বেনাপোল কাস্টমসে ৫ মাসে রাজস্ব ঘাটতি হাজার কোটি টাকা
বেনাপোল কাস্টমসে চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম ৫ মাসে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ হাজার ৫০৮ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। এর বিপরীতে আদায় হয়েছে এক হাজার ৫০৯ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। রাজস্ব ঘাটতি হয়েছে ৯৯৯ কোটি ৯ লাখ টাকা। বছর শেষে আরও বড় ধরনের রাজস্ব ঘাটতির আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এদিকে শুল্কফাঁকির অভিযোগে ৮টি সিঅ্যান্ডএফ লাইসেন্স বাতিল ও তিন কাস্টমস কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে।
এর আগে ২০১৯-২০ অর্থবছরে বেনাপোল কাস্টমসে লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে রাজস্ব ঘাটতি হয়েছিল ৩ হাজার ৩৯২ কোটি টাকা। চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৬ হাজার ২৪৪ কোটি ৬২ লাখ টাকা।
বেনাপোল কাস্টমস হাউসের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা দিদারুল ইসলাম রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রার তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এর আগেও, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বেনাপোল কাস্টমস হাউসে ১ হাজার ১৪৫ কোটি টাকার রাজস্ব ঘাটতি ছিল। ওই অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়েছিল ৫ হাজার ১৮৫ কোটি টাকা। আদায় হয়েছিল ৪ হাজার ৪০ কোটি টাকা।
২০১৭-১৮ অর্থবছরে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ হাজার ১৯৫ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। আদায় হয়েছিল ৪ হাজার ১৬ কোটি ২৪ লাখ টাকা। সেবারও লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে রাজস্ব ঘাটতি ছিল ১৭৯ কোটি ৬৪ লাখ টাকা।
বাতিল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টরা হলো- মেসাস রিমু এন্টার প্রাইজ, তালুকদার এন্টার প্রাইজ, এশিয়া এন্টার প্রাইজ, মাহিবি এন্টার প্রাইজ, সানি এন্টার ন্যাশনাল, মদিনা এন্টার প্রাইজ, মুক্তি এন্টার প্রাইজ ও রিয়াংকা এন্টার প্রাইজ। রাজস্ব ফাঁকির অভিযোগে বহিঃষ্কৃত কাস্টমস কর্মকর্তারা হলেন রাজস্ব কর্মকর্তা নাশেদুল ইসলাম, সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা আশাদুল্লাহ ও ইবনে নোমান।
বেনাপোল কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, কয়েক বছর ধরে বেনাপোল বন্দরে মিথ্যা ঘোষণায় শুল্ক ফাঁকি দিয়ে পণ্য আমদানি বেড়ে যাওয়ায় কোনোভাবে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ সম্ভব হচ্ছে না। কাস্টমস ও বন্দরের কিছু কর্মকর্তার সঙ্গে যোগসাজশে কিছু ব্যবসায়ী বিভিন্ন কৌশলে শুল্ক ফাঁকি দিচ্ছিলেন। গত মাসেই শুল্ক ফাঁকির অভিযোগে কাস্টমস কর্মকর্তারা ৮টি সিঅ্যান্ডএফ লাইসেন্স বাতিল ও ৪ সিঅ্যান্ডএফ ব্যবসায়ীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছেন।
এছাড়া কাস্টমসের তিন রাজস্ব কর্মকর্তাকেও শুল্ক ফাঁকিতে সহযোগিতার অভিযোগে শাস্তিমূলক বরখাস্ত করা হয়েছে। তবে হাতে গোনা কয়েকজন ধরা পড়লেও অধিকাংশ দূনীতিবাজই রয়ে গেছেন ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। ফলে কোনোভাবে রোধ হচ্ছে না শুল্ক ফাঁকি দিয়ে পণ্য আমদানি।
বেনাপোল কাস্টমস হাউসের অতিরিক্ত কমিশনার ড. মো: নিয়ামুল ইসলাম জানান, করোনার কারণে প্রথমত আড়াই মাস ধরে আমদানি বন্ধ ছিল। এছাড়া পণ্য খালাসে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা বেড়ে যাওয়ায় কিছু ব্যবসায়ী এ বন্দর দিয়ে আমদানি কমিয়ে দিয়েছেন। আবার একইসঙ্গে উচ্চ শুল্কযুক্ত পণ্য আমদানি কম হবার কারণে রাজস্ব ঘাটতি হয়েছে।
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন জানান, পণ্য ছাড়করণের ক্ষেত্রে বৈধ সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত না হওয়া আমদানি কমে যাওয়ার একটি কারণ। এতে রাজস্ব দিন দিন ঘাটতি হচ্ছে। গেল বছরে শুরু থেকেই রাজস্ব ঘাটতি ছিল। চাহিদা অনুপাতে বেনাপোল বন্দরের অবকাঠামো উন্নয়ন না হওয়া এবং উচ্চ শুল্ক হারের পণ্য আমদানি কমে যাওয়ায় এ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে।
যশোর চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সভাপতি মিজানুর রহমান খান জানান, চলতি অর্থবছরের প্রথম আড়াই মাস এ পথে আমদানি বন্ধ ছিল। এ কারণে রাজস্ব ঘাটতি বেশি হয়েছে। এ পথে রাজস্ব আয় বাড়াতে হলে বন্দরের অবকাঠামো উন্নয়ন বাড়াতে হবে। এছাড়া বন্দরে বারবার রহস্যজনক অগ্নিকাণ্ডে অনেক ব্যবসায়ী পুঁজি হারিয়ে পথে বসেছেন। বন্দর কোনো ক্ষতিপূরণ না দেওয়ায় তারা এ বন্দর ছেড়েছেন।
উল্লেখ্য, যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় দেশে স্থলপথে যে পণ্য আমদানি হয়, তার ৭০ শতাংশ হয়ে থাকে বেনাপোল বন্দর দিয়ে। প্রতি বছর এ বন্দর দিয়ে প্রায় ৩৫ হাজার কোটি টাকার পণ্য আমদানি হয়ে থাকে, যা থেকে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আসত। এ পথে আমদানি পণ্যের মধ্যে রয়েছে শিল্পকারখানার কাঁচামাল, তৈরি পোশাক, কেমিক্যাল, অক্সিজেন বিভিন্ন ধরনের খাদ্যদ্রব্য জাতীয় পণ্য।