ভারত থেকে আসছে না পেঁয়াজ
কয়েকদিন ধরেই আলোচনায় নিত্য প্রয়োজনীয় মশলা জাতীয় পণ্য পেঁয়াজ। দেশে যে পরিমাণে পেঁয়াজ আমদানি হয়, তার সিংহভাগই আসে দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে।
তবে সোমবার দুপুর থেকে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে ভারত। যদিও বিষয়টি এখন পর্যন্ত লিখিত কিংবা মৌখিকভাবে জানানো হয়নি বলে অভিমত আমদানিকারকদের।
একই চিত্র দেখা গেছে সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দরে। সোমবার সকাল থেকে ওই বন্দর দিয়ে কোনো পেঁয়াজের ট্রাক বাংলাদেশে প্রবেশ করেনি।
হিলি স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, অতিবৃষ্টি ও বন্যার কারণে পেঁয়াজের সরবরাহ কমিয়ে দেয় ভারত। এরই মধ্যে সর্বশেষ গত ৯ সেপ্টেম্বর থেকে রপ্তানি মূল্য বাড়িয়ে দেন ভারতীয় ব্যবসায়ীরা। প্রতি টন পেঁয়াজের রপ্তানিমূল্য ১৫০-২৫০ এর মধ্যে থাকলেও তা বাড়িয়ে করা হয় ৩০০-৪২০ ডলার।
পরিমাণে কম হলেও তবু দেশের অন্যতম পেঁয়াজ আমদানি করা বন্দর হিলি স্থলবন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আসছিল। চলতি মাসের শুরুর দিকেও যেখানে প্রতিদিন ৪৫-৫০ ট্রাক পেঁয়াজ আমদানি করা হতো, সেখানে দাম বৃদ্ধির পর পেঁয়াজ আসছিল ১৮ থেকে ২২ ট্রাক।
তবে সোমবার দুপুর থেকে বাংলাদেশে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছেন ভারতীয় রপ্তানিকারকরা।
ভারতীয় ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, ভারতের বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে এবং মূল্যবৃদ্ধি রুখতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, পেঁয়াজ আমদানি করতে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের যেসব এলসি খোলা হয়েছিলও, সেগুলোর বিপরীতেও পেঁয়াজ দেওয়া হবে না। যদিও এই বিষয় আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়নি বলে জানিয়েছেন আমদানি-রপ্তানিকারক গ্রুপ।
হিলি স্থলবন্দর আমদানি-রপ্তানিকারক গ্রুপের সভাপতি ও সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট হারুন-উর রশিদ বলেন, 'পেঁয়াজের রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে- এমন কোনো বিষয় আমাদেরকে ভারত থেকে জানানো হয়নি। তবে আপাতত ভারত রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে। দিল্লিতে তাদের একটি মিটিং হবে, সেখান থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে আমরা জানতে পেরেছি। কিন্তু রপ্তানি বন্ধের জন্য এখন পর্যন্ত চিঠি কিংবা মৌখিক- কোনোভাবেই আমাদের জানানো হয়নি।'
হাকিমপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুর রাফিউল আলম বলেন, 'এখানে কেউ যেন সিন্ডিকেট কিংবা অযথা দাম বৃদ্ধি করতে না পারে, সেজন্য আমরা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করেছি। পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ হয়ে গেছে- এমনটি শুনলেও এখন পর্যন্ত কোনো কাগজপত্র আমার কাছে আসেনি। তবে পেঁয়াজের বিষয়টি নিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ভাবছে ও কাজ করছে।'
সোমবার সকাল থেকে ভোমরা বন্দরে আসনে একটিও পেঁয়াজের ট্রাক
সোমবার সকাল থেকে ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে ভারতীয় পেঁয়াজবাহী কোনো ট্রাক বাংলাদেশে প্রবেশ করেনি।
সাতক্ষীরা ভোমরা বন্দরের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান নাসিম বলেন, 'হঠাৎ পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে ভারত। সকাল থেকেই কোনো পেঁয়াজের ট্রাক প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি।'
বন্ধের কারণ হিসেবে তিনি বলেন, 'ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি করতে গেলে দাম নির্ধারণ করে দেয় ন্যাপেট নামের একটি সংস্থা। বর্তমানে এক টন পেঁয়াজের রেট ৩০০ ডলার। সেটি সম্ভবত বাড়িয়ে ৫০০ বা ৭০০ ডলার নির্ধারণ করবে। সে কারণে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে ভারত।'
ভোমরা বন্দরের রাজস্ব কর্মকর্তা মহসিন হোসেন বলেন, 'সকাল থেকে এখন (বেলা ৪টা) পর্যন্ত কোনো পেঁয়াজের ট্রাক বন্দর দিয়ে প্রবেশ করেনি। তাছাড়া পেঁয়াজ আমদানি বন্ধের কোনো কারণও জানা যায়নি।'
ঘোষণা ছাড়াই বেনাপোল বন্দর দিয়ে বন্ধ পেঁয়াজ আমদানি
পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই বেনাপোল বন্দর দিয়ে বন্ধ হয়ে গেল পেঁয়াজ আমদানি। সোমবার বিকেলে বাংলাদেশে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেয় ভারত। ফলে বেনাপোলের ওপারের পেট্রাপোলে আটকা পড়েছে পেঁয়াজভর্তি প্রায় দেড়শ ট্রাক।
এদিন সকালে বেনাপোল বন্দর দিয়ে ৫০ টন পেঁয়াজ ঢোকার পরপরই দেশের সবগুলো বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেয় ভারতের পেঁয়াজ রপ্তানিকারকদের সংগঠন।
বেনাপোলের ওপারে পেট্রাপোল রপ্তানিকারক সমিতির পক্ষে ব্যবসায়ী কার্তিক ঘোষ বলেন, 'আমদানি বাণিজ্য শুরুর পর থেকে ২৫০ ডলারে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি হয়ে আসছে। কিন্তু বন্যার কারণে ভারতের নাসিকে পেঁয়াজের দাম বেড়ে যাওয়ায় পেঁয়াজ রপ্তানিকারকরা স্থানীয় বাজারদর হিসাবে ৭৫০ ডলারের নিচে বাংলাদেশে পেঁয়াজ রপ্তানি করবে না বলে সিদ্ধান্ত নেয়। এরপর আটকে দেওয়া হয় বাংলাদেশে ঢোকার অপেক্ষায় থাকা পেঁয়াজ বোঝাই ট্রাকগুলো।
বেনাপোল কাস্টমস কমিশনার আজিজুর রহমান বলেন, 'ভারত কোনো ঘোষণা ছাড়াই মূল্যবৃদ্ধির দাবিতে বাংলাদেশে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে। পারস্পরিক বাণিজ্যে সমঝোতার বিকল্প নেই। তারা রপ্তানি বন্ধ না করে পেঁয়াজের আমাদানিকারকদের সময় বেঁধে দিতে পারতেন। হঠাৎ নেওয়া এমন সিদ্ধান্তে বিপাকে পড়েছেন এ পারের আমদানিকারকেরা।'