অনলাইনে এমএলএম ব্যবসা: ৬ ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান বন্ধের সিদ্ধান্ত
অনলাইনে মাল্টিলেবেল মার্কেটিং (এমএলএম) ব্যবসা করায় ছয়টি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট ও ফেসবুক পেইজ সাময়িকভাবে বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
যেসব কোম্পানির ওয়েবসাইট বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে- থলে ডট কম, গ্লিটারস আরএসটি ওয়ার্ল্ড, অ্যানেক্স ওয়ার্ল্ডওয়াইড লিমিটেড, এক্সেলেন্ট ওয়ার্ল্ড অ্যাগ্রো ফুড অ্যান্ড কনজিউমার লিমিটেড, আলিফ ওয়ার্ল্ড এবং গ্রিন বাংলা ই-কমার্স লিমিটেড।
বাণিজ্য অতিরিক্ত সচিব ও ডাব্লিউটিও সেলের মহাপরিচালক মো. হাফিজুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়েছে। সভায় ই-কমার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওয়াহেদ তমাল উপস্থিত ছিলেন।
হাফিজুর রহমান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'এসব কোম্পানির বিরুদ্ধে অনলাইনে এমএলএম ব্যবসা করার অভিযোগ ও প্রমাণ পাওয়া গেছে, যা ডিজিটাল কমার্স গাইডলাইন এর পরিপন্থী। এ কারণেই কোম্পানিগুলো সাময়িকভাবে শাট-ডাউন করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।'
'এই ছয়টি কোম্পানির সাতটি ওয়েবসাইট এবং ফেসবুক পেইজগুলোর আইডি বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশনকে (বিটিআরসি) পাঠিয়ে এগুলো বন্ধ করার অনুরোধ জানাবো', জানান তিনি।
সরকার প্রণীত ডিজিটাল কমার্স গাইডলাইন অনুযায়ী, অনলাইনে বা ই-কমার্স কোম্পানিগুলোর এমএলএম ব্যবসা করার সুযোগ নেই।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, বাংলাদেশে এমএলএম ব্যবসার নামে গ্রাহকদের কাছ থেকে অর্থ নিয়ে প্রতারণার সূত্রপাত হয় গত শতকের শেষ দিকে। ২০০০ সালে ডেসটিনি এমএলএম ব্যবসা শুরু করলে তা দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। তার আগে 'যুবক' এমএলএম ব্যবসার মাধ্যমে কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাত করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
২০১২ সালে ডেসটিনির বিরুদ্ধে গ্রাহকের অর্থ আত্মসাত ও অর্থ পাচারের অভিযোগ উঠলে পরের বছর সরকার প্রথমবারের মতো এমএলএম ব্যবসা নীতিমালা প্রণয়ন করে। তাতে বলা হয়েছে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে নিবন্ধন নেওয়া ছাড়া কোন কোম্পানি এমএলএম ব্যবসা পরিচালনা করতে পারবে না।
আলোচিত ই-কমার্স কোম্পানি ইভ্যালি ও ই-অরেঞ্জের বিরুদ্ধে গ্রাহকদের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠার গত বছর আবারও এমএলএম ব্যবসা আলোচনায় আসে। ইভ্যালির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রাসেল এখনও কারাগারে রয়েছেন এবং ই-অরেঞ্জের মালিক সোনিয়া মেহজাবিনও কারাগারে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, ওই নীতিমালা প্রণয়নের পর ডেসটিনি ২০০০-সহ তখনকার বিভিন্ন এমএলএম কোম্পানি রেজিস্ট্রেশনের জন্য আবেদন করলে মন্ত্রণালয় চারটি কোম্পানিকে ব্যবসা করার জন্য লাইসেন্স দিয়েছিল। এই লাইসেন্স প্রতিবছর নবায়ন করতে হয়। কিন্তু ২০১৫ সালের পর কোম্পানি চারটির লাইসেন্স আর নবায়ন করা হয়নি। ফলে বাংলাদেশে এখন বৈধ কোন এমএলএম কোম্পানি নেই।
বিদ্যমান বিধান অনুযায়ী, কেউ অবৈধভাবে এমএলএম ব্যবসা পরিচালনা করলে সর্বোচ্চ ১০ বছরের কারাদণ্ড এবং ৫০ লাখ টাকা অর্থদণ্ডের কথা বলা হয়েছে।