সেপ্টেম্বরে চাল-গমসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যে এলসি ওপেনিং বেড়েছে
দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে সেপ্টেম্বরে চাল, গম, চিনির মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের এলসি খোলা বেড়েছে আগের মাসের তুলনায়। তবে ক্যাপিটাল মেশিনারিজ, বিভিন্ন শিল্পে ব্যবহৃত মেশিনারিজ বা স্ক্র্যাপ ভ্যাসেলের মতো পণ্য আমদানিও বেড়েছে সেইসঙ্গে।
বিশ্বের অনেক দেশ যেখানে খাদ্যাভাবের আশঙ্কার কথা বলছে, সেখানে দেশে খাদ্যপণ্যের আমদানি এলসি খোলাকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন অর্থনীতিবিদেরা। তবে এসবের আড়ালে যেন টাকা পাচার না হয়, সেদিকেও নজর রাখার আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, আগস্ট মাসে চাল, গম, চিনি, কয়লা, স্ক্র্যাপ ভ্যাসেল, র' কটন, ব্যাক টু ব্যাক এলসি, সার, জ্বালানী তেল, ক্যাপিটাল মেশিনারিজ ও বিভিন্ন শিল্পে ব্যবহৃত মেশিনারিজ আমদানি করার জন্য ১.৭৩ বিলিয়ন ডলারের এলসি খোলা হয়েছিল।
সেপ্টেম্বরে এসে এই ১১ পণ্যের জন্য এলসি খোলা হয়েছে ৩.১৫ বিলিয়ন ডলারের। অর্থাৎ এসব পণ্যে আমদানি এলসি খোলা আগের মাসের তুলনায় ১.৪২ বিলিয়ন ডলার বেড়ে গেছে। স্ক্র্যাপ ভ্যাসেল ও জ্বালানী তেল বাদে বাকি পণ্যগুলোর এলসি সেটেলমেন্টও আগের মাসের তুলনায় বেড়েছে।
আগস্টে চাল আমদানির জন্য যেখানে মাত্র ৪৩ মিলিয়ন ডলারের এলসি খোলা হয়েছিল, সেপ্টেম্বরে সেটি ৫৮৫% বেড়ে ২৯৫ মিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। সেইসঙ্গে গম আমদানির এলসিও বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। আগস্টে যেখানে ১৭৫ মিলিয়ন ডলারের গম আমদানি এলসি খোলা হয়েছিল, সেপ্টেম্বরে সেটি হয়েছে ৩৫৮ মিলিয়ন ডলার।
আগস্টে চিনির জন্য ৬ মিলিয়ন ডলারের এলসি খোলা বেড়ে সেপ্টেম্বরে হয়েছে ৬১ মিলিয়ন ডলার। গত মাসখানেক ধরে দেশে চিনির দাম বেড়েছে। তাই চিনির আমদানি এলসি খোলা বৃদ্ধিকে বাজারের জন্য সহায়ক বলছেন অর্থনীতিবিদেরা।
আগস্টের তুলনায় সেপ্টেম্বরে জ্বালানী তেলের এলসি খোলাও বেড়েছে প্রায় ১৫০ মিলিয়ন ডলারের মতো। আগের মাসের ২৪৩ মিলিয়ন থেকে বাড়িয়ে সেপ্টেম্বরে এই পণ্যের এলসি খোলা হয়েছে ৩৯৫ মিলিয়ন ডলারের। সেইসঙ্গে কয়লা আমদানিও বাড়াতে চাইছে সরকার। জুলাই ও আগস্টে যেখানে ২১ ও ৩৬ মিলিয়ন ডলারের এলসি খোলা হয়েছিল, সেখানে সেপ্টেম্বরে ১৫৫ মিলিয়ন ডলারের এলসি খোলা হয়েছে। খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পায়রা কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জ্বালানীর জন্য এসব এলসি খুলেছে সরকার।
সেইসঙ্গে চাষের মৌসুমে সারের অভাব যেন না হয়, এজন্য সার আমদানির জন্য এলসি খোলা আগের মাসের তুলনায় বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। আগস্টে যেখানে মাত্র ৮৭ মিলিয়ন ডলারের এলসি খোলা হয়েছিল, সেপ্টেম্বরে সেটি ৩৫৪% বেড়ে ৩৯৫ মিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে।
খাদ্যপণ্যে আমদানির জন্য ঋণপত্র খোলা বাড়িয়ে দেয়ার বিষয়ে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান মনে করছেন, সরকার খাদ্য নিরাপত্তা জোরদার করার জন্য বেশি পরিমাণে চাল ও গম আমদানি করা বাড়িয়েছে।
তিনি টিবিএসকে বলেন, 'চাল ও গম আমদানি বাড়ানোর প্রক্রিয়া করা হচ্ছে বেসরকারি খাতের মাধ্যমে। বর্তমানে দেশে চালের মজুদ কম রয়েছে। ফলে সরকার চাল ও গমের মজুদ আগের চেয়ে বাড়াতে চায়। এজন্য সরকার চাল আমদানি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বেসরকারি খাতের মাধ্যমে আমদানি করে সরকার চাল কিনবে। এছাড়া এক কোটি নিম্ন আয়ের মানুষকে ১৫ টাকা কেজি দরে চাল দিবে। ফলে এই কর্মসূচি ও মজুদ রাখার জন্যও সরকারের এই মুহূর্তে বেশি পরিমাণে চাল আমদানি করতে হচ্ছে।'
তিনি আরো বলেন, 'ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের জন্য এক রকমের সংকট তৈরি হয়েছিল। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য আগাম সতর্কতা হিসাবে এগুলো বেশি পরিমাণে আমদানি করা হচ্ছে।'
জ্বালানী নিরাপত্তা নিশ্চিত করা প্রয়োজন উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'কয়লা ও জ্বালানী তেলের আমদানি এলসি খোলাও আগের মাসের তুলনায় বাড়ানো সরকারের জ্বালানী নিরাপত্তার নিশ্চিত করার বিষয়টিই বোঝাচ্ছে। এটিকে আমি পজেটিভই বলবো।'
ক্যাপিটাল মেশিনারিজের আমদানি এলসি খোলা উৎপাদন বাড়াতে সাহায্য করবে মন্তব্য করে এ অর্থনীতিবিদ বলেন, 'ওভার ইনভয়েসিং বা আন্ডার ইনভয়েসিং এর মাধ্যমে টাকা যেন পাচার না হয় সেদিকেও আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে।'
কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য, সার, জ্বালানী ও সরকারি আমদানি এলসি সেটেলমেন্টের ক্ষেত্রে রিজার্ভ থেকে রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকগুলোতে ডলার দেওয়া হচ্ছে। মঙ্গলবার রিজার্ভ থেকে ৩৫ মিলিয়ন ডলার বিক্রি করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে এ পর্যন্ত ৫.৬০ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। মঙ্গলবার দিনশেষে রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ৩৪.০৯ বিলিয়ন ডলারে।