গোপনে শেয়ার বিক্রি করেন অ্যাপেক্স ফুডসের স্পন্সর, পরিচালকেরা
চিংড়ি রপ্তানিকারক এপেক্স ফুডস লিমিটেডের স্পন্সর ও পরিচালকেরা গোপনে ২.৯% শেয়ার বিক্রি করেছেন। টাকার অঙ্কে যার পরিমাণ প্রায় ৩৮ কোটি টাকা। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
পাশাপাশি কোম্পানিটির দুইজন পরিচালক বোর্ড থেকে পদত্যাগ করেছেন। অথচ নিয়ম অনুযায়ী কোম্পানিটি এই বিষয়গুলো ডিএসই-কে জানায়নি।
দ্য বোর্ড অফ দ্য কোম্পানি বা কোম্পানির পর্ষদ শেয়ারহোল্ডারদের না জানিয়ে বোর্ডে পরিবর্তন এনেছে, যা নিরাপত্তা আইনের লঙ্ঘন। ডিএসই বিষয়টি দেখছে বলে জানিয়েছেন এক কর্মকর্তা।
ডিএসই সূত্র জানায়, চলতি বছরের মার্চ থেকে এপ্রিল মাসের মধ্যে কোম্পানিটির বেশ কয়েকজন স্পন্সর এবং ডিরেক্টর তাদের কাছে থাকা শেয়ারের মধ্যে ১.৬৫ লাখ শেয়ার সেকেন্ডারি মার্কেটে বিক্রি করে দেয়। অথচ এর জন্য তারা ডিএসই-তে কোন ধরণের ঘোষণা দেয়নি। তবে কোম্পানিটির কোন পরিচালক এই শেয়ারগুলো বিক্রি করেছে এ বিষয়ে ডিএসই'র কোন কর্মকর্তা কোন তথ্য জানাননি। বিষয়টি যাচাই করে দেখা হচ্ছে বলে জানান ডিএসই'র এক কর্মকর্তা।
এই বিষয়ে কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহরিয়ার আহমেদের মোবাইলে কল করা হলে তিনি কেটে দেন। পরবর্তীতে কোম্পানি সেক্রেটারি কামরুল ইসলামের মোবাইলে কল করা হলে তিনি বিভিন্ন টালবাহানা করে লাইন কেটে দেন। পরে তার নাম্বারে মেসেজ পাঠানো হলেও তিনি কোন উত্তর দেননি।
এদিকে গত বছরের ডিসেম্বর থেকে গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত অ্যাপেক্স ফুডসের শেয়ারদর ১২৭.৬ টাকা থেকে প্রায় ৯৪ শতাংশ বেড়ে ২৪৫.৪০ টাকায় লেনদেন হয়। এই দর বৃদ্ধির কারণ জানতে চেয়ে ডিএসই থেকে দুই দফা নোটিশ দেয়া হয়। এর জবাবে কোম্পানিটি জানায়, দর বৃদ্ধি হতে পারে এমন কোন তথ্য কোম্পানিটি প্রকাশ করেনি।
এই বছরের ফেব্রুয়ারিতে হালনাগাদ করা কোম্পানির স্পন্সর এবং ডিরেক্টরদের শেয়ারহোল্ডিং রিপোর্ট অনুযায়ী, অ্যাপেক্স স্পিনিংয়ে অ্যাপেক্স ফুডসের ১.৬৯ লাখ শেয়ার রয়েছে, যেখানে অ্যাপেক্স লনজারের আছে ১০,৮০০ শেয়ার, জাফর আহমেদের ১৩.২০ লাখ, জহুর আহমেদের ১.৬০ লাখ, শাহরিয়ার আহমেদের ৫.৬৩ লাখ এবং অসীম কুমার বড়ুয়ার ৭,৫০০ শেয়ার রয়েছে।
২০২০-২১ হিসাব বছরের বার্ষিক সাধারণ সভায় কোম্পানিটির বোর্ডে পরিচালক পদে জাফর আহমেদ, জহুর আহমেদ, অসীম কুমার বড়ুয়া, মাহির আহমেদ ও ইফিয়াজ আহমেদের নিয়োগ সাধারণ শেয়ারহোল্ডাররা অনুমোদন করেছিল। তবে মাহির আহমেদ ও ইফিয়াজ আহমেদের কাছে কোম্পানিটির কোন শেয়ার নেই। তারা মনোনীত পরিচালক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন।
কিন্তু এই দুই পরিচালক চলতি বছরের মার্চে কোম্পানির বোর্ড থেকে সরে গেছেন। কোম্পানিতে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা নিয়ে অন্তর্দ্বন্দ্বের কারণে এমনটা হচ্ছে বলে ডিএসই সূত্র জানায়।
১৯৮১ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিটির বর্তমান পেইড-আপ ক্যাপিটাল ৫.৭০ কোটি টাকা। এর মোট শেয়ারের ৩৬.০৬% স্পনসর এবং পরিচালকদের হাতে রয়েছে, শেয়ারহোল্ডারদের হাতে ৫০.৬৪% শেয়ার।
তবে আগস্ট মাসে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা সেকেন্ডারি মার্কেট থেকে কোম্পানিটির ১০ শতাংশের বেশি শেয়ার কিনেছেন।
এদিকে, ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে অ্যাপেক্স ফুডসের চিংড়ি রপ্তানি ৬৫% বৃদ্ধি পেয়ে ৩১৬ কোটিতে দাঁড়ায়। তবে এই ব্যবসায় খরচ বেশি হওয়ায় কোম্পানিটির মুনাফা হয়েছে ১.৪২ কোটি টাকা।