বেশি আমদানি ব্যয়ের কারণে শিল্প ঋণ বেড়েছে ২২ শতাংশ
বিদায়ী অর্থবছরে আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি ও ঋণের সুদহার কম থাকায় কারণে শিল্প খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২২ শতাংশ।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক শিল্প ত্রৈমাসিক প্রতিবেদন অনুসারে, বিদায়ী ২০২২ অর্থবছরে ব্যাংক এবং নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো শিল্প খাতে ৪,৮১,৫১৭ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করেছে, যেখানে ২০২১ অর্থবছরে বিতরণ করা হয়েছিল ৩,৭৪,৭১৯ কোটি টাকা।
খাত সংশ্লিষ্টরা বলেন, কোভিড পরবর্তিতে দেশের অর্থনৈতিক কার্যক্রম স্বাভাবিক ও ঋণের সুদহার কম থাকায় মুলধনি যন্ত্রপতিসহ বিভিন্ন পণ্য আমদানি ব্যাপক হারে বেড়েছে। এছাড়া বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম বৃদ্ধি ও ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমায় ঋণের পরিমাণও বেড়েছে। এর প্রভাব পড়েছে শিল্প খাতের ঋণ প্রবাহে।
ব্যাংকগুলোর এখন ঋণ বিতরণের সর্বোচ্চ রেট ৯ শতাংশ। যদিও কেন্দ্রীয় ব্যাংক রেপো সুদ হার ৫০ পয়সা বাড়িয়ে ৫.৫০ করেছে। এর ফলে ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ কম পেলেও গ্রাহকরা সহজে স্বল্প রেটে ঋণ নিতে পেরেছে। ফলে সবমিলিয়ে ঋণ বিতরণ বেড়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) সিএমএসএমই খাতে ঋণ বিতরণ হয়েছে ৫৬,৪৮৪ কোটি টাকা, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩৫ শতাংশ বেশি।
এছাড়া, জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকের তুলনায় এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে ঋণ বিতরণ বেড়েছে ৯ শতাংশ।
মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেডের (এমটিবি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ মাহবুবুর রহমান টিবিএসকে বলেন, "কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পলিসি রেট বাড়লেও প্রাইভেট সেক্টেরের কার্যক্রম সচল রাখতে ব্যাংক ঋণের সুদহার বাড়ানো হয়নি। যার ফলে গ্রাহকরা কম রেটে ব্যাংক ঋণ পেয়েছে। ফলে বেসরকারি খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধি বেড়েছে। এতে শিল্প খাতেও ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে।"
এই সময়ের মধ্যে, টাকার বিপরীতে ডলারের দাম বৃদ্ধির কারণে উচ্চ আমদানি ব্যয়ে জুন মাসে মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৭.৫৬ শতাংশ হয়েছে।
২০২২ অর্থবছরের শেষ মাসে বেসরকারি খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধি ১৩.৬৬%-এ পৌঁছেছে, যা গত ৪৫ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। আমদানি পেমেন্ট বৃদ্ধি এ প্রবৃদ্ধির কারণ।
চলতি অর্থবছরের মুদ্রানীতি বিবৃতি অনুসারে, বেসরকারি খাতের ঋণ বৃদ্ধির সীমা ২০২২ অর্থবছরে যেখানে ছিল ১৪.৮ শতাংশ, সেখানে ২০২৩ অর্থবছরে তা ১৪.১ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে।
তবুও, চলতি অর্থবছরের প্রথম মাসে (জুলাই) ক্রেডিট প্রবাহ বেড়ে ১৩.৯৫ শতাংশ হয়েছে, যা চলতি অর্থবছরের জন্য নির্ধারিত আর্থিক সর্বোচ্চ সীমার কাছাকাছি ছিল।
গত অর্থবছরে, দেশের আমদানি অর্থপ্রদান প্রায় ৩৬ শতাংশ বেড়ে ৮২.৪৯ বিলিয়ন ডলার হয়েছে; একইসময় রপ্তানি থেকে প্রাপ্তির পরিমাণ ছিল ৪৯.২৫ বিলিয়ন ডলার। ২০২২ অর্থবছরে বাণিজ্য ঘাটতি ছিল ৩৩.২৪ বিলিয়ন ডলার।