ডলারের বিক্রি বেড়েছে, রিজার্ভ নামতে পারে ৩৯ বিলিয়নের নিচে
ব্যাংকগুলোর চাহিদা মেটাতে মঙ্গলবার রিজার্ভ থেকে ১৫৩ মিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ নিয়ে গত দুই মাসে রিজার্ভ থেকে প্রায় আড়াই বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এতে রিজার্ভ ৩৯ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে যাওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে, টানা দ্বিতীয় দিনের মতো ১৫০ মিলিয়ন ডলারের বেশি বিক্রি করলো বাংলাদেশ ব্যাংক। সোমবার ১৬৪ মিলিয়ন ডলার বিক্রি করা হয়েছিল। চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে এ পর্যন্ত প্রায় দুই মাসে ২.৪৪ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করা হয়েছে। আগের অর্থবছরের পুরো সময় রিজার্ভ থেকে রেকর্ড ৭.৬২ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
ক্রমাগত ডলার বিক্রি করায় মঙ্গলবার দিনশেষে রিজার্ভ গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৩৯.০৪ বিলিয়ন ডলারে। জুলাই মাস শেষে রিজার্ভের এই পরিমাণ ছিল ৩৯.৬০ বিলিয়ন ডলার। এভাবে ডলার বিক্রি অব্যাহত থাকলে আগামী দুয়েকদিনের মধ্যেই রিজার্ভ ৩৯ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে যেতে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
এছাড়া ডলারের বাজার নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সভা করেছে অ্যাসােসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি)। সভায় এবিবি চেয়ারম্যান ও ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সেলিম আর এফ হোসেন ছাড়াও বিভিন্ন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকরা উপস্থিত ছিলেন। এসময় ব্যাংকাররা ডলারের বাজারে স্থিতিশীলতা ফেরাতে করণীয় ও ইন্টারব্যাংক এক্সচেঞ্জ মার্কেট সক্রিয় করা নিয়ে আলোচনা করেছেন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা টিবিএসকে বলেন, ডলারের অস্থিরতা কমিয়ে আনতে অতিরিক্ত মুনাফা করা, ব্যাংকের নেট ওপেন পজিশন (এনওপি) নিয়ে ভুল তথ্য দেওয়ায় ৬টি ব্যাংকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ফলে অন্য ব্যাংকগুলোও সতর্ক হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করায় বাজারে চাপ কম পড়ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সরকারি এলসি সেটেলমেন্টে ডলার সাপোর্ট দিয়ে যাচ্ছে। মূলত বিপিসি ও সারের এলসি পেমেন্টের জন্য এসব ডলার দেওয়া হচ্ছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ডলার সাপোর্ট বাড়ানোতে স্বস্তি প্রকাশ করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাংকগুলো। তাদের মতে, এর ফলে ডলারের জন্য বাজারের ওপর কম নির্ভর করতে হচ্ছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, 'ডলারের বাজার স্থিতিশীল করা আমাদের মূল টার্গেট না। মার্কেট তার নিজস্ব গতিতেই চলবে। জ্বালানীসহ সরকারের কিছু খাতের কেনাকাটায় আমাদের কনসিডার করতে হয়। প্রাইভেট বা রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাংকের কাছে এলসি সেটেলমেন্টের ডলার না থাকলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ডলার বিক্রি করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় আমরা এটাকে অনার করে যাচ্ছি।'
ইমপোর্ট এলসি সেটেলমেন্টে ডলারের দাম কমেছে
মঙ্গলবার রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকগুলো ইমপোর্ট এলসি সেটেলমেন্টে ডলার বিক্রি করেছে সর্বোচ্চ ১০৮ টাকা রেটে। সোমবার সর্বোচ্চ ১০৯ টাকা রেট নেওয়া হয়েছিল। সে হিসাবে ডলারের রেট ১ টাকা কমেছে। তবে বেসরকারি ব্যাংকগুলো এলসি সেটেলমেন্টে ডলারের দাম কিছুটা কম নিচ্ছে কয়েকদিন ধরে।
বেসরকারি একটি ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগের কর্মকর্তা টিবিএসকে বলেন, 'আমরা গড়ে ১০৫ টাকা রেটে ডলার কিনছি। তাই এলসি সেটেলমেন্টের ক্ষেত্রে আমরা ১০৬ টাকা পর্যন্ত রেট দিয়েছি। গত তিনদিন ধরে এমন রেটই চলছে।'
এছাড়া, এক্সচেঞ্জ হাউজগুলো মঙ্গলবার ডলারের দাম কিছুটা কমিয়েছে। এদিন সর্বোচ্চ ১১০ টাকায় হাউজগুলো থেকে রেমিট্যান্সের ডলার সংগ্রহ করা হয়েছে। তবে এখনো বাজারে ডলারের সংকট রয়ে গেছে।
ডলারের সংকট থাকলেও আগামী কয়েকদিনের মধ্যে ডলারের দাম কিছুটা কমে আসতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন অন্তত দুইটি ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগের প্রধান। তারা জানিয়েছেন, ইতিমধ্যে বেসরকারি ব্যাংকগুলো ডলারের দাম কমিয়ে নিয়ে এসেছে। সরকারি ব্যাংকগুলো এখনো ডলারের দাম বেশি নিলেও কয়েকদিনের মধ্যে তারাও সেটি কমিয়ে নিয়ে আসতে পারবেন বলে ধারণা করছেন।
রাষ্ট্রায়ত্ত্ব একটি ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগের প্রধান বলেন, 'এলসি সেটেলমেন্টে আমরা এলসির ধরন ভেদে রেট ফিক্স করে থাকি। সরকারি এলসি'র ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নির্ধারিত ৯৫.০৫ টাকা রেট নেওয়া হচ্ছে। কম এমাউন্টের বেসরকারি এলসি সেটেলমেন্টে আমরা এমন রেটই চার্জ করি। তবে বেসরকারি বড় এলসির ক্ষেত্রে মঙ্গলবার সর্বোচ্চ ১০৮ টাকা রেটে ডলার বিক্রি করা হয়েছে।' এক্সচেঞ্জ হাউজগুলো থেকে রেমিট্যান্সের ডলার সংগ্রহ করায় দাম বেশি নিতে হয় বলে মন্তব্য করেন এই ব্যাংকার।
খোলাবাজারে ডলারের দাম বেড়ে ১১২ টাকা
ব্যাংকে ডলারের দাম কিছুটা কমলেও খোলাবাজারে বেড়েছে ডলারের দাম। মঙ্গলবার মানি চেঞ্জার প্রতিষ্ঠানগুলো ১১২ টাকা রেটে ডলার বিক্রি করেছে। সোমবার ১১১ টাকায় ডলার বিক্রি করেছিল তারা। গত বৃহস্পতিবার নগদ এই ডলার বিক্রি হয়েছিল ১০৯ টাকায়।
এর আগে, অনিয়মের অভিযোগে ৫টি মানি চেঞ্জার প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম স্থগিত করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এছাড়া নানা অভিযোগে ৪২টি মানি চেঞ্জারকে সতর্কও করে বাংলাদেশ ব্যাংক। পাশাপাশি ২৮টি মানি চেঞ্জার প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক অ্যাকাউন্টের তথ্য তলব করেছে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধে কাজ করা বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।