মহামারিতে মার্কিন ধনকুবেরদের সম্পদ বেড়েছে ১ লাখ কোটি ডলারের বেশি
করোনাভাইরাস মহামারির পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের ৬৬০ বিলিয়নিয়ারের সম্পদ আরও এক লাখ ১০ হাজার কোটি ডলার বেড়েছে। দেশটির শীর্ষ থিঙ্ক ট্যাঙ্ক- ইনস্টিটিউট ফর পলিসি স্টাডি (আইপিএস) প্রকাশিত সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে এতথ্য জানানো হয়।
প্রতিবেদনে প্রকাশ, গেল বছরের মার্চে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কোভিড-১৯'কে বিশ্বমারি বলে ঘোষণা দেওয়ার পর থেকে মার্কিন ধনকুবেরদের সম্পদ ৩৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি লক্ষ্য করে।
২০২০ সালের ১৮ মার্চে এসব বিলিয়নিয়ারের মোট বিত্ত ছিল ৩ লাখ কোটি ডলারের কম। সেটাই এখন ফুলেফেঁপে ৪ লাখ ১০ হাজার কোটি ডলারে উন্নীত হয়েছে বলে ফোর্বস ম্যাগাজিনের দেওয়া তথ্যসূত্রে জানানো হয়েছে। এসময়ে নতুন করে শত কোটি ডলারের অধিকারী বা বিলিয়নিয়ার হয়েছেন ৪৬ জন। ফলে মহামারির আগের ৬১৪ জন সংখ্যাটি এখন ৬৬০ জনে রূপ নিয়েছে।
এব্যাপারে আইপিসি'র অসাম্য বিষয়ক গবেষণা উদ্যোগের পরিচালক চাক কলিন্স ব্যাখ্যা করেন, "মহামারির ফলে সম্পদের আহরণের অন্যায্য সুযোগ তৈরি হয়, বিলিয়নিয়াররা তারই ফায়দা লুটেছেন। প্রধানত ছোট ও মাঝারি ব্যবসা অর্থ সঙ্কটে বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কমেছে তাদের পণ্য ও সেবার বাজার প্রতিযোগিতা। অর্থাৎ, বড় কোম্পানিগুলো আরও বড় হয়েছে। এছাড়া, প্রযুক্তি ব্যবসায় তাদের একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ একাজের সহযোগী হয়। তাছাড়া, মহামারির মধ্যে নানা প্রকার ব্যতিক্রমী সেবার ব্যবসা বাড়ে। সম্পদ স্ফীতির সেটাও বড় কারণ এবং এটা নজিরবিহীন ঘটনা। অর্থনীতির দুঃসময়ে এভাবে অর্জিত বিত্তের উপর বাড়তি কর আদায় করে- তা দেশের অর্থনৈতিক উত্তরণে ব্যয় করা উচিৎ।"
কলিন্স জানান, "মহামারির শুরু থেকে বিলিয়নিয়াররা যে পরিমাণ সম্পদ অর্জন করেছেন; তা দিয়ে বাইডেন প্রশাসনের নতুন করোনাভাইরাস রিলিফ প্যাকেজের আওতায় প্রস্তাবিত সকল কর্মজীবী পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দেওয়া সম্ভব। এতে করে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে ধনী পরিবারগুলো মহামারির আগে যেমন বিত্তের মালিক ছিলেন, তেমনই থাকবেন। অর্থাৎ, তাদের খুব একটা ক্ষতিও হবে না।"
সহমত পোষণ করে 'আমেরিকানস ফর ট্যাক্স ফেয়ারনেস' সংস্থার নির্বাহী পরিচালক ফ্রাঙ্ক ক্লেমেন্তে বলেন, "আমাদের দেশের মহামারি ব্যবস্থাপনা এখন সুযোগ্য এবং যত্নশীল নেতৃত্বের হাতে। এনিয়ে আমরা উচ্ছসিত হতেই পারি। তবে পরিতাপের বিষয়; সঙ্কটকালে মার্কিন বিলিয়নিয়াররা জাতীয় প্রচেষ্টায় ফলপ্রসূ সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেননি। এমনকি তাদের সম্পদের চূড়া আকাশছোঁয়ার পরও নয়।"
তিনি আরও বলেন, "কোভিডে কর্মজীবী মানুষের এখন চরম দুরাবস্থা, বিশেষ করে অশ্বেতাঙ্গ এবং নিম্ন- আয়ের জনগোষ্ঠীর মধ্যেই তা বেশি। অন্যদিকে, প্রায় সকল বিলিয়নিয়ারের বিত্ত রকেট গতিতে বেড়েছে। এজন্যেই আমাদের একটি স্বচ্ছ ও বৈষম্যহীন কর নীতিমালা প্রয়োজন। জো বাইডেন নির্বাচিত হওয়ার আগে এ প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, এখন তা বাস্তবায়ন করার সময়।"
মহামারিতে সবচেয়ে বেশি ধনী হয়েছেন টেসলার মুখ্য নির্বাহী ইলন মাস্ক। ফলে তিনিই এখন বিশ্বসেরা ধনী। পুঁজিবাজারে তার মালিকানায় থাকা শেয়ারের দরবৃদ্ধির সুবাদে তার মোট সম্পদ আজ মঙ্গলবার (২৬ জানুয়ারি) নাগাদ ২০ হাজার ৯শ' কোটি ডলারের ঘরে, বলে জানা গেছে ব্লুমবার্গ বিলিয়নিয়ার ইনডেক্স সূত্রে। টেসলার ২০ শতাংশ শেয়ারের মালিক মাস্ক অবশ্য ২০২০ সালের শুরুতে বিশ্বের ৩৫তম ধনী ছিলেন।
৪.১ ট্রিলিয়ন ডলার অঙ্কের সম্পদ নিয়ে মার্কিন বিলিয়নিয়াররা এখন যুক্তরাষ্ট্রের তুলনামূলক কম সম্পন্নদের অর্ধেক জনসংখ্যা বা সাড়ে ১৬ কোটি নাগরিকের ২.৪ ট্রিলিয়ন সম্পদমুল্যের চাইতে দুই-তৃতীয়াংশ বেশি ধনী।
- সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান