বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চলে প্লট পেতে আগ্রহীদের আবেদন জমছে
মীরসরাইয়ে বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চলে প্লট পেতে দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠানের আগ্রহ বেড়েছে। নতুন এ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলটি বেপজার নবম অর্থনৈতিক অঞ্চল। চট্টগ্রাম বন্দরের কাছে হওয়ায় ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার কারণে বেশ আকর্ষণীয় বিনিয়োগ কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে এটি।
চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প নগরে (বিডিএমডিএন) ১,১৫০ একর জায়গা জুড়ে হচ্ছে বেপজার এই অর্থনৈতিক অঞ্চল যেখানে ৩ হাজার ৬০০ বর্গমিটারের ৫৩৯টি শিল্প প্লট তৈরী করবে বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেপজা)। ইতোমধ্যেই বেপজা ১৪০টি প্লট ফ্যাক্টরি তৈরীর উপযোগী করেছে। ১৪০টি প্লট তৈরী হলেও বরাদ্দ পেতে আবেদন করেছে বেশি। ২৫০টির বেশি প্লট পেতে ৭৮টি প্রতিষ্ঠান আবেদন করেছে। এ প্রতিষ্ঠানগুলো ১.৩৪৮ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ প্রস্তাব দিয়েছে। জাপান এখানে ৫০টির বেশি প্লটের জন্য আবেদন করেছে।
বেপজার নির্বাহী চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মো. নজরুল ইসলাম বলেন, "আমরা ইতিমধ্যে ৬৬টি প্লট বরাদ্দ দিয়েছি। চলতি বছরের শেষ দিকে তারা অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ শুরু করবে। বাকি আবেদনগুলো যাচাই করছি। আমরা তৈরী পোশাকশিল্পের বাইরের প্রতিষ্ঠানকে অগ্রাধিকার দিচ্ছি। রপ্তানি পণ্যে বৈচিত্র আনতে চাচ্ছি আমরা। আবেদনগুলো যাচাই করে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে সক্ষম প্রতিষ্ঠানকে বরাদ্দ দেয়া হবে"।
মো. নজরুল ইসলাম আরও বলেন, "জাপানি বিনিয়োগকারীরা ফিল্ড আইটেম, গলফ শ্যাফট এবং অন্যান্য পণ্য উৎপাদনে বিনিয়োগ করবে। আমরা জাপানের প্রস্তাব পর্যালোচনার জন্য একটা কমিটি গঠন করেছি। কিন্তু বিপুলসংখ্যক বিনিয়োগ প্রস্তাব থাকায় ওদের আমরা ৫০টি প্লট বরাদ্দ দিতে পারব না। আমাদের এখানেই প্রচুর প্লটের চাহিদা রয়েছে"।
৪.৫ বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক বিনিয়োগের আশা
দেশি প্রতিষ্ঠানসহ চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, যুক্তরাজ্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, হংকংসহ বেশ কিছু দেশ থেকে বিনিয়োগ প্রস্তাব এসেছে। প্রতিষ্ঠানগুলো জিপার, বোতাম সহ পোশাকশিল্পের ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ পণ্য তৈরীর প্রতিষ্ঠান, উচ্চমানের চামড়াজাত পণ্য, কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রি, ব্যাগ, ট্রলি, আউটডোর তাঁবুর মতো নন-আরএমজি পণ্য উৎপাদনে বিনিয়োগ প্রস্তাব দিয়েছে।
অর্থনৈতিক অঞ্চলের ৫২৯টি প্লট ২০২৩ সালের মধ্যেই তৈরী হয়ে যাবে বলে আশা করছে বেপজা। পুরো অর্থনৈতিক অঞ্চল চালু হলে কর্মসংস্থান হবে ৫ লাখ লোকের। যেখান ৪.৫ বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক বিনিয়োগ আসবে। রপ্তানি আয় বৃদ্ধি পাবে ৩. ২৩ বিলিয়ন ডলার।
মাস্টারপ্ল্যান
বর্তমান ও ভবিষ্যতের চাহিদা বিবেচনায় ৪০ বছরের ইপিজেড নির্মাণ ও ব্যবস্থাপনার আলোকে একটি আধুনিক, টেকসই ও পরিবেশবান্ধব মাস্টারপ্ল্যান প্রস্তুত করেছে বেপজা। এর আওতায় থাকবে ইউটিলিটি কানেকশন সহ ৫৩৯টি শিল্প প্লট। ৬ তলার ৪৫টি কারখানা ভবন। ১০ তলার ৫টি ইনভেস্টর্স আবাসিক ভবন। হোটেল সুবিধাসম্পন্ন একটি ইনভেস্টরস ক্লাব। দুই হাজার বিদেশী নাগরিকের একক আবাসন। এক হাজার নারীর একক আবাসন। ইনসিনারেটর সহ পাওয়ার হাব, পানি শোধনাগার ও কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগার। বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ ও পরিশোধনের মাধ্যমে পুনঃব্যবহারের জন্য ৪৫ একর এলাকার একটি কেন্দ্রীয় জলাধার থাকবে। ওয়ান স্টপ সেবা ও কাস্টমস সংক্রান্ত কার্যক্রম সহজীকরণের জন্য থাকবে কেন্দ্রীয় অটোমেশন সিস্টেম; অগ্নিনিরাপত্তার জন্য একটি ডেডিকেটেড ফায়ার স্টেশন, স্কুল, কলেজ, ট্রান্সপোর্ট হাব, কন্টেইনার ইয়ার্ড, শপিং কমপ্লেক্স, ফুড কোড ইত্যাদিও অন্তর্ভুক্ত।
বেপজা যে কারখানা ভবন তৈরী করছে সেখানে বিনিয়োগকারীরা সহজেই তাদের ব্যবসা পরিচালনা করতে পারবেন। মেজর জেনারেল মো. নজরুল ইসলাম বলেন, "জাস্ট প্লাগ এ্যান্ড প্লে। ব্যবসায়ীরা এসেই দ্রুত তাদের পণ্য তৈরী করতে পারবেন। নতুন করে প্লট নিয়ে কারখানা ভবন তৈরী করতে হবে না তাদের"।
ইতোমধ্যেই ৩০০ ফিট প্রশস্ত হেরিং রাস্তা তৈরী হয়ে গেছে। জানা গেছে, রাস্তা যেন টেকসই হয়ে এ জন্য প্রথমে ইট বসানো হয়েছে। ফ্যাক্টরিগুলো তাদের ভবন তৈরীর জন্য মালামাল বহন করার সময় রাস্তার মাটি কিছুটা দেবে যেতে পারে। পরবর্তীতে সেখানে কার্পেটিং রাস্তা তৈরী করবে বেপজা।
প্রশাসনিক ভবনসহ ডরমিটরি ভবনের নির্মাণকাজ শুরু হয়ে গেছে। আনুষঙ্গিক সার্ভিস যেমন- বিদ্যুতের কাজ ও গ্যাসের লাইন টানা শেষ। অফিসার্স ও স্টাফ ডরমিটরি, ইনভেস্টরস রেসিডেন্স, আনসার ও সিকিউরিটি ব্যারাক, সিকিউরিটি ও কাস্টমস ভবন, মেইন গেট ও কাস্টমস গেট প্রভৃতির নির্মাণকাজ চলমান রয়েছে।
বেপজার নির্বাহী চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মো. নজরুল ইসলাম বলেন, "এটা হবে সবুজ শিল্প অঞ্চল। অর্থনৈতিক অঞ্চলের একচেটিয়া বিনিয়োগের সুযোগ পেতে বেপজা বিশ্বজুড়ে বিনিয়োগকারীদের স্বাগত জানায়"।
বেপজার অধীনে এখন আটটি ইপিজেড রয়েছে, এগুলো হলো- চট্টগ্রাম ইপিজেড, ঢাকা ইপিজেড, মংলা ইপিজেড, ঈশ্বরদী ইপিজেড, কুমিল্লা ইপিজেড, উত্তরা ইপিজেড, আদমজী ইপিজেড এবং কর্ণফুলী ইপিজেড।
বর্তমানে দেশের মোট বার্ষিক রপ্তানিতে বেপজার অবদান প্রায় ২০ শতাংশ।
চালু হওয়া ইপিজেডগুলোতে কোন শিল্প প্লট খালি নেই। বিনিয়োগের ক্রমবর্ধমান চাহিদার প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৮ সালের ২৪ জানুয়ারী বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চলের উদ্বোধন করেন। চট্টগ্রামের মিরসরাই ও সীতাকুণ্ড উপজেলা এবং ফেনীর সোনাগাজী উপজেলায় প্রায় ৩০ হাজার একর জমিতে হচ্ছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প নগর (বিডিএমডিএন) । এ শিল্প নগরের জোন-১৪ তে বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের জন্য ১,১৫০ একর জমি বরাদ্দ দিয়েছে সরকার।
ইপিজেডে বিনিয়োগের জন্য বিনিয়োগকারীদের বিভিন্ন প্রণোদনা দিয়ে থাকে বেপজা। ইপিজেডে বিনিয়োগ করে বিনিয়োগকারীরা কর অবকাশ, কাঁচামাল ও যন্ত্রপাতির শুল্কমুক্ত আমদানি, লভ্যাংশ কর থেকে ছাড়, জিএসপি সুবিধা, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও অন্যান্য দেশে শুল্ক ও কোটামুক্ত প্রবেশাধিকার পেতে পারে।
ইপিজেডে শতভাগ বিদেশি মালিকানা অনুমোদিত—বিদেশি বিনিয়োগ এবং মূলধন ও লভ্যাংশ সম্পূর্ণ ফিরিয়ে নেওয়ার ওপর কোনো ধরনের বিধিনিষেধ নেই।