দেশের বাজারে চাহিদা থাকায় হিলি স্থলবন্দর দিয়ে গমের আমদানি বেড়েছে
করোনার কারণে বিশ্বের অন্যান্য দেশ থেকে সমুদ্রপথে জাহাজের মাধ্যমে গম আমদানি বন্ধ থাকায় দেশের বাজারে গমের চাহিদা বেড়েছে। একারণে দেশজ চাহিদা মেটাতে দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে গম আমদানি করছেন আমদানিকারকরা।
স্থানীয় বাজারে ভালো চাহিদা থাকায় বন্দর দিয়ে গমের আমদানিও বাড়ে। গত ৬ মাসে এ বন্দর দিয়ে তিন হাজার ১৬টি ট্রাকে মোট এক লাখ ১৮ হাজার ১২১ টন গম আমদানি হয়েছে।
হিলি স্থলবন্দর কার্যালয় সুত্রে জানা গেছে, বেশ কিছুদিন ধরেই গম আমদানি অব্যাহত রয়েছে। জানুয়ারি মাসে ৩৫৫টি ট্রাকে ১৩ হাজার ৪৭৯ টন গম আমদানি হয়েছে। ফেব্রুয়ারিতে তা বেড়ে ৪৩৪টি ট্রাকে ১৭ হাজার ১৭ টন আমদানি করা হয়। মার্চে তা আবারো কিছুটা কমে ২৯০টি ট্রাকে ১১ হাজার ২৮২টি টন গম আমদানি হয়। এপ্রিলে তা আরো কমে ২৪২টি ট্রাকে ৯ হাজার ৪৫৯ টন গম আমদানি হয়। মে মাসে আবারো তা খানিকটা বেড়ে ৮৮৯ টি ট্রাকে ৩৫ হাজার ৪০ টন গম আমদানি হয়েছে। জুনে তা কিছুটা কমে ৮০৬টি ট্রাকে আমদানি হয় ৩১ হাজার ৮৪৩ টন । চলতি জুলাইয়ে আমদানির ধারা আবারো কিছুটা বাড়ছে।
হিলি স্থলবন্দর থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে গম সরবরাহকারী মিরাজুল ইসলাম বলেন, এখান থেকে গম কিনে দেশের বিভিন্ন স্থানে ফ্লাওয়ার মিলগুলোতে গম সরবরাহ করে থাকি। তবে আগের তুলনায় ফ্লাওয়ার মিলগুলোতে গমের চাহিদা বাড়ায় আগে যেখানে প্রতিদিন ৪/৫ট্রাক গম পাঠাতাম এখন সেখানে ৮/১০ ট্রাক করে গম পাঠাচ্ছি।
তিনি বলেন, "মূলত; বিদেশ থেকে গম না আসার কারণেই ভারতীয় গমের চাহিদা বেড়েছে। আমি এসব গম বগুড়া, সৈয়দপুর, পঞ্চগড়, নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করছি। আমার মতো আরো অনেক কোম্পানির প্রতিনিধি এখন হিলিতে আসছেন, যারা এখানে গম দেখে ক্রয় করে তারা তাদের ফ্যাক্টরিতে পাঠাচ্ছেন।"
হিলি স্থলবন্দরের গম আমদানিকারক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, "পুর্বে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে প্রচুর পরিমাণে গম আমদানি হলেও করোনার কারণে সমুদ্রপথ গম আমদানি বন্ধ রয়েছে। একমাত্র ব্রাজিল ও ইউক্রেন ছাড়া অন্যান্য দেশ থেকে গম আসছে না। এর ফলে দেশের বাজারে গমের চাহিদা মেটাতে ভারত থেকে প্রচুর পরিমাণে আমদানি করা হচ্ছে।"
বর্তমানে প্রতিটন গম ২৬৮ থেকে ২৭৫ মার্কিন ডলার মূল্যে ভারত থেকে আমদানি করা হচ্ছে, তবে এই দর ওঠানামা করে। আমদানিকৃত এসব গম বিশেষ করে আঞ্চলিকভাবে ঠাকুরগাঁও, রংপুর, বগুড়া, সিরাজগঞ্জসহ বিভিন্ন ফ্লাওয়ার মিলগুলোতে এসব গম যাচ্ছে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকাররা এসে এখান থেকে গম কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।
মোস্তাফিজুর আরও জানান, "বর্তমানে ২৩ টাকা ৮০ পয়সা থেকে শুরু করে ২৪ টাকা ১০-২০ পয়সা দরে বিক্রি হচ্ছে, তবে এর বাজার কাঁচাপণ্যের মতোই উঠানামা করে। দেশের বাজারে গমের প্রচুর চাহিদা থাকায় যদি বন্দর দিয়ে চারদিন গম আমদানি না হয়; তাহলে যেন গম শূন্য হয়ে গেছে এমন অবস্থা দাড়ায়। আমরা গম ডেলিভারি দিয়ে শেষ করতে পারছি না- এমন অবস্থা।"
হিলি স্থলবন্দরের জনসংযোগ কর্মকর্তা সোহরাব হোসেন বলেন, হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে গম আমদানি অব্যাহত রয়েছে। তবে আগের তুলনায় গমের আমদানি বেড়েছে। প্রথম দিকে বন্দর দিয়ে দৈনিক ২০-৩০ ট্রাক করে গম আমদানি হলেও, বর্তমানে তা বেড়ে ৪৫-৫৫ ট্রাক করে গম আমদানি হচ্ছে। আমদানি বৃদ্ধির ফলে সরকারের রাজস্ব আহরন যেমন বেড়েছে, তেমনি বন্দর কতৃপক্ষের দৈনন্দিন আয় বেড়েছে। একইভাবে বন্দরে কর্মরত শ্রমিকদের আয় বাড়ায় তাদের মাঝেও স্বস্তি ফিরেছে।
তিনি জানান, হিলি স্থলবন্দর দিয়ে গত ৬ মাসে তিন হাজার ১৬টি ট্রাকে এক লাখ ১৮ হাজার ১২১ টন গম আমদানি হয়েছে।