প্রতি কেজি পাম অয়েল ১৩৩ টাকা ও চিনি ৮৪ টাকা করার পক্ষে ট্যারিফ কমিশন
বিশ্ববাজারের দর পরিস্থিতি ও আমদানি ব্যয় বিবেচনায় প্রতি লিটার পাম অয়েলের দাম ১৩৩ টাকা এবং প্রতি কেজি চিনির দাম ৮৪ টাকা হতে পারে বলে মনে করছে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন (বিটিটিসি)।
আর সয়াবিন তেলের দাম বর্তমানে যা আছে, তাই যৌক্তিক বলে মনে করছে সংস্থাটি।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, এই তিন পণ্যের দাম সম্পর্কিত মতামত গত সপ্তাহে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে সংস্থাটি। বর্তমানে পাম অয়েল ও চিনি বিটিটিসি'র দেওয়া দরের চাইতে বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাব অনুযায়ী, মঙ্গলবার (২০ সেপ্টেম্বর) খুচরা বাজারে পাম অয়েলের মূল্য ছিল লিটার প্রতি ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকা এবং এবং চিনি প্রতি কেজি ৯০ থেকে ৯৫ টাকা। আর সয়াবিন তেল ১৮৫ থেকে ১৯২ টাকা।
ট্যারিফ কমিশনের দর বিবেচনায় নিলে প্রতি কেজি পাম অয়েল ১২ থেকে ১৭ টাকা এবং প্রতি কেজি চিনির দাম ৬ থেকে ১১ টাকা পর্যন্ত কমার সুযোগ রয়েছে।
গত ৩০ আগস্ট চাল, আটা, ময়দা, সয়াবিন তেল, পাম তেল, চিনি, ডাল এবং এমএস রড ও সিমেন্টের দাম বেঁধে দেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বসে ট্যারিফ কমিশন এসব পণ্যের দাম নির্ধারণে কাজ করবে বলে জানান বাণিজ্যমন্ত্রী।
অবশ্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ঘোষণার পর কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, দাম নির্ধারণ করে দেয়া ঠিক হবে না।
এর মধ্যে আলোচ্য তিন পণ্যের দাম কত হওয়া উচিত, তার উপর একটি প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে পাঠায় ট্যারিফ কমিশন।
ট্যারিফ কমিশনের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, ভোজ্য তেল ও চিনির দাম নির্ধারণ করে থাকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। আমাদের প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে – এখন দাম নির্ধারণের সিদ্ধান্ত নেবে মন্ত্রণালয়। তবে এর বাইরে কৃষি পণ্যের বিষয়ে কৃষি মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নেবে, এ বিষয়ে ট্যারিফ কমিশন কাজ করছে না বলে জানান তিনি।
এদিকে ট্যারিফ কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী ভোজ্য তেল ও চিনির দাম বেঁধে দেওয়ার বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত আসবে কিনা, তা জানতে মঙ্গলবার বাণিজ্যমন্ত্রী ও বাণিজ্য সচিবের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কথা বলা সম্ভব হয়নি।
তবে বাণিজ্যমন্ত্রী গত শনিবার ওভারসিজ করেসপন্ডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ওক্যাব) এক সভায় বলেছেন, তারা ভোজ্যতেল ও চিনির দাম বেঁধে দিতে পারেন। এটা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। কিন্তু বাকি পণ্যের দাম বেঁধে দেওয়ার দায়িত্ব কৃষি মন্ত্রণালয়ের। দাম বেঁধে দেওয়ার ঘোষণা আসতে হবে কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে।
ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সিনিয়র সহ-সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু টিবিএসকে বলেন, 'ট্যারিফ কমিশন ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলেই মনে করি তাদের মতামত দিয়েছে। সেক্ষেত্রে তাদের মতামতের ভিত্তিতে দাম নির্ধারণে আমাদের কোন আপত্তি নেই।'
এছাড়া এমএস রড ও সিমেন্টের দাম নির্ধারণ নিয়ে কাজ চলমান রয়েছে জানিয়ে ট্যারিফ কমিশনের ওই কর্মকর্তা বলেন, 'এর সঙ্গে ১৬ থেকে ১৭টি কাঁচামাল ব্যবহার হয়। প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করে আমরা কাজ করছি। এজন্য সময় লাগবে, আমরা সময় চেয়েছি।'
কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের (ড্যাপ) মহাপরিচালক আ. গাফফার খান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'পণ্যের দর নির্ধারণের বিষয়ে ড্যাপ কাজ করছে না, এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিবে মন্ত্রণালয়। তবে আমরা প্রতিদিন বাজার যাচাই করে পণ্যের অ্যাভারেজ প্রাইস কত হওয়া উচিত, তা ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে থাকি।'
ড্যাপ-এর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত মঙ্গলবারের তথ্য অনুযায়ী, চিনির দাম প্রতি কেজি ৭৪ টাকা ও পাম তেল লিটার প্রতি ১৪৫ টাকা ও সয়াবিন তেলের দাম ১৯২ টাকা যৌক্তিক খুচরা মূল্য হওয়া উচিত বলে বলা হয়।