নতুন কোভিড ও কাঁচামাল খরচ বৃদ্ধির ফলে এশিয়া অঞ্চলের কারখানাগুলোর গতি মন্থর
করোনাভাইরাসের নতুন তরঙ্গ ঠেকাতে ও ক্রমবর্ধমান ইনপুট খরচের সাথে তাল মেলাতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে এশিয়ার বেশ কিছু দেশ। ফলে এ অঞ্চলের কারখানাগুলোর সার্বিক কাজের গতিবেগ কমে গেছে বলে বৃহস্পতিবার এক জরিপে জানা যায়।
চীন ও জাপানে কাঁচামালের মূল্যর উর্ধ্বগতির মধ্য দিয়ে উৎপাদন কার্যক্রম অনেকটাই ধীর হয়ে গেছে। অন্যদিকে ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া ও ভারতে কোভিডের নতুন সংক্রমণ এড়াতে কঠোর বিধিনিষেধ জারি করায় কারখানার কার্যক্রম সংকুচিত হয়ে গেছে।
প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, মহামারিজনিত পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের চেষ্টায় ব্যস্ত থাকায় বর্তমানে এ অঞ্চল পশ্চিমা অর্থনীতির চেয়ে পিছিয়ে আছে। অধিকাংশ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের খুব শিগগিরই মহামারিকালীন উদ্দীপনা প্যাকেজগুলো প্রত্যাহার করে নেওয়ার সম্ভাবনা নেই।
ক্যাপিটাল ইকোনমিকসের উদীয়মান অর্থনীতিবিদ অ্যালেক্স হোমস বলেন, 'ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ায় জুনের পিএমআই নিচে নেমে গেছে এবং সাপ্লাই চেইন সংক্রান্ত ইস্যুগুলো শিল্পখাতের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। আর এসব ইস্যু খুব তাড়াতাড়ি সমাধান হওয়ার সম্ভাবনাও দেখা যাচ্ছে না। তাই বিগত বছরগুলোতে শিল্পখাতে যে সাফল্য অর্জিত হয়েছে, এবার তার পুনরাবৃত্তি অসম্ভব বলেই মনে হচ্ছে।'
জুন মাসে চীনের কারখানাগুলোর কার্যক্রম আগের চেয়ে ধীর গতিতে সম্প্রসারিত হয়েছে। সেই সাথে গত ১৫ মাসের মধ্যে এবারই তাদের আউটপুট সবচেয়ে কম মাত্রায় বৃদ্ধি পেয়েছে বলে একটি বেসরকারি জরিপ থেকে জানা যায়। চীনের অফিসিয়াল জরিপেও তাদের শিল্প কার্যক্রম গত চার মাসে সর্বনিম্ন বলে জানানো হয়েছে।
কাইজিন/মার্কিট ম্যানুফ্যাকচারিং পারচেজিং ম্যানেজার সূচক মে মাসে ৫২ থেকে জুনে ৫১ দশমিক ৩ এ নেমে এসেছে। এখানে তাদের ১৪ মাসের বৃদ্ধি দেখানো হলেও, সূচকের এই নিম্নগতি বিশ্লেষকদের ধারণারও বাইরে ছিল।
কাঁচামালের উর্ধ্বগতি এবং সেমিকন্ডাক্টর চিপের ঘাটতির ফলে জাপানের মতো রপ্তানি শক্তির দেশগুলোরও ক্ষতি হয়েছে। জুন মাসে এসে তাদের কারখানা কার্যক্রম প্রসারের গতি ছিল বিগত চার মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন।
তবে কারখানা কার্যক্রমের দিক থেকে দক্ষিণ কোরিয়া টানা নয় মাস ধরে এগিয়ে থাকলেও ইনপুট ও আউটপুটের রেকর্ড মূল্যবৃদ্ধিই প্রমাণ করে, তাদেরও উৎপাদন কার্যক্রমে সমস্যার মুখে পড়তে হয়েছে।
আইএইচএস মার্কিটের অর্থনীতিবিদ উসমান ভাট্টি বলেন, 'উৎপাদনকারীরা বারবার বলে আসছিলেন, সাপ্লাই চেইনে ক্রমাগত নানা বাধা আসায় এর বিরূপ প্রভাবের সম্মুখীন হচ্ছেন তারা।'
শিল্পখাত পুনরুদ্ধারের ধীরগতি
একসময় বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির একটি চালক হিসেবে বিবেচিত, এশিয়া অঞ্চলের উদীয়মান অর্থনীতি এই মুহূর্তে মহামারির আঘাত থেকে নিজেদের পুনরুদ্ধারের ব্যাপারে পিছিয়ে আছে। কারণ টিকাদান কর্মসূচির ফলে জাতীয় পর্যায়ে চাহিদা বিঘ্নিত হয় এবং এই অঞ্চলের দেশগুলো পর্যটনের ওপর নির্ভরশীল।
গত মে মাসে ভিয়েতনামের পিএমআই ৫৩ দশমিক ১ থেকে জুনে তা ৪৪ দশমিক ১ এ নেমে এসেছে যাকে গত একবছরে তাদের বাণিজ্যিক অবস্থার সর্বোচ্চ অবনতি হিসেবে ধরা হচ্ছে।
গত মে মাসে মালয়েশিয়ার পিএমআই ছিল ৫১ দশমিক ৩ এবং জুনে তাদের পিএমআই ৩৯ দশমিক ৯-তে এসে ঠেকেছে। চলমান কোভিড বিপর্যয় তাদের দেশীয় ও আন্তর্জাতিক-দুই ক্ষেত্রের চাহিদার ওপরেই সমস্যা সৃষ্টি করেছে। তাইওয়ানের পিএমআই ও ৬২ দশমিক ০ থেকে ৫৭ দশমিক ৬-এ নেমে গেছে।
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় তরঙ্গ মোকাবিলা করতে নানা বিধিনিষেধ আরোপ করায় ভারতের কারখানা কার্যক্রমও এক বছরে প্রথমবারের মতো হ্রাস পেয়েছে।
অ জিবুন ব্যাংক জাপান ম্যানুফ্যাকচারিং পিএমআই মে মাসে ছিল ৫৩ দশমিক ০, কিন্তু জুন মাসে তা ৫২ দশমিক ৪ হয়ে দাঁড়ায়। গত ফেব্রুয়ারি থেকে এটিই তাদের সর্বনিম্ন হার।
মে মাসে দক্ষিণ কোরিয়ার পিএমআই ছিল ৫৩ দশমিক ৭। কিন্তু জুনে এসে তাদের পিএমআই বৃদ্ধি পেয়ে ৫৩ দশমিক ৯ হয়েছে। যদিও কাঁচামালের উর্ধ্বগতির ফলে ইনপুট মূল্যের উপসূচক এক লাফে বেড়ে রেকর্ড গড়েছে।
-
সূত্র: রয়টার্স