হবে। ইউনিটের দায়িত্ব দিতে হবে উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক পর্যায়ের কর্মকর্তাকে।
রোববার (১৩ জুন) এ সংক্রান্ত সার্কুলার ইস্যু করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ব্যাংকিং রেগুলেশন অ্যান্ড পলিসি ডিপার্টমেন্ট (বিআরপিডি)। যেখানে এ জাতীয় ঋণের সংজ্ঞা, মেয়াদ, তদারকি, পুনঃতফিসল ইত্যাদি বিষয় বর্ণনা করে পূর্ণাঙ্গ নীতিমালা জারি করা হয়েছে।
আগে এসব ঋণের জন্য পূর্ণাঙ্গ কোন নীতিমালা ছিল না বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে। নতুন নীতিমালার আলোকে বাণিজ্যের জন্য নেওয়া ঋণের ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা ফিরবে বলে মনে করেছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংক সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
নীতিমালায় বলা হয়, নিত্য প্রয়োজনীয় ভোগ্য পণ্য কিংবা শিল্পের কাঁচামাল আমদানির দায় পরিশোধে সকল প্রকার ঋণ আমদানি পরবর্তী অর্থায়ন (পোস্ট ইমপোর্ট ফাইন্যান্সিং-পিআইএফ) নামে অভিহিত হবে।
বর্তমানে স্বল্প মেয়াদী এই ঋণ গুলো বিশ্বাসের ঋণ বা লোন অ্যাগেইনেস্ট ট্রাস্ট রিসিপ্টের (এলটিআর) এবং শরীয়াভিত্তিক ব্যাংকগুলোর ক্ষেত্রে এই ধরনের ঋণ মুরাবাহা ট্রাস্ট রিসিপ্ট (এমটিআর) নামে পরিচিত।
আমদানি পরবর্তী অর্থায়ন সংক্রান্ত ব্যাংকগুলোকে আলাদা নীতিমালা তৈরি করে তা পরিচালনা পর্ষদে অনুমোদন করে নিতে হবে। ঋণ প্রদানে গ্রাহক ভেদে নির্ধারিত সীমা থাকতে হবে এবং এই সীমার বাইরে ঋণ ছাড় করা যাবে না।
নীতিমালায় বলা হয়, নিত্যপণ্য ও শিল্পের কাঁচামাল আমদানির ক্ষেত্রে আমদানিকারককে যথাক্রমে ৯০ ও ১৮০ দিনের মধ্যে ব্যাংকের পাওনা পরিশোধ করতে হবে। আগে ব্যাংক গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে এই সময়সীমা নির্ধারণ হলেও এখন থেকে বেঁধে দেয়া সময়ের বাইরে যাওয়া যাবে না।
কোন কারণে এই ঋণ পুনর্গঠন ও পুনঃতফসিলের প্রয়োজন পড়লে তা একবারই করা যাবে এবং ভোগ্য পণ্যের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৩০ দিন এবং শিল্পের কাঁচামাল আমাদনির ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৬০ দিনের জন্য ঋণ পুনর্গঠন কিংবা পুনঃতফিসল করা যাবে। তবে এক্ষেত্রে পুনঃতফসিল বা পুনর্গঠন এর প্রয়োজনীয়তা যাচাই করতে হবে।
এসব ঋণ আদায় ও তদারকির জন্য পিআইএফ মনিটরিং ইউনিট নামে আলাদা ভাবে একটি বিশেষ ইউনিট গঠন করতে হবে। এতে দক্ষ জনবল নিয়োগ দিতে হবে। ঋণ প্রদানে বিদ্যমান বিধি-বিধান পরিপালন হচ্ছে কিনা তা নিশ্চিত করতে হবে এই ইউনিটকে। কেউ অনিয়ম করলে তাৎক্ষণিক ভাবে তা ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানাতে হবে।
মেয়াদ উত্তীর্ণ বা শ্রেণিকৃত পিআইএফ এবং মেয়াদী ঋণে রূপান্তরিত পিআইএফ আদায়ের লক্ষ্যে সুনির্দিষ্ট কর্ম পরিকল্পনা থাকতে হবে। আদায় অগ্রগতি নিয়ে ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে পর্ষদের রিস্ক ম্যানেজমেন্ট কমিটি বরাবর রিপোর্ট উপস্থাপন করতে হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংককে এসব ঋণ সংক্রান্ত পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে দিতে হবে। ঋণের বিপরীতে জামানত যথাযথ কিনা সেটিও নিশ্চিত করতে হবে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ব্যাংকার দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানান, ট্রেডিং ব্যবসায় স্বল্প মেয়াদে নেওয়া ঋণগুলো সাধারণত বেশি খেলাপি হয়ে থাকে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই নীতিমালা এসব ঋণের ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা ফেরাবে। ব্যাংকগুলো এখন থেকে এসব ঋণ খেলাপি হলে গোপন করবে না। এতে খেলাপির পরিমাণও কমবে বলে তিনি মনে করেন।