সহজে ঋণ পেতে স্টার্ট আপ ফান্ড স্থাপনের আহ্বান জানালেন নারী উদ্যোক্তারা
সহজে ঋণ পেতে স্টার্ট আপ তহবিল স্থাপনের আহ্বান জানিয়েছেন দেশের নারী উদ্যোক্তারা। সফল ব্যবসায়ী হয়ে ওঠার পথে নারীরা নানা রকমের বৈষম্যের শিকার বলেও মন্তব্য করেন তারা।
বুধবার রাজধানীর একটি হোটেলে ইন্টারন্যাশনাল ওম্যান এন্ট্রাপ্রনোর সামিট উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ব্যাংক ঋণ পেতে ট্রেড লাইসেন্স ও পরিবেশগত ছাড়পত্রসহ বিভিন্ন নথি পেতে নারী উদ্যোক্তাদের যেসব অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয় তা তুলে ধরা হয়।
বাংলাদেশ ইন্ডিয়া বিজনেস কাউন্সিল (বিআইবিসি) ও বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভল্পমেন্ট অথরিটি (বিডা)-র যৌথ আয়োজনে দুই দিন ব্যাপী সামিটের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরিন শারমিন চৌধুরী। নারী উদ্যোক্তাদের অর্থায়ন পেতে নানা সমস্যার কথা তিনি তুলে ধরেন।
সহজে ঋণ পেতে নারী উদ্যোক্তাদের নীতি সহায়তা প্রয়োজন বলে তিনি মন্তব্য করেন।
নারী উদ্যোক্তাদের ১০ লাখ টাকা বা তারও বেশি জামানতবিহীণ ঋণ দেওয়ার বিষয়ে সরকারের বিধান থাকলেও তার সঠিক বাস্তবায়ন নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, নারীদের পক্ষে নিজেদের জন্য জামানত যোগাড় করা কঠিন।
তিনি আরও বলেন, অনেকক্ষেত্রেই আমরা দেখেছি বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে তথ্য সঠিকভাবে প্রচারিত হয় না।
এ লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা জানি নারীরা সাধারণত ঋণ খেলাপি হন না।
প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেন, নারীরা এখনো জেন্ডার বৈষম্যের শিকার।
'আমার মনে হয় নারীদের সামনে এখনো অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। তারা বৈষম্যের শিকার। পুরুষদের উচিত মানসিকরা বদলে এগিয়ে আসা'।
দুই দিনের এই সামিটের প্রথম দিনে গ্রাজুয়েশন অব এসএমই'স শীর্ষক একটি আলোচনায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে বিজনেস ইনিশিয়েটিভ লিডিং ডেভলপমেন্ট (বিল্ড)-এর চেয়ারপারসন নিহাদ কবির একটি পরিসংখ্যানের উল্লেখ করে বলেন, এখনো মাত্র ৬ শতাংশ এসএমই উদোক্তা ব্যাংক থেকে ঋণ পায়। বাকী অর্থ নিজেদের সঞ্চিত কিংবা অন্যদের কাছ থেকে নিয়ে অর্থায়ন করতে হয়।
তিনি বলেন, ব্যাংকে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের বলা হয় তাদের প্রয়োজনীয় অ্যাকাউন্ট, ডকুমেন্টেশন নেই। ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য কেবল আইডি কার্ডের মতো জরুরি ডকুমেন্টের ভিত্তিতে ঋণ গ্রহণের সুযোগ থাকা উচিত বলে তিনি মন্তব্য করেন।
নারী উদ্যোক্তাদের সহায়তার জন্য সরকারের স্পেশাল ফাইন্যান্সিয়াল ইনস্টিটিউশন গঠন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ব্যাংকগুলোকে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ এসএমই উদ্যোক্তাদের সরবরাহের নির্দেশনা প্রদান এবং পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ জোরদার করা ওপর গুরুত্ব দেন মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই)-এর সাবেক এই প্রেসিডেন্ট।
অ্যাপেনক্স ফুটওয়্যার লিমিটেডের পরিচালক এবং এমসিসিআই-এর সাবেক প্রেসিডেন্ট সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর বলেন, ট্রেড লাইসেন্স, পরিবেশ ছাড়পত্রসহ অন্যান্য ডকুমেন্টের পাশাপাশি পুরোনো কাস্টমস ও ভ্যাট নীতিগুলো নারীসহ এসএমই উদ্যোক্তাদের জন্য বড় বাধা। এছাড়া নারী উদ্যোক্তাদের বস হিসেবে মেনে নেওয়ার ক্ষেত্রে অনীহাও এক ধরণের বাধা হিসেবে কাজ করছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, নারীদের এগিয়ে আনতে তাদের জন্য কিছু বাড়তি সুবিধার দরকার হবে।
এসএমই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মো. মফিজুর রহমান বলেন, এসএমই উদ্যোক্তাদের এগিয়ে নিতে সরকারের তরফ থেকে শুরুতে অন্তত এক হাজার কোটি টাকার স্টার্ট আপ তহবিল দরকার, যার সুদ হবে সর্বোচ্চ ২ শতাংশ। এনআইডি, ট্রেড লাইসেন্স আর সার্টিফিকেটের ভিত্তিতে এই ঋণ দিতে হবে। তিন বছর মেয়াদী এই ঋণ যারা সঠিকভাবে ফেরত দেবে, তাদের মেয়াদ শেষে ওই সুদও তাদের ফেরত দেওয়া হবে – এ ধরনের ব্যবস্থা থাকা দরকার।
তিনি বলেন, মাত্রাতিরিক্ত ডমুমেন্ট না রেখে তিন-চারটা ডকুমেন্টের ভিত্তিতে ছোট উদ্যোক্তাদের ঋণের সুযোগ দেওয়া উচিত।
সরকারের দেওয়া ফান্ড থেকে ছোট উদ্যোক্তারা টাকা খুব একটা পায়নি বরং বড় উদ্যোক্তারাই তা নিয়ে গেলে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
গ্রীন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারজানা চৌধুরীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট চ্যাটারটন ডিকসন, আড়ংয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তামারা আবেদ এবং উইমেনস ইন্ডিয়ান চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রেসিডেন্ট ড. হারবীন অরো রাই।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সভাপতি জসিম উদ্দিন, সামিট গ্রুপের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আজিজ খান, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস এবং নির্বাহী লোকমান হোসেন মিয়া প্রমুখ। উদ্বোধনী অধিবেশনে বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া বিজনেস কাউন্সিলের (বিআইবিসি) সভাপতি মানতাশা আহমেদ বক্তব্য রাখেন।
দুই দিনব্যাপী এই শীর্ষ সম্মেলন বৃহস্পতিবার শেষ হবে।