দাম বেশি রাখার অভিযোগ: ইউনিলিভার, সিটি গ্রুপসহ ৮ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত বিভিন্ন নিত্যপণ্যের দাম অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধির অভিযোগে ইউনিলিভার, সিটি গ্রুপ, কাজী ফার্ম, প্যারাগন পোল্ট্রি, রশিদ এগ্রোসহ ৮টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা করেছে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন।
কমিশন সূত্রে জানা যায়, চালের দুই ব্যবসায়ী রশিদ এগ্রো অ্যান্ড ফুড প্রডাক্ট লিমিটেডের আব্দুর রশিদ ও নওগাঁর বেলকন গ্রুপের মালিক বেলাল হোসেন এবং কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান হিসাবে সিটি গ্রুপ ও বাংলাদেশ এডিবল অয়েল লিমিটেডের বিরুদ্ধে চালের অতিরিক্ত মূল্যবৃদ্ধির জন্য মামলা করা হয়েছে।
ডিম উৎপাদনকারী ও বাজারজাতকারী ৩টি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের মধ্যে প্যারাগন পোল্ট্রি, কাজী ফার্ম ও ডিম ব্যবসায়ী আড়তদার বহুমুখী সমবায় সমিতির সভাপতি আমানত উল্লাহর বিরুদ্ধে মামলা করেছে কমিশন। এছাড়া মুরগি উৎপাদনকারী হিসাবে কাজী ফার্ম ও প্যারাগন ফার্মের বিরুদ্ধে আলাদা মামলা করা হয়েছে। সাবান, ডিটারজেন্ট, পেস্ট উৎপাদন ও বাজারজাতকারী হিসাবে ইউনিলিভারের বিরুদ্ধেও মামলা করেছে কমিশন।
কমিশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছে, ২১ সেপ্টেম্বর কমিশন স্বপ্রণোদিত হয়ে এ মামলা দায়ের করেছে। কমিশনের নিজস্ব কোর্টে আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর শুনানীতে উপস্থিত হতে এসব কোম্পানিকে নোটিশও দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে প্রতিযোগিতা কমিশনের কর্মকর্তারা।
বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারপারসন মোঃ মফিজুল ইসলাম টিবিএসকে বলেন, 'সাম্প্রতিক সময়ে যেসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান বাজারে অস্বাভাবিকভাবে বিভিন্ন পণ্যের দাম বাড়িয়ে বাজার অস্থিতিশীল করেছে তাদের বিরুদ্ধে এসব মামলা দায়ের করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে আরও ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে স্বপ্রণোদিত মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।'
তবে মামলা বা নোটিশের বিষয়ে প্রতিযোগিতা কমিশন এখনো কোম্পানিগুলোকে কোনো চিঠি বা পত্র দেয়নি বলে জানিয়েছে বিবাদী ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানগুলো।
ইউনিলিভার বাংলাদেশের হেড অব কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্স শামীমা আক্তার বলেন, 'আমরা এ ধরনের কোনো তথ্য পাইনি। আমাদের বিরুদ্ধে এ মামলা হওয়ার যৌক্তিকতাও নেই। কারণ প্রতিযোগিতার নীতি লঙঘন হয়, এমন কোনো মার্কেটিং বা বিক্রয় ব্যবস্থা আমাদের নেই।'
সিটি গ্রুপের পরিচালক বিশ্বজিৎ সাহা বলেন, 'আমরা এখনো চিঠি পাইনি। তবে অনেক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধেই প্রতিযোগিতা কমিশন এ নোটিশ দিচ্ছে। আইন মেনেই আমরা ব্যবসা করছি।'
জানা গেছে, প্রতিযোগিতা কমিশনের ১৫ ও ১৬ ধারা অনুযায়ী এই মামলাগুলো করা হয়েছে। ধারা ১৫-তে বলা হয়েছে, বাজারে প্রভাব বিস্তার করে মনোপলি অবস্থার সৃষ্টি করলে তারা শাস্তির আওতায় আসবে। আর ধারা ১৬-তে বলা হয়েছে, কোন পণ্যের বাজারজাতে বা উৎপাদনে লিডিং পজিশনে থেকে এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে পণ্যের দামে কারসাজি করলে তাদের অপরাধও শাস্তিযোগ্য।
কমিশন সূত্রে জানা গেছে, ধারাবাহিকভাবে চলতি মাসের ২৬ তারিখ থেকে কোম্পানিগুলোকে শুনানির জন্য ডাকা হয়েছে।
সাম্প্রতিক সময়ে দেশে চাল, তেল, ডিম, মুরগি ও সাবান, ডিটারজেন্ট, পেস্টের বাজারে অস্থিরতা দেখা গেছে। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর নিয়মিত বাজার মনিটরিংয়ের পাশাপাশি এসব পণ্যের উৎপাদনকারী ও বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিয়ে সভা করেছে। যেখানে পণ্যগুলোর দাম অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধির অভিযোগ তোলা হয়েছে।
সম্প্রতি এক অনুষ্ঠান শেষে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএইচএম শফিকুজ্জামান জানান, যারা বাজারে অস্থিরতা তৈরির পেছনে দায়ী তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ভোক্তা অধিদপ্তর তাদের তদন্ত শেষে ডিমের বাজারে কারসাজিতে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে একটি প্রতিবেদন পাঠিয়েছে।
এদিকে কয়েকমাস ধরেই বাজারে চালের দাম বেশি। মাসখানেক আগে মোটা চালের দাম উঠেছিল ৬০ টাকায়, যা রেকর্ড পরিমাণ দাম। একইভাবে চিকন চালের দাম উঠেছিল ৮৫ টাকায়। বাজার অভিযান শুরু এবং চাল আমদানির কারণে এটা আবার কমতে শুরু করেছে।
কমিশনের চেয়ারপারসন মোঃ মফিজুল ইসলাম টিবিএসকে জানান, 'কিছু কর্পোরেট ব্যবসায়ী রয়েছে যারা ৬০-৬৫ টাকার চাল শুধু ব্যাগিং করে ৮০-৮৫ টাকায় বিক্রি করছে। এটা চালের দাম বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছে।
একইভাবে অস্থিরতা তৈরি করে ব্যবসায়ীরা ডিমের হালি ৬০-৬৫ টাকা, ব্রয়লার মুরগি ২১০ টাকায় নিয়ে যায়। অভিযানের কারণে ডিম ও মুরগির দাম মাঝে কিছুদিন কম থাকলেও আবার বেড়ে এখন ব্রয়লার মুরগির ডিম ৪৫-৫০ টাকা হালি এবং ব্রয়লার মুরগি ১৭০-১৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
একইভাবে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো কাঁচামালের দাম বৃদ্ধির অজুহাত দিলেও ভোক্তা অধিদপ্তরের পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে সাবান, পেস্ট ও ডিটারজেন্টের দাম যতটা বৃদ্ধির কথা তার চেয়ে বেশি বেড়েছে।